দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ অক্টোবর ২০১৫: ইতালি ও জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে নিশ্চয় উদ্দেশ্য আছে৷ আর দুটি হত্যাকাণ্ডের কারণে সরকারের সব অর্জন ধ্বংস হয়ে যাবে- এমন মনে করার কোনো কারণ নেই বলেও তিনি জনগণকে সচেতন হতে বলেছেন৷যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন৷বিএনপি-জামায়াত জোটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয় তাদের মদদ আছে৷ আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করানোর জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়৷ এটার পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে৷ তাদের হাত আছে৷ তবে বিদেশি নাগরিকদের হত্যায় যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার হবে বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী৷ এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখানে একটা ঘটনা ঘটলে খুব সেনসেটিভ হয়ে যাই৷ অর্জনগুলি যেন সব শ্যাডো হয়ে গেল, অর্জনগুলি যেন সব হারিয়ে গেল৷ ওই একটা ঘটনায়… আমরা এতো মানসিক দৈন্যতায় কেন ভুগি?হ্যাঁ, যে ঘটনা ঘটেছে সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে, এখানে অবশ্যই পরিকল্পিত কিছু তো আছেই৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের যখন বিচার করছেন, তারাই স্বাধীনতার পর রাজত্ব করেছে পঁচাত্তরের পর ২১ বছর- এটা ভুলে যাবেন না৷ তারাই ক্ষমতায় ছিল৷ আজকে যখন তার বিচার করছি, তার কিছু রিঅ্যাকশন তো হবেই৷এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এই দুই ঘটনায়, এই যদি আপনাদের চিন্তা ভাবনা হয়, তাহলে তো আমার মনে হয় যে বিএনপি-জামাত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য সেটাই সফল৷তারা এ ঘটনাগুলি… পেছনে নিশ্চয়ই মদদ আছে৷ এবং এটা করাই হচ্ছে আমাদের অর্জনটা যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়৷গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে ইতালীয় এনজিওকর্মী চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ আর শনিবার সকালে রংপুরে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি৷
শেখ হাসিনা বলেন, এটা দেশবাসীকেও বুঝতে হবে৷ দেশের মানুষকে জানতে হবে৷ তারা এই যে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এটার পেছনে একটা উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে তাদের একটা হাত আছে, এতে কোনো.. ই নাই৷সরকার ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেখবেন, এই হত্যাকারীদের ধরা হবে, বিচারও করা হবে৷জাতিসংঘ সম্মেলন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী৷ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সমপ্রচার করা হয়৷যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি জঙ্গি তত্পরতা পর্যবেক্ষক সংস্থা বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উগ্রপন্থি দল আইএসের জড়িত থাকার কথা বললেও বাংলাদেশে তেমন কোনো জঙ্গি সংগঠনের তত্পরতা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত বলতে পারি আমাদের এখানে আইএস বা তেমন কোনো সংগঠনের তত্পরতা গড়ে উঠতে পারেনি৷গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে ইতালীয় এনজিওকর্মী চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ আর শনিবার সকালে রংপুরে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি৷
দুই ঘটনার পরই আইএস এর দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দেয় জঙ্গি তত্পরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ৷একজন সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, “ঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলা ভাই- এগুলো আমাদের দেশে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, অ্যারেস্ট করেছি৷ আর আমাদের দেশে কিছু কিছু লোক তো খুব উত্সাহিত হয়ে ওদিকে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েৃ এটাই তো সমস্যা৷এ ধরনের ঘটনা বন্ধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তত্পর রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে৷এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান বাংলাদেশে