দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ০৮ অক্টোবর ২০১৫: অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে শক্তিশালী আঞ্চলিক যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শক্তিশালী আঞ্চলিক যোগাযোগ না থাকলে অর্থনীতিতে গতি আসবে না। দেশ এগিয়ে যাবে না। তাই আমাদের এ ক্ষেত্রে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে অর্থ একটি বড় সমস্যা মন্তব্য করেন তিনি। একযোগে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, দুটি সেতু, একটি সেতুর নির্মাণ কাজ, কয়েকটি জাতীয় মহাসড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় হল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সিলেটে কাজীর বাজার সুরমা নদীর উপর নবনির্মিত কাজীর বাজার সেতু, বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন-লালবাগ-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও হবিগঞ্জের সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে নবনির্মিত বলভদ্র সেতু উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।মানিকগঞ্জে উদ্বোধন করেনহেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে নবনির্মিত নয়াকান্দি সেতুসহ কিটিংচর ও সাটুরিয়া সেতু, হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে মানিকগঞ্জ শহরাংশ (মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন পর্যন্ত) চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।
এসময় মোট ৪৭৬ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম তিনটি বিদ্যুকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো- আশুগঞ্জ ৫১ মে. ও. গ্যাসভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ২০০ মে. ও. মডুলার পাওয়ার প্লান্ট, আশুগঞ্জ ২২৫ মে. ও. কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সিম্পল সাইকেল অংশ) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল রেলক্রসিংয়ের উপর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। এছাড়া পোস্তগোলা সরকারি আধুনিক ময়দার মিল উদ্বোধন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের উদ্বোধন ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এসব স্থাপনা ও নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্রায় ৪৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার নতুন তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা একশ হল। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব কেন্দ্রসহ সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং আরও তিন প্রকল্পের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আমরা সেঞ্চুরি করেছি। ক্রিকেট খেলায় সেঞ্চুরি হয়; বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও বাংলাদেশ সেঞ্চুরি করেছে। কাজেই এটা একটা বিরাট অর্জন।
বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম অনুষ্ঠানে জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার সময় থেকে গত সাড়ে ছয় বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দেশের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভসহ) উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, ইনশাল্লাহ আমরা তা করে ফেলব। ভবিষ্যতে আরও বেশি আমরা করতে পারব।সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘বিদ্যুতের হাহাকার দূর করতে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়। এখন সরকার অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সেগুলোতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু বাংলাদেশে কখনো যেন আর বিদ্যুতের সমস্যা না হয়-সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
কেবল বিদ্যুত নয়; খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামোসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ যথেষ্ঠ এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।নতুন তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর সিম্পল সাইকেলের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে শুরু করেছে। কম্বাইন্ড সাইকেলের ৭৫ মেগাওয়াটও নভেম্বরে জাতীয় গ্রিডে যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। ইউনাইটেড আশুগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট মডিউলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। উদ্যোক্তা কোম্পানি হিসেবে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৭১ শতাংশের মালিক। বাকি ২৯ শতাংশ আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানির।প্রায় ১৭ কোটি ডলারে নির্মিত এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, উন্নয়নের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। অনেক এলাকায় কিন্তু অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। সেগুলো যেন সঠিক সময়ে সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়টা আমার মনে হয় সকলেরই বিশেষভাবে দেখা দরকার।তাহলে এ দেশটাকে আমরা আরো দ্রুত উন্নত করতে পারব, বলেন তিনি।