দৈনিকবার্তা-সিলেট, ১২ অক্টোবর ২০১৫: আলোচিত হত্যাকাণ্ড সামিউল আলম রাজনের হত্যাকাণ্ড নতুন মোড় নিয়েছে। হত্যা মামলার ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। মামলার অন্যতম আসামি ময়দা চৌকিদার শিশু রাজনকে ধর্ষণ করতে না পেরে তাকে চোর সাজিয়েছেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন গিয়াস মেম্বার। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা। এ সময় সাক্ষি গিয়াস মেম্বার আদালতে বলেন- আসামি ময়দা চৌকিদার একজন শিশু ধর্ষণকারী। তিনি রাজনকে বলাৎকারের প্রস্তাব দেয়। রাজন তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ময়না চৌকিদার চোর চোর বলে চিৎকার দিলে তাকে চোর সন্দেহে পেটানো হয়। কে বা কারা তাকে পিটিয়েছেন তা আমি দেখিনি।’ তবে গিয়াস মেম্বার আদলতে আসামিদের নাম বলতে টালবাহানা করলে রাষ্ট্রপক্ষ তাকে বৈরী সাক্ষি হিসেবে ঘোষণা করেছে।এ তথ্য জানিয়েছেন- রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী শওকত চৌধুরী।
শওকত চৌধুরী জানান, আজকের ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজন হত্যা মামলায় মোট ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, ১৩ ও ১৪ অক্টোবর এ মামলায় টানা সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত।আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকারীরা হচ্ছেন- শেখপাড়ার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মেম্বার, কুমারগাঁওয়ের বাসিন্দা কুরবান আলী, আব্দুল করিম ও আফতাব মিয়া। এর আগে গতকাল ওই মামলায় সাক্ষি প্রদান করেছিলেন- পশ্চিম জাঙ্গাইলের বাসিন্দা মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে আনোয়ারুল হক, কুমারগাঁয়ের বাসিন্দা জাকিরের ছেলে বেলাল আহমদ ও দকির গ্রামের বাসিন্দা ইসকন্দর আলীর ছেলে আবদুল হান্নান।গত ৮ অক্টোবর সিলেট নগরীর কুমারগাঁয়ের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান, বাবুল মিয়া, কাচা মিয়া ও পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা কাঁচা মিয়া ওরফে কচি আদালতে সাক্ষ্য দেন। ৭ অক্টোবর রাজনের গ্রাম বাদেআলির ইশতিয়াক আহমদ রায়হান, নিজাম উদ্দিন, পার্শ্ববর্তী গ্রাম অনন্তপুরের আবদুজ জাহির মেম্বার, শেখপাড়ার পংকি মিয়া সাক্ষ্য প্রদান করেন।
গত ৪ অক্টোবর আলোচিত এই হত্যা মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করেন রাজনের মা লুবনা বেগম, জিয়াউল হক, আল আমিন ও মাসুক মিয়া। তবে মাসুক মিয়া আসামিপক্ষে কথা বলা শুরু করলে বাদিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে বৈরী ঘোষণা করতে আদালতে আবেদন জানান। এর আগে গত ১ অক্টোবর রাজনের বাবা আজিজুর রহমান ও মামলার বাদি জালালাবাদ থানার এসআই (বরখাস্তকৃত) আমিনুল ইসলাম আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তারও আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযুক্তরা হচ্ছেন সৌদিতে আটককৃত সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও শেখপাড়ার মৃত আবদুল মালিকের ছেলে কামরুল ইসলাম, পলাতক থাকা তার ভাই শামীম আহমদ, পলাতক থাকা দিরাইয়ের বাসিন্দা পাভেল, কামরুলের ভাই গ্রেফতারকৃত মুহিদ আলম, আলী হায়দার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, দুলাল আহমদ, নগরীর জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।হত্যার পর লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগে আদালতের বিচারক মুহিদ আলম, ময়না চৌকিদার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ এনেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে সৌদিতে আটককৃত কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ এবং আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট আমলে নেন। পরদিন, ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ। গত ৩১ আগস্ট রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পলাতক কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।