হোক, তা আমরা চাই না, তা হতে দেব না, এটা হল বাস্তব কথা, বলেন প্রধানমন্ত্রী৷দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার বিষয়ে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দুজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে৷ তাঁদের হত্যার স্টাইলটা একই রকম৷ ইতালি নাগরিককে চারটি গুলি মারা হয়েছে৷ একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি৷ চারটা গুলিই তাঁর লাগল৷ তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত৷ আমি তার আগে একটু স্মরণ করাতে চাই, এর আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য৷ এর পরে তার রিঅ্যাকশন৷ সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়৷প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসার প্রসঙ্গে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল যে আসল না, অস্ট্রেলিয়ায় কী ঘটল? সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুজনকে গুলি করে মারল৷ আমি জানি না, আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইটস করেছে কি না৷ অস্ট্রেলিয়া কী জবাব দেবে৷ যেসব দেশ বাংলাদেশে একজন হত্যার পর রিঅ্যাকশন দেখাল, তারা অস্ট্রেলিয়ার এই হত্যাকাণ্ড এবং আমেরিকার স্কুলে গুলি করে হত্যা করার পর কী করল৷ তারা কী সেখানে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এখানে রেড অ্যালার্ট হয়ে গেছে৷ অস্ট্রেলিয়ায় দুজনকে মারা হলো, তারা সেখানে কী করেছে৷ আমরা একটা ঘটনা ঘটলে বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই৷ অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে গেল৷ অর্জনগুলো হারিয়ে গেল৷ আমরা এত মানসিক দৈন্যে কেন ভুগি৷তিনি বলেন, রেয ঘটনা ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি৷ যারা এগুলো ঘটাবে…অবশ্যই এখানে পরিকল্পিত কিছু তো আছেই৷ আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন৷ তারাই ৭৫-এর পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল৷ আজকে তাদের যখন আমরা বিচার করছি৷ তার কিছু রিঅ্যাকশন তো হবেই৷ এখানে কিছু গণসচেতনতা দরকার৷দলের লোকজনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানেই থাকি৷ এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, যখন যে ঘটনা ঘটছে খবর পাচ্ছি৷ ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি৷ আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ কাজেই আমি আপনাদের বলব্তসব অর্জন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল এই ঘটনায়; এই যদি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা হয়, তাহলে আমার মনে হয় ওই বিএনপি-জামায়াত রাজাকারদের যে উদ্দেশ্য সেটাই সফল৷
সৌদি আরবের নাগরিক খালাফ হত্যার বিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালাফ হত্যার বিচার করছি৷ তাদের ( সৌদি আরব) বিচারিক ব্যবস্থা এবং আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা তো আলাদা৷ তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়৷ আমরা তো তা করতে পারি না৷ তখন তো আপনারাই চিল্লাবেন৷ গেল গেল সব গেল৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন হলো৷ খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত৷ এটাই হলো আমাদের দেশের চরিত্র৷বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি সরকার প্রধানদের মনোভাবের বিষয়ে এটিএন বাংলার এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, নেদারল্যান্ডসের রানি, সুইডেন ও বেনিনের প্রধানমন্ত্রী কেউ এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি৷তিনি বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কেউ বাংলাদেশে সংকট বা ইলেকশন এসব বিষয়ে আলোচনাই করেন নাই৷ বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকেই তারা সাধুবাদ দিয়েছেন৷ বাংলাদেশই ওখানে অন্য রকম ফোকাল পয়েন্ট ছিল৷ বাংলাদেশ কীভাবে করে, কীভাবে এত উন্নতি করল৷ অনেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানান তিনি৷ বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ সাংসদ অ্যান মেইনও বাংলাদেশে কোনো সংকট দেখতে পাচ্ছেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শেখ হাসিনা৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গ্রুপ আছে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সেটা তারা করতে থাকবে৷ আজকে আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি, এটাই অনেকের পছন্দ না৷ কেউ কেউ মতামত দিয়ে ফেললেন আর্মি নাকি আমার পুরো কন্ট্রোলে৷ এ জন্য আর্মি কিছু করতে পারছে না৷ যিনি এটা বলেছেন, তিনি কি আর্মিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন৷ কিন্তু গাছ থেকে ফল পড়ে নাই৷ যে যেভাবে ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আমাদের সব থেকে অগ্রগণ্য৷বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে বিদেশিরা ভালোভাবে নেয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব আর তারা চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবলেন কি করে? তারা তো তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকবেই৷বাংলা নববর্ষে উত্সব ভাতা চালু করা নিয়ে একজন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উত্সবে সবাই যোগ দেয়৷ সার্ব জনীনভাবে এই উত্সব পালন হয়৷ সেটা বিবেচনায় নিয়ে পয়লা বৈশাখে আমরা উত্সব বোনাস দিয়েছি৷এ সময় তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনারা সংবাদপত্রের মালিকরা ঠিকমতো দেবেন তো বোনাসটা? টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদপত্রের মালিকরা বোনাসটা দিয়ে দিলে আমি খুশি হব৷ আশা করি, এটা দেবেন সবাই৷ পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে কবি সুফিয়া কামাল নিয়ে তাঁর একটি সংগ্রামের কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা৷দল এবং সরকারের দূরত্ব ঘুচানো নিয়ে একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবুর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একটা গাছ যখন বেড়ে ওঠে, সে কাছের শিকড় থাকে৷ আপনি গাছটা দেখেন, ফুলটা দেখেন, ফলটা দেখেন৷ কিন্তু শেকড়টা দেখেন না৷ শিকড়ের দিকে কিন্তু কেউ তাকিয়ে দেখেন না৷ আজকে বলেন আমার রেটিং৷ আমার রেটিং যাই হোক না কেন, আমার শিকড় হচ্ছে আমার দল৷ এটা কিন্তু ভুললে চলবে না৷ আজকে আমি যা কিছু করছি, নিশ্চয় আমার দলের জন্যই করতে পারছি৷ দলই আমাকে সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে৷ দলের সহযোগিতা আছে, সমর্থন আছে বলেই আমি এত দূর উঠতে পেরেছি৷ সরকারের রেটিংও ভালো বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা৷
গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলামের গুলি করে শিশুকে রক্তাক্ত করার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বিশাল সংগঠন, সে সংগঠনে কিছু ঘটতেই পারে৷ কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না সেটাই বড় কথা৷ আমরা কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা দেই না, প্রশ্রয়ও দেই না৷ কালকে (শনিবার) আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা নিয়ে আলাপ করেন৷ সাথে সাথে আমি বললাম, এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে৷ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ আপনি সেটা বিবেচনা করেন৷ এটা তদন্ত করতে হবে৷ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি৷ তার পিস্তলের লাইসেন্স ক্যানসেল করেছি৷ মামলা দেওয়া হয়েছে৷ ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখা কঠিন৷ কারণ ওখানে জামায়াতে ইসলামি মানুষ খুন করছে৷ এই খুন-খারাবির মধ্যে দলের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি৷দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যায় আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠন জড়িত থাকার বিষয়ে সাংবাদিক মুন্নী সাহার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতালিয়ান নাগরিককে হত্যার পর শিকাগো থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস আসে– আইএস এর সঙ্গে জড়িত৷ তার সম্পৃক্ততা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি৷ ঘটনা তো তদন্ত করতে হবে৷ আমাদের গোয়েন্দারা কোনো সূত্র এখনো পায়নি৷ তখন কে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল আর আমাদের গ্রহণ করতে হবে? কেন করতে হবে?’ তিনি বলেন, এখানে মিডিয়ারও ভূমিকা আছে৷ আপনারা খুঁজে বের করুন৷ এখানে গোয়েন্দা সংস্থা আছে..