hr36

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ অক্টোবর ২০১৫: বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নৈরাজ্য চলছে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শাক সবজি সব নিত্য পণ্যেও দাম। ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়েছে এক শ্রেণী বাজার সিন্ডিকেটের কাছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আমরা পাইকারি বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য বেচাকেনা করি। পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকে সেক্ষেত্রে তো কম দামে বিক্রি করার উপায় নেই আমাদের।

দুই তিন দিন আগেও প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকায়। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকায়। শুধু আলু নয় এর সঙ্গে বেগুনের দামও এক দফা বেড়েছে। কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম যেন কোনো ভাবেই কমছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই জানা গেছে। রাজধানীর বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় শাক সবজির দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা বাজার, মালিবাগ বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে শাক-সবজির দাম বাড়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে।তবে, মালিবাগ ও মুগদা বাজারে সবজি কেজি প্রতি একই দামে বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচের কেজি ২৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৬০- ১৮০ টাকায়। পটল কেজিতে গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা বেশি হয়ে ৬০ টাকায়। কাঁচা পেঁপে ৫ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায়। লাউ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ৫০ টাকায়, যা এসপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শশা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায়। বেগুনের দাম অপরিবর্তিত ৮০ টাকা। বরবটি ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়। ছোট বাঁধাকপি ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায়। করলা ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা। টমেটো অপরিবর্তিত ১০০ টাকা দামে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম কেন বেড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক বিক্রেতা বলেন, ঈদের সময় লোকজন শাক-সবজি কম খায়। তাই দাম একটু কম ছিল। তবে এখন সবজির চাহিদা বেড়েছে বিধায় দাম একটু বেশি।সবজির পাশাপাশি শাকের দামও বেড়েছে। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লাল শাক ও সবুজ শাকের আঁটি ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে পালং শাক ৩০ টাকা ও পুঁইশাক ২০ থেকে ২৫ টাকা। শীতের সবজি তেমন ভাবে এখনো বাজারে আসেনি, এলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানান মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা মালেক। তবে, কারওয়ান বাজারে গত সপ্তাহ থেকেই ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে শাক-সবজির।দাম বাড়ার কারণ কী? জবাবে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মামুন বলেন, মানুষ আর কত মাংস খাবে, এখন সবাই সবজি খাচ্ছে। তাই চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে থেকে এখনও শীতের সবজির সরবরাহ বাড়েনি বিধায় বাড়তি দাম।এদিকে, সব বাজারেই ফার্মের ও দেশি মুরগির দাম কমেছে।

মালিবাগ ও মুগদা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিতে যা গত সপ্তাহে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লালা লেয়ার মুরগি গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির হালি অপরিবর্তিত বিক্রি হচ্ছে ১২’শ থেকে ১৩’শ টাকায়। তবে, ফার্মের মুরগির দাম কারওয়ান বাজারে ১০ টাকা বেড়েছে কেজি প্রতি। গত সপ্তাহে ব্রয়লার ১১০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লালা লেয়ারের দাম অপরিবর্তিত ১৫০ টাকা কেজি।অন্য বাজারে যখন দাম কমছে তখন কেন এ বাজারে দাম বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন আলী বলেন, ফার্মের মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে।এছাড়া চালান কমে যাওয়ায় দাম একটু বাড়ানো হয়েছে।’

তবে কারওয়ান বাজারে দেশি মুরগির দাম কমেছে। দেশি মুরগির কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। তবে দেশি মুরগির হালি অপরিবর্তিত ১২’শ থেকে ১৩’শ টাকা। এদিকে, ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে সব বাজারগুলোতে। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ৯০ টাকা, হালি ৩০ টাকা। দেশি মুরগির ডজন আকারভেদে ১৩৬ থেকে ১৪০ টাকা, হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ১১৪ থেকে ১২০ টাকা, হালি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, স্বামীবাগ, কাপ্তানবাজার, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায় (গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায়), মরিচ ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়, টমেটো ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়, গাজর ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়, শশা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় (গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়), করলা ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, ঝিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, সাদা গোলাকার বেগুন ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায় (গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা), পটল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, কাকরল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ঢেড়স ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ওস্তা ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, চিচিঙা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, জলপাই ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, দোন্দল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, বটবটি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়, কচুর ছড়ি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়, লতি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।সেগুনবাগিচা বাজারের কাঁচাপণ্যের ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল জানান, গত এক সপ্তাহ যাবত পাইকারি বাজার থেকে এক পাল্লা (প্রতি ৫ কেজি) কাচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় । আমরা তো সামান্য লাভ করেই সেই পণ্যটি বিক্রি করতে হবে। আমরা মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করছি ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া বেগুনের দাম কয়েকদিন আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাজারে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম বাড়তি থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসলে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ কোনো সরকারই করতে পারছে না। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। আমরা সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। তাই পণ্যের দাম দোকানগুলোতে যা ধরা হয় তাই দিয়ে তা কিনতে হচ্ছে।যাত্রাবাড়ী বাজারে আবুল কালাম শিকদার নামে একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেশি দামে নিত্যপণ্য কিনতে সমস্যা হবে না। কিন্তু আমরা যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তাদের তো কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। আসলে আমরা সাধারণ মানুষ সব সময়ই বিপাকে পড়ি।এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, এখন বাজার একটু চড়া থাকলেও শীতকালীন শাকসব্জি বাজারে উঠতে শুরু করলে কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম অনেকটা কমবে।বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা থেকে ৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি রসুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আদা ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।শ্যামবাজার পাইকারী কাচাবাজার ব্যবসায়ীদের নেতা ইসমাইল হাওলাদার বলেন, কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম সব সময়ই ওঠানামা করে। যখন আমদানি বেশি হয় তখন দাম কমে। আবার যখন আমদানি কমে তখন দাম বাড়ে। তবে বর্তমানে পণ্যের দাম একটু চড়া। শীতকালীন কাঁচামাল বাজারে ওঠার পর পণ্যের দাম অনেকটা কমবে বলে জানান তিনি।