দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ অক্টোবর ২০১৫: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষকরা হলেন সমাজ ও দেশের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।বর্তমান সরকার শিক্ষকদের বিষয়ে সবসময়ই আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্যই বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।তিনি আরো বলেন, শিগগিরই এ কমিটি বৈঠকে বসবে। তখন এ সমস্যা সমাধার হয়ে যাবে। তাই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তিনি শিক্ষকদের আন্দোলনে না গিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।শুক্রবার আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় মিলনায়তনে চতুর্থ জাতীয় শিক্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
পেশাগত উৎকর্ষ সাধন’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ লিটারেসি এসোসিয়েশন শিক্ষকদের দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।সম্মেলনটি আয়োজনে এসোসিয়েশনকে সহযোগিতা করছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান ও আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকরের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম এম সফিউল্লাহ।অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরাই হলেন শিক্ষার নিয়ামক শক্তি। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নীতি-নৈতিকতায় নতুন প্রজন্মকে আধুনিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার তারাই মূল কারিগর। তাই এই শিক্ষকরা কারো সমান হলেন বা না হলেন, তা কোন বিবেচিত বিষয় নয়।অফিসারদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা না করার আহবান জানিয়ে তিনি শিক্ষকদের বলেন, আপনারাই তাদের (অফিসার) তৈরি করেছেন। তাই আপনারাই সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি।শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শুধু বেতন ও সম্মানের কথা ভাবলেই হবে না, নিজেদের জীবনাচরণ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা আপনাকে শ্রদ্ধা করে ও আপনার মতো হতে উদ্বুদ্ধ হয়।তিনি বলেন, শিক্ষকরা এ জিনিসটি অর্জন করতে পারলে তারাই হবেন দেশের এক নম্বর সম্মানিত ব্যক্তি। এতে কারো দ্বিমত নেই।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা সবচেয়ে বেশি হবে বলেও তিনি সম্মেলনে আশাবাদ প্রকাশ করেন।বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এখন সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে। এতে শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।তিনি বলেন, এখন সচেতন অনেক পিতা-মাতাই জমি বিক্রি করে হলেও সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। শিক্ষা যে অমূল্য সম্পদ, অভিভাবকদের মাঝে এ সচেতনতা নিয়ে আসার সাফল্য কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারেরই প্রাপ্য।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেখা যায় শতকরা ৯ জন শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না। যারা তখন যাচ্ছিল তাদেরও শতকরা ৪৮ জন প্রাথমিকে এবং ৪২ জন নবম শ্রেণীর আগেই ঝরে পড়তো।তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তাদের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সব শিশুকে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে পাঠানোর ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই প্রদান শুরু করে। এতে স্কুলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি ও ঝরে পরার হার কমতে থাকে।মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি শিশু স্কুলে যাচ্ছে। তাদের সবাইকে এখনও ধরে রাখতে না পারলেও ৯৭ ভাগকে আমরা ধরে রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
শিগগিরই এটা শতভাগে উন্নীত হবে বলেও তিনি জানান।তিনি আরো বলেন, মাধ্যমিক স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে তাদের সরকার সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও মেয়েরা এগিয়েও আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২/৩ বছরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকেও এ সমতা ফিরে আসবে। উচ্চ শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে তাদের সরকার ডিগ্রী লেভেলে বৃত্তি চালু করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।নাহিদ বলেন, নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের কর্মস্থানের ব্যবস্থাও সরকার করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ ভাগ, শহরের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০ ভাগ ও গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ নারী শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।অনুষ্ঠানে ‘একুশ শতকের শিক্ষক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ।সম্মেলনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম এহছানুর রহমান। স্বাগত বক্তৃতা দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যপক নুরুল ইসলাম।