দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৫: শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু৷ এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে৷ মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার৷ এ দিনেই হয় দেবীর চক্ষুদান৷দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে চড়ে আগমন করবেন আর প্রস্থান করবেন দোলায় চড়ে৷সোমবার মহালয়া সম্পন্নের মাধ্যমে মতর্্যলোকে পা রেখেছেন দেবী দুর্গা৷ মহালয়া উপলক্ষে সনাতনী ধমাবলম্বীদের ভিড় ছিলো ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ ও শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দিরে৷
ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপের (ঢাকেশ্বরী মন্দির) প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে৷ ১০৮টি আহুতি দিয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি এবং ভক্তদের উদ্যোগে দুর্গোত্সব শুরু হলো৷তিনি বলেন, প্রার্থনা করি, মঙ্গলময়ী মা আমাদের সবাইকে কৃপা করবেন৷ আজ মহাপূর্ণ তিথিতে মাকে ষোড়শ উপাচারে পূজা দিয়ে মায়ের আগমনী বার্তা, দেবীর পক্ষকে আহ্বান করা হয়েছে৷ মা আসছেন আমাদের মধ্যে৷
প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী আরও বলেন, এ বছর মা আসবেন ঘোটকে চড়ে এবং যাবেন দোলায় চড়ে৷ মা দুর্গা যেন আমাদের পূজা অর্চনা গ্রহণ করে সবার ওপর মঙ্গল করেন সেই প্রার্থনা করি৷আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হবে৷মূলত,সোমবার থেকেই দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শুনতে পান পূজার্থীরা৷দুর্গাপূজার এ সূচনার দিনটি সারাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে৷
শরত্কালে দুর্গাপূজার আয়োজন হয় বলে এই পূজাকে শারদীয় দুর্গোত্সবও বলা হয়৷ শ্রীরামচন্দ্র শরত্কালে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে অকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন৷ তাই এ পূজাকে অকালবোধনও বলা হয়৷শুভ মহালয়া উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি’র আয়োজনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ভোর ৬ টায় মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান হয়েছে৷ এরপর সকাল ৯টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়৷শারদীয় দুর্গোত্সব উপলক্ষে তিনদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ৷
একই সাথে শারদীয় দুর্গোত্সবে ঈদের মতো বঙ্গভবন, গণভবন, নগরভবন এবং জেলা পর্যায়ে সরকারি ভবনসমূহে আলোকসজ্জা, কারাগারে উন্নত খাবার পরিবেশন, ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাতিল করে ইসলামি ফাউন্ডেশনের অনুরূপ হিন্দু ফাউন্ডেশন এবং পুজোমন্ডপে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যত্ সরবরাহ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার দাবী জানানো হয়েছে৷
সোমবার ঢাকেশ্বরী মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই আহবান জানান৷ শারদীয় দুর্গোত্সবের প্রস্তুতি জানানোর লক্ষ্যে এই মতিবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ৷পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, স্বপন কুমার সাহা, শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, সাবিত্রী ভট্টাচাযর্্য, জে. এল. ভৌমিক, নারায়ণ সাহা মনি, মিলন কানত্মি দত্ত, নির্মল চ্যাটাজর্ী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন৷ সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়নত্ম কুমার দেব৷
মতবিনিময় অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুগের্াত্সবের ছুটি শুক্রবার ২৩ অক্টোবরের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার ২২ অক্টোবর ঘোষনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়৷সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশে শারদীয় দুগর্া পূজামন্ডপের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৩৮৭ টি৷ এ বছর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭৪৷সভায় জানানো হয়, পুজোকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও ১৪ দলীয় জোটের সাথে মতবিনিময় হয়েছে৷ প্রতিটি সভায় সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং সর্বাত্মক নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ তাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং এমপিরা পুজোর সময় যার যার এলাকায় থাকবেন৷