দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক পথ শিশুর খাদ্য, আশ্রয় এবং শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন৷তিনি বলেন, কোন শিশু রাসত্মায় জীবনযাপন করবে না৷ আমরা ১৬ কোটি লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি৷তাই, প্রায় ৩৪ লাখ পথ শিশুকে খাওয়ানোর সক্ষমতা সরকারের রয়েছে৷ রোববার বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১৫, উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন৷ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন৷
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিসেফ’র আবাসিক প্রতিনিধি এডোয়ার্ড বেইগবিডার৷বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, এমওডবিস্নউসিএ সচিব ড. নাসিমা বেগম, বর্তমানে শিশু কল্যাণ প্রকল্পে আশ্রয় প্রাপ্ত সুবিধা বঞ্চিত দুই শিশু এম হাশেম ও সানজিদা আফরোজ স্মৃতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷’শিশু গড়বে দেশ, যদি পায় পরিবেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশে আজ এ দিবস পালিত হচ্ছে৷প্রতিটি শিশুকে তাদের এলাকার স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যে এলাকায় বসবাস করে সেখানকার স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার৷ এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষা যেন শিশুর জন্য বোঝা না হয় বরং স্কুলগুলোতে ও পরিবারে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে তারা নিজেরা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হবে এবং পড়াশোনায় উত্সাহ বোধ করবে৷ শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, গৃহকমর্ী নির্যাতন এবং কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু নিয়োগ সরকার কোনভাবেই মেনে নিবে না৷ তিনি বলেন, সরকার কোন ধরনের শিশু নিপীড়ন বরদাসত্ম করবে না৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সরকারের দায়িত্ব৷কারণ, তারা আগামীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশকে নেতৃত্ব দেবে৷ পাশাপাশি প্রত্যেক শিশুকে দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে৷তিনি বলেন, দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস না জানলে, আগামী প্রজন্ম জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে অনুপ্রাণিত হবে না৷শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ বিষয়টি দেশের সংবিধান, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ও শিশু আইন-১৯৭৪-এ সনি্নবেশিত রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে শিশু অধিকার আইন প্রণয়ন করেছেন৷ ১৯৭৪ সালের শিশু নীতির আলোকে শিশু নীতি-২০১১ প্রণীত হয়েছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেক শিশুর খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি এবং মায়েদের পুষ্টির উপর বিশেষ নজর দিয়েছে৷ এর ফলশ্রম্নতিতে শিশু ও মাতৃ মৃতু্য হার কমছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবজাত শিশুরা যাতে বেশি দিন মায়ের যত্ন পেতে পারে এলক্ষ্যে কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা হয়েছে৷ তিনি সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরের প্রত্যেক অফিসে ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷শিশুদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সকল শিশুর খেলাধূলা ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে৷ এ লৰ্যে তিনি প্রত্যেক ফ্লাট ও আবাসিক এলাকায় খেলাধূলার জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার আহ্বান জানান৷
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসুস্থ শিশুদের চিকিত্সা ও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তাঁর সরকারের রয়েছে৷শেখ হাসিনা চলতি বছরের (২০১৫) জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যনত্ম রাজনীতির নামে দেশের মানুষ এবং নির্দিষ্টভাবে শিশুদের উপর কিছু রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি রোধে সজাগ থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷ সমপ্রতি দেশে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান৷
তিনি বলেন, অনেকে শিশুদের বাড়িতে নিয়ে আসে কাজ করতে৷ তাদের লেখাপড়ার অধিকার আছে৷ ওই শিশুটা ফ্রিজ থেকে একটা মিষ্টি খেলে এভাবে মারে.. এটা মেনে নেওয়া যায় না৷শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় সমপ্রতি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তার স্ত্রীকে কারাগারে যেতে হয়েছে৷প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সহপাঠীদের সংবেদশীল হওয়ার অনুরোধও জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জন্ম থেকে কেউ কানা হয়, খোঁড়া হয়, চিন্তা শক্তির সমস্যা থাকে৷ এটা তাদের অপরাধ না৷মিলনায়তনে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের টিজ করবে না- এটা অপরাধ৷ তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে৷প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ কাউন্সিলিং করানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাতে করে একসময় তারা অন্য শিশুদের সঙ্গে মিলে যেতে পারবে৷স্কুলে ভর্তির পদ্ধতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের নিজ নিজ এলাকার স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে বলেন৷তারা যদি লেখাপড়া শিখে ছাপানো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে তাহলে আর স্কুল কি শিখাবে? প্রাক প্রাইমারি বা প্রাইমারি তাদের কি শিখাবে?, বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, শিশুরা যে এলাকায় বসবাস করে, সে এলাকার স্কুলে ভর্তি হওয়া তাদের অধিকার৷ সরাসরি তাদের আগে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে৷শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷ আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটা যেন সমন্বয় করা হয়, তারা যেন লক্ষ্য রাখে কাজগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা৷শিশুদের ওপর বইয়ের বোঝা না চাপানোর তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি সব স্কুলে খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা৷মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ও বিজয়ের ইতিহাস প্রতিটি শিশুকে এখন থেকেই জানতে হবে৷ না হলে তারা জীবনযুদ্ধে জয়ের অনুপ্রেরণা পাবে না৷এছাড়া সারা দেশে স্কুলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্কুল ছুটির পর শিশুদের রাস্তা পারাপারে জন্য ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশদেন প্রধানমন্ত্রী৷