দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৫: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের আগাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি ডিভিশন বেঞ্চ আগাম জামিন আবেদন বিষয়ে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়। সোমবার বেলা ১১টার দিকে জামিন আবেদন উপস্থাপনের পর দুপুর ১টার মধ্যে সংসদ সদস্য লিটনকে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতের নির্দেশে লিটন উপস্থিত হন।
শিশু সৌরভের দুই পায়ে গুলি করার ঘটনায় আনা মামলায় লিটন রোবাবর আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন দাখিল করেন। সংসদ সদস্য আসামি লিটনের উপস্থিতিতে আদালতে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। লিটনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোখছেদুল ইসলাম। রাস্ট্রপক্ষে জামিন আবেদন বিরোধীতা করে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এমপি লিটনকে আত্মসর্মপণের নির্দেশ স্থগিত চাইবেন রাষ্ট্রপক্ষগাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হাইকোর্টের দেওয়া আত্মসমর্পণের নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানাবেন রাষ্ট্রপক্ষ। যেন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে, সেজন্য আপিল বিভাগে এ আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদেশের পর নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। হাইকোর্টের ১৮ অক্টোবরের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্ট এমপি লিটনের জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন। এরপর তিনি আত্মসমর্পণের সুযোগ চাওয়ায় তাকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। এআদেশের ফলে তাকে গ্রেফতার করা যাবে কি-না, সে বিষয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে পুলিশ। তাই আগামীকাল (মঙ্গলবার) চেম্বার বিচারপতির আদালতে এ নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন জানাবো, যেন তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা যায়।
এ বিষয়ে আপিল বিভাগের আদেশ রয়েছে যে, জামিন না দিলে আসামিকে পুলিশ কাস্টডিতে পাঠাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এর আগে শুনানিতেও জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি এ কাজ কিভাবে করেন? এমনকি এমপি অপরাধের বিরোধিতা করে কোনো বিবৃতিও দেননি। এছাড়া আপিল বিভাগের নির্দেশনা মতে তাকে আগাম জামিন দেওয়া যায় না। তাই তাকে এখন পুলিশ হেফাজতে তুলে দেওয়া উচিত। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।
গত ২ অক্টোবর ভোরে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্ধ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকায় সংসদ সদস্য লিটনের ছোড়া গুলিতে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন সৌরভ (৮)। ওই শিশু এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার পরদিন আহত শিশু সৌরভের বাবা সংসদ সদস্য লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন প্রার্থনা করে আবেদনটি দাখিল করা হয়।শিশুকে গুলির ঘটনার পর সংসদ সদস্য লিটনের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা দেয়া হয়। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সংসদ সদস্য লিটনের অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিল করেন।
আদেশে বলা হয়, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে এবং মামলার এজাহার পর্যালোচনায় আগাম জামিনের কোনও উপাদান পাওয়া যায়নি’। তাই আবেদন খারিজ করা হল।আগের দিন আইনজীবী এস এম আরিফুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিটনের পক্ষে আগাম জামিনের এই আবেদন জমা দেন। ে ােমবার সকালে ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম ওই আবেদন বেঞ্চে উপস্থাপন করলে আদালত বেলা ১টায় আবেদনকারীকে শুনানিতে হাজির করতে বলে। সে অনুযায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আদালতে এলে সোয়া ১টায় শুনানি শুরু হয়।
লিটনের পক্ষে মোকছেদুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুববে আলম শুনানিতে অংশ নেন।আহত শিশুর বাবা সাজু মিয়া ঘটনার পরদিন সাংসদ লিটনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন হাফিজার রহমান নামে সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামের এক বাসিন্দা।এদিকে গুলির ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান সাংসদ লিটন। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচিও পালিত হয়।এই সংসদ সদস্য এর আগেও নানা অপকর্ম করেছেন বলে তার দলের নেতাদের অভিযোগ। স্থানীয়রা তার সাংসদ পদ বাতিলেরও দাবি তুলেছেন।