image_224028.mirza-fokrul

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮অক্টোবর ২০১৫: জঙ্গি ও উগ্রবাদ রুখতে জাতীয় ঐক্য চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমপ্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কিছু বিষয় নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন৷ বিশেষ করে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ মির্জা ফখরুল বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে সারা দেশে কথা হচ্ছে৷ সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের এ নিয়ে অপরাজনীতি হচ্ছে৷ এ কারণে দেশে জঙ্গি ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য হচ্ছে না৷ মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রহীন অবস্থা চলতে থাকলে উগ্র ও জঙ্গিবাদীরা সুযোগ নেবে৷ জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদীরা যেন মাথাচাড়া নিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য গণতন্ত্র থাকতে হবে৷ জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ রুখতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি৷ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা তদন্তে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊধের্্ব উঠে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব৷ তিনি এই ঘটনায় বিএনপি নেতাদের হয়রানি না করারও আহ্বান জানান৷রাজনীতিবিদরা কাদা ছোড়া-ছুড়ি বন্ধ না করলে বাংলাদেশে উগ্রপন্থিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দেশ রক্ষায় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিষয়টি নিয়ে অপরাজনীতি করা হচ্ছে৷ ফলে জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠছে না৷ আমরা মনে করি রাজনীতিবিদরা কাদা ছোড়া-ছুড়ি বন্ধ না করলে উগ্রপন্থিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে৷

ফখরুল বলেন, এর আগেও দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল৷ সে সময় সবার সহযোগিতায় আমরা দেশ থেকে সফলভাবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছিলাম৷ পরিতাপের বিষয় আজকের সরকার সেটি করতে চাচ্ছে না৷ দায় চাপাচ্ছে প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের ওপর৷ সরকারের একটি অংশের সঙ্গে আরেকটি অংশের কথার মিল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি অংশ বলছে, দেশে আইএসের মতো ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে৷ আরেকটি অংশ বলছে নেই৷ সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, দেশে গণতন্ত্রই নেই৷ গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে- বলেন ফখরুল৷ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাহসের সঙ্গে অতীতে সব সমস্যার সমাধান করেছে, ভবিষ্যতেও করবে৷ সরকার যদি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তাহলে তারা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে৷ সরকার যেহেতু চালকের অবস্থায় রয়েছে, সেহেতু জাতীয় ঐক্য গঠনে তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গত নির্বাচন দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে কেউ গ্রহণ করেনি৷ আমরা বারবার বলছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আলোচনা প্রয়োজন৷ আলোচনা মাধ্যমে গণতন্ত্র বিকশিত হয়৷ এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ শুধু মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা নয়, সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আসছে৷ দুর্নীতি ও লুটপাট সব ব্যবস্থাপনাকে শেষ করে দিয়েছে৷

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে অপরাজনীতি করা হচ্ছে৷ এই অপরাজনীতির ফলে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হচ্ছে না৷ এ ব্যাপারে কোনও প্রচেষ্টাও নেওয়া হচ্ছে না৷ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, আজকে বড় প্রয়োজন হচ্ছে- সমস্ত পক্ষগুলোকে নিয়ে, সব রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিকদের নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার৷ এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে৷বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন অংশের বক্তব্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, কেউ ঘটনার জন্য আইএসকে দায়ী করছেন৷ কেউ দায়ী করছেন অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসকে৷আমরা আশঙ্কা করছি, এ ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্রহীনতার সুযোগ উগ্রপন্থিরা গ্রহণ করবে, যেটা আমরা কেউই চাই না৷ এতে আমরা আতঙ্কিত বোধ করি৷এই পরিস্থিতি নিয়ে অপরাজনীতি না করে ‘জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠা ঠেকাতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি৷আজ এটাকে নিয়ে অপরাজনীতি করার অপচেষ্টা চলছে৷ এটা শুধুমাত্র সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির চিন্তা থেকে আসে৷ এখানে বৃহত্তর চিন্তা করা প্রয়োজন, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন৷এজন্য আমরা বার বার বলেছি, গণতন্ত্রের পরিবেশ সৃষ্টি করা, গণতন্ত্রের জন্য স্পেস তৈরি করা ও সহনশীলতা প্রয়োজন৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সৃষ্ট জঙ্গিবাদের প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমাদের সময়েও এরকম একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল৷ তখন দেশের আলেম-উলামারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ সন্ত্রাস যে ইসলামের অংশ নয়-এই কথাটা তারা পরিষ্কার করে বলেছিলেন; এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন৷রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উধের্্ব উঠে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান মির্জা ফখরুল৷এটাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলকে দমন করবার জন্য গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে৷এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ৷