দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮অক্টোবর ২০১৫: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শতকরা ৯০ ভাগ মামলা আদালতের বাইরে বিকল্প পন্থায় নিস্পত্তির লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, এমন অনেক মামলা আছে, যার ৯০ শতাংশ আদালত পর্যনত্ম আসা উচিত নয়, আদালতের বাইরে বিকল্প পস্থায় এসব মামলার নিস্পত্তি হতে পারে৷ মন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে ‘বিচার পাওয়ার সুযোগ : মহল্লা কেন্দ্রিক সালিশ-মধ্যসত্মতার ভূমিকা’ শীর্ষক কমিউনিটি লিগ্যাল সার্ভিস (সিএলএস)-এর দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন৷ আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সুবিধা বঞ্চিতদের আইনী সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ৷ একইসাথে স্থানীয় পর্যায়ে মহল্লা কেন্দ্রিক সালিশ-মধ্যসত্মতাসহ বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির (এডিআর) ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বলেন, সমাজের সকল সত্মরের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া সরকারের একার পক্ষে সকলের জন্য আইনী সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়৷
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার প্রাপ্তি এবং আইনী সহায়তা দানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করে আনিসুল হক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের (এনজিও) মধ্যে বৃহত্তর সিএলএস টিম লিডার জেরোমি সাইরি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্নসচিব মোসত্মাফিজুর রহমান৷ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনআরএইচসি) সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, লিগ্যাল এইড সার্ভিস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনের (এনএলএএসও) সহকারী পরিচালক মাসুদা ইয়াসমিন, ইউএনডিপির অর্থায়নপুষ্ট একটিভেটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ (এভিসিবি) প্রকল্পের ব্যবস’াপক সরদার এম আসাদুজ্জামান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, মাদারিপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক খান মো. শহীদ, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী এ সময় বক্তৃতা করেন৷ কর্মশালায় দেশের ১৭টি জেলার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও কর্মকর্তারা অংশগ্রহণকরেন৷
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যনত্ম ৫ লাখ ৭ হাজার ২৭৫ জন নারী, ৫ লাখ ২ হাজার ৩৫৪ জন পুরম্নষ ও ৩২৫ জন শিশুসহ ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৫৪ জনকে সরকারি আইনগত সহাযতা প্রদান করা হয়েছে৷ একই সময়ে সরকারি আইনগত সহায়তার মাধ্যমে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৭১টি দেওয়ানী ও ২ লাখ ৬ হাজার ৬১৫টি ফৌজদারীসহ ৩ লাখ ৮ হাজার ৮৭৪টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে৷ এছাড়াও শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ১০ হাজার ৭০১ জন নারী ও পুরুষ আইনি পরামর্শ বা সেবা গ্রহণ করেছেন৷ একই সাথে এডিআর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ভরন পোষণ বা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালে সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার ১৭ জনলিগ্যাল এইড অফিসার মাত্র তিন মাসে ২২৭টি এডিআর -এর উদ্যোগ নেয়, ৮৬ টি বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৪শ’ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় হয়৷জার্মান উন্নয়ন সংস্থা, জিআইজেড পরিচালিত ২০১২ জাস্টিস অডিট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী,বাংলাদেশের মোট মামলার মাত্র ২০ শতাংশ আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়৷ যেখানে আদালতের বাইরে বিকল্প পন্থায় মামলা নিস্পত্তির হার ৮০ শতাংশ৷ আর দেশের অধিকাংশ মানুষ বিকল্প পন্থায় মামলা নিস্পত্তিতে বেশি আগ্রহী৷২০১৩ সালে সিএলএস পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ৯২ শতাংশ পরিবার মহল্লা কেন্দ্রিক মধ্যসত্মতা কিংবা সালিশের ব্যাপারে সচেতন এবং ৭২ শতাংশ পরিবার আদালতের বাইরে বিকল্প পস্থাকেই মামলা নিস্পত্তির হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়৷