দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ অক্টোবর ২০১৫: মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনায় আবেদন করতে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।সুপ্রিম কোর্টের আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে এই বিএনপি নেতার সঙ্গে দেখা করেন তার আইনজীবী মো. হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী।প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, শুধু রিভিউ নিয়েই সালাউদ্দিন কাদেরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।তিনি রিভিউ পিটিশনের ব্যাপারে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। সেখানে তার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ে আর কথা হয়নি।
যুদ্ধাপরাধের মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় শোনার পর রিভিউ আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পান আসামি।কবে রিভিউ আবেদন করা হবে- জানতে চাইলে হুজ্জাতুল বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করা হবে।আমরা পিটিশনে যে যুক্তি উত্থাপন করব, তাতে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আমার ক্লায়েন্টকে বেকসুর খালাস দেবেন।কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে জেলারের কক্ষের পাশের ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের সাক্ষাৎকার কক্ষে সালাহউদ্দিন কাদের তার আইনজীবীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। তবে কারা কর্মকর্তারা নজরে রেখেছিল তাদের বৈঠক। চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের আগের দিন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও রিভিউ আবেদন নিয়ে কথা বলেন।
গত ১ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির রায় বহাল রেখে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।পরদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠালে সালাউদ্দিন কাদেরকে তা পড়ে শোনানো হয়।৬৬ বছর বয়সী সালাউদ্দিন কাদের ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। মানবতাবিরোধী চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা কেন্দ্রীয় কারাগারে গত ১ অক্টোবর পৌছেঁ দেয়া হয়েছে। এর আগে ওইদিনই সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুজাহিদও রিভিউ করবেন বলে তার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত করে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির। এ দুই যুদ্ধাপরাধীর আপিল মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি ১ অক্টোবর তাদের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন। পুনর্গঠিত একমাত্র ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। অন্য দুই বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম, বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডিত দুই আসামির বিষয়ে লাল কাপড়ে মোড়ানো পরোয়ানা দু’টি পর্যায়ক্রমে কারা কর্তৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্র্যাট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিস্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ পরোয়ানার ভিত্তিতে রায় কার্যকর করতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ে আপিলের পূর্নাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর এবং গত ১৬ জুন মুজাহিদের আপিল মামলায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষনা করে আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকেই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন আসামি সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ। তবে আসামিপক্ষে রিভিউ আবেদনের জন্য রাস্ট্র বসে থাকবে না। দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিবে রাস্ট্র। আসামিরা রিভিউ দায়ের করলে তখন দন্ড কার্যকর প্রক্রিয়া ¯’গিত থাকবে।
সাকা চৌধুরী হলেন পঞ্চম ও মুজাহিদ হলেন চতুর্থ ব্যক্তি যাদের মামলায় আনা আপিলের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা এ দুই আসামি মানবতাবিরোধী দায়ে চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলেন।এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে বিতর্কিত সাকা চৌধুরী। তাকে চারটি অভিযোগে (চার্জ) মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাকা চৌধুরী ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের অপরাধ সংগঠিত করেছেন বলে রায়ের পর্যবেক্ষনে উঠে এসেছে। ক্যালকুলেটিভ ও সুচিন্তিতভাবে সাকা চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। মুজাহিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধকালে আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। ওই বাহিনী দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। মুজাহিদ ও তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী মেধাবী সন্তান (বুদ্ধিজীবী) হত্যায় ও নিশ্চিহ্নে জড়িত তা রায়ের পর্যবেক্ষনে উঠে এরসছে। এ দুই আসামি সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ কিভাবে ৭১’ এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তা পূর্নাঙ্গ রায়ে উঠে এসেছে বলে জানান এটর্নি জেনারেল।
২০১৩ সালের ১অক্টোবর ট্রাইব্যুনালÑ১এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাকা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয়। হরতালে গাড়ী পোড়ানো ও ভাংচুরের এক মামলায় সাকা চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশের রায় দেয় বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২(বর্তমানে বিলুপ্ত)।ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। পরে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়। সেই থেকে কারাগারে আছেন এ জামায়াত নেতা।