তারপরেও মিডিয়া এত টওশ্ন না করে অনেক সময় কিছু খুঁজে বের করতে পারে৷ গুলশানে একটা ঘটনা ঘটল, সেটা নিয়ে শিকাগো থেকে কেন স্ট্যাটাস আসল? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এখনো জানতে পারে নাই, তাহলে হোম মিনিস্টার কি করে স্বীকার করে৷ রংপুরের ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র কি৷ মিডিয়া এগুলো খুঁজে বের করুন, কী করে এটা হলো৷পাকিস্তানে নারী ক্রিকেট দল পাঠানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নারী ক্রিকেট দল খেলতে গিয়ে তো অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে৷ যাবে না কেন? পাকিস্তান একটা দেশ৷ ক্রিকেট খেলায় তাদের ভালো নাম আছে৷ পৃথিবীতে নামকরা যে কয়টা টিম আছে, তারা এর মধ্যে একটি৷ আপনি একজন মেয়ে হিসেবে সাধুবাদ জানান৷ আপনারা ভয় পেয়ে, হ্যাঁ ওখানে কেন গেল, এ প্রশ্ন তোলা তো ঠিক না৷ এ প্রশ্ন তুলবেন কেন? আমাদের মেয়েরা সেখানে গিয়ে সাহস দেখাল৷ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তাঁদের পরাজিত করেছি৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক তো বাদ দিইনি, কেটে ফেলিনি৷ খেলাধুলা বা যেকোনো অনুষ্ঠানে আমরা যাব এবং গর্বের সঙ্গে যাব৷ বিজয়ী জাতি হিসেবে যাব৷ খেলার যে রেজাল্টই হোক যাব, ব্যস৷পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যতদিন এই আন্দোলন শেষ না হচ্ছে, ততদিন তাদের বর্ধিত বেতনও নেওয়া উচিত্ হবে না৷ অষ্টম বেতন কাঠামোতে ৯১ শতাংশ বেতন বাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি৷ একটু কমায় দেওয়া ভাল ছিল৷সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশনগ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপকরা সচিবের সমান গ্রেড-১ স্কেলে বেতন েপেতেন৷ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা গ্রেড-২ এবং অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ এ বেতন পেতেন৷অষ্টম বেতন কাঠামোতে সিলেকশনডেপ্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করে সিলেকশনগ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের সচিবদের সমান গ্রেড-১ দেওয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য নতুন একটি বিশেষ গ্রেড তৈরি করা হয়েছে৷আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, আমলারা নিজেদের জন্য বিশেষ গ্রেড তৈরি করলেও শিক্ষকদের সিলেকশনগ্রেড প্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে৷ ফলে অধ্যাপকরা আমলাদের নিচের স্কেলে থাকছেন৷
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়টি তুলে ধরে জানতে চান, এ বিষয়ে সরকারপ্রধান কোনো হস্তক্ষেপ করবেন কি না৷
জবাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, উনাদের কোনো কথা নেই, বার্তা নেই, আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে, কেন বন্ধ করে দেবে? শিক্ষকরা আন্দোলন করতে যাবে কিসের জন্য? আর যদি করতে হয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার কোনো রাইট তো তাদের নেই৷
শিক্ষকদের জন্য সচিবদের সমান সুযোগ সুবিধা দাবি করার আগে কে কি সুবিধা সরকারের কাছ থেকে পান- তা হিসেব করে দেখতে বলেন শেখ হাসিনা৷তিনি বলেন, সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স যেখানে ৫৯ বছর, সেখানে শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন৷ আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার সুযোগ পেলেও সচিবরা তেমন সুযোগ পান না৷ যদি সমান করতে হয়, তাহলে তো সব কিছুই সমান সমান হতে হবে৷ চাকরির বয়স তো কমাতে হবে৷ আর যতদিন আন্দোলন শেষ না হবে ততদিন বর্ধিত বেতন নেবে না, এই তোৃ সেই সিদ্ধান্তও দিক, যে বর্ধিত বেতন নেবে না কেউ৷এ বিষয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন করার দরকার ছিল না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে তার হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই৷আন্দোলন যেহেতু করছেন- মাননীয় অর্থমন্ত্রী আছেন, শিক্ষামন্ত্রী আছেন, তারা দেখবেন৷ কমিটি করা হয়েছে, তারা দেখবে৷ আমরা উনাদের (শিক্ষক) অনুরোধ করব, ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যত যেন নষ্ট না করে৷
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