দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৫: বাংলাদেশে বিদেশি হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার যোগসাজশের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারাই এই খুনে জড়িত তারা কোনো ছাড় পাবে না। তিনি বলেন, বিদেশি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। এই মহল যেই হোক না কেন শাস্তি তাদের অবশ্যই পেতে হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ ও ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের(আইটিইউ)আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় এ সংবর্ধনার আয়োজন করে এফবিসিসিআই।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যখনই বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চায়, বাংলার মানুষ যখনই মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়, তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে সময় আমাদের কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কৃত করছে, ঠিক তখনই দু’জন বিদেশিকে হত্যা করা হল।তিনি বলেন, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করার জন্য। আর এটা তারা নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে, কেন? এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা খুনিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবই। তাদের আমরা ছেড়ে দেব, এটা যেন কেউ না ভাবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯০ দিনের হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দেশে মানুষ হত্যার পর এখন বিদেশে গিয়ে মানুষ হত্যা করছেন।
বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে কারো কারো ভালো লাগে না, এমনই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিদেশে বসে তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন।ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেক পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আরও কোন কোন পণ্য নতুনভাবে বিদেশে রফতানি করতে পারি গবেষণা করে তা বের করুন। এর মধ্য দিয়ে শিল্প উৎপাদন অধিক বৃদ্ধি করতে হবে। এতে শিল্প যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রামের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে লাভবান কিন্তু ব্যবসায়ীরাই হবেন।
বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ক্ষেত্রে ভৌগলিক পরিবেশ বিবেচনা করে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। বাজেট আগের চেয়ে চার গুণ বৃদ্ধি করেছি আমরা। গ্রামীণ পর্যায়ে উন্নয়ন হচ্ছে এখন। আয় বৈষম্য কমে এসেছে। ৫৭ থেকে কমে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ দারিদ্র্যের হার এখন। বৈদেশিক রির্জাভ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।বেসরকারিখাত ব্যাপকভাবে উন্নত করে দিয়েছি আমরা। সব কিছুতেই বেসরকারিখাতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এতে বিস্তৃতিও বাড়ছে।আমি ব্যবসা বুঝি না, ব্যবসা করিও না। একটাই বুঝি দেশের মানুষের আয়-উন্নতি। প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগ হয়েছে আগামীতে ৭ ভাগ করবো আরও এগিয়ে যাবো’।
এ সময় দেশে আরও বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশ একটু ভালোভাবে এগিয়ে যায় তখনই অনেকের পছন্দ হয় না। আসলে দেশ এগিয়ে গেলে কারো কারো ভালো লাগে না। এতে ক্ষতি তো দেশেরই হয়। কী লাভ এমনটা করে, প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, খালেদা জিয়া টানা ৮২ দিন অবরোধ করেছেন। তা বাতিলও করেননি। এখন আর এর কার্যকারিতা নেই। দেশের মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াত ধ্বংস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী বিদেশে বসে এখন বিদেশিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। এতে দেশের মানুষের কষ্ট, দেশের ক্ষতি, কী লাভ এসব করে! বিদেশিদের খুন যেই করুক মাফ হবে না। বিদেশি হত্যা করে ভাবমূর্তি নষ্ট করবে তাদের ছেড়ে দেবো তা হতে পারে না। এছাড়া এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা খুনিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবোই। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সরকার ইতোমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নেবে। শন্তিপূর্ণ ব্যবস্থা বিরাজমান রাখতে চাই দেশে। দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে চাই।
নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, একটা মানুষও দেশে গৃহহারা থাকবেন না। একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। এদেশ ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত হবে, এটাই আমার লক্ষ্য।আমার নেওয়ার কিছু নেই, আমি সব হারিয়েই এসেছি বাংলায়। শুধু মাত্র বাংলার মানুষকে এগিয়ে নিতে, কিছু দিতে। কেবল একটা কথাই মনে রাখবেন- বাংলাদেশ নিম্ন থাকবে না, উচ্চ হবে’।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। অনুষ্ঠানে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন অভিনেত্রী শমী কায়সার।আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের সদস্য, ব্যবসায়ী নেতাসহ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।