দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৫: স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয়ভাবে হবে।এতে মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সংশোধন আইন একযোগে অনুমোদন করা হয়। এসব আইন হচ্ছে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধন আইন-২০১৫, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৫, জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৫, স্থানীয় সরকার ( পৌরসভা) সংশোধন আইন ২০১৫ ও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধন আইন, ২০১৫।এখন স্থানীয় সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর।মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কোনো কারণে নির্বাচন না হলে আগের জনপ্রতিনিধিরাই ক্ষমতায় থাকেন। কিন্তু সংশোধিত আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নির্বাচন না হলেও জনপ্রতিনিধি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তাঁর পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। আগে শুধু সিটি করপোরেশন আইনে প্রশাসক নিয়োগের বিধান ছিল।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে হয়। আমাদের দেশেও এ বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি জানান, পৌরসভা নির্বাচন আগামী মাসে হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) সংশোধন আইন এখন অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। পরে সংসদ অধিবেশনে এটি আইন আকারে পাস হবে। স্থানীয় সরকারের বাকি চারটি সংশোধনীও সংসদে আইন আকারে পাস হবে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন সব ক্ষেত্রে।ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন ( পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ ভেটিংয়ের পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।আর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)(সংশোধন) আইন ২০১৫, উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৫,জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৫ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন ২০১৫ ভেটিংয়ের পর পাসের জন্য সংসদে যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।এই পাঁচটি আইনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পরিচালিত হয়। এই সংশোধন ছোট হলেও রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এর প্রভাব অনেক বেশি।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে কথার নিয়ম চলে এলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ২০০৮ সালে চার সিটি করপোরেশনে নির্বাচন একসঙ্গে করার অভিজ্ঞতার পর তখনকার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেবল আইনের পাতাতেই আছে। প্রকারান্তরে দলীয় নির্বাচনই তো হচ্ছে। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে যে কোনো সমস্যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো দায়ী থাকে। কাজেও অনেক সুবিধা হয়।
চলতি বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সব স্তরের নির্বাচন দলীয়ভাবে করার পক্ষে মত দেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত গণতন্ত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় মনোনয়নে হয়। যেমন ব্রিটেন। ভারতেও স্থানীয় নির্বাচন দলীয় মনোনয়নে হয়।তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন বাদে অন্যান্য আইনে যে বিধান রয়েছে তাতে পাঁচ বছর মেয়াদের পর কোনো কারণে নির্বাচন না হলে আগে যারা ছিলেন তারাই দায়িত্ব চালিয়ে যেতেন। আইন সংশোধনের পর তা আর সম্ভব হবে না।মেয়াদ শেষ হলে সরকার যথাসময়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। যদি কোনো জটিলতায় নির্বাচন না করতে পারে, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। এটা বর্তমানে সিটি করপোরেশনে আছে।
আগে এটা কেবল সিটি করপোরেশন আইনে ছিলৃ এখন এই বিধান প্রতিটি আইনে যুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসকরা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত থাকবেন। এর মধ্যে সরকার চাইলে তাদের পরিবর্তন করে দিতে পারবে।জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ সমর্থক ভোটারের তালিকা দিতে হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অধ্যাদেশ বা সংসদে আইন পাস হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বিধিমালা সংশোধনের সময় বিষয়টি ঠিক করবে।আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীরা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য আলাদা প্রতীক থাকবে। এদিকে, সড়ক ও জনপথের অব্যহৃত ভূমি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য লিজ নিতে পারবেন জনগণ।
আর অধিদফতরের জমিতে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পানি-বিদ্যুতের লাইনসহ অন্য কাজেও লিজ দেওয়া হবে। এছাড়া অনুমতি মিলবে বিলবোর্ড ও ভাস্কর্য স্থাপন করারও।অধিদফতরের ভূমি উন্নয়নমূলক এসব কাজে ব্যবহারের সুযোগ রেখে সড়ক ও জনপথের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিব জানান, এ ধরনের অনুমতি বিদ্যমান মহাসড়কের সড়ক সম্প্রসারণে প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে শেষ সীমানা বরাবর লিজ দেওয়া যাবে। তবে নীতিমালায় বলা হয়েছে, লিজ দেওয়া ভূমির স্থাপনা ৪৫ দিনের নোটিশে নিজ খরচে সরিয়ে নিতে বাধ্য থাকবেন লিজ গ্রহীতা। মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, জনগণের প্রয়োজনে রাস্তার পাশে যাত্রী বসার স্থান করার অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া প্রেটোল পাম্পে যাতায়াতের রাস্তার জন্য লিজ দেওয়া যাবে।