দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ অক্টোবর ২০১৫: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-১৷ একইসঙ্গে এ মামলার মোট আট আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৭ নভেম্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ রোববার গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ এবং ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতারকৃত ডা. খন্দকার গোলাম সাবি্বর ও মিজানুর রহমান মিন্টুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়৷ ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে অপর আসামি হরমুজ আলীকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়ার পথে তাকে বহনকারী পুলিশের গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়লে আহত হন তিনি৷ তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকায় তাকে হাজির করা যায়নি৷
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) প্রসিকিউশনের আবেদনক্রমে এ মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল৷ পরে ওইদিনই ঢাকায় গ্রেফতার হন এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ৷ ময়মনসিংহ সদর ও ত্রিশালে গ্রেফতার হন বাকি তিনজন৷ পলাতক তিন আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি৷ শুক্রবার ট্রাইব্যুনাল বন্ধ থাকায় চার আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর(সিএমএম)আদালতে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়৷মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক তাদের চারজনকে খণ্ড নথিমূলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রোববার ওই খণ্ডনথি ট্রাইবু্যনালে পাঠানো ও আসামিদেরকে হাজির করার নির্দেশ দেন৷ রোববার ট্রাইব্যুনালে আট আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে তিনমাসের সময়ে আবেদন জানান প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন৷ তিনি শুনানিতে জানান, আসামির বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই থেকে তদন্ত চলছে৷ প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে৷
ট্রাইবু্যনালে আরও ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তাপস কান্তি বল এবং আসামি ডা. খন্দকার গোলাম সাবি্বরের আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ৷বাকি আসামিরা যেকোনো সময় পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারবেন বলে ট্রাইবু্যনাল জানালে তারা জানান, তারা আইনজীবী দেবেন৷ এরপর চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মাদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবু্যনাল৷ একইসঙ্গে প্রসিকিউশনকে আট আসামির বিরুদ্ধে আগামী ১৭ নভেম্বর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন৷ গত ১৯ মে এমপি হান্নানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন৷ ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে আন্তজার্তিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩ (২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়৷ মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে পাঠিয়ে দেন আদালতের বিচারক আহসান হাবিব৷ মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ছাড়াও জামায়াত নেতা ফকরুজ্জামান ও শহরতলীর গলগণ্ডা এলাকার গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়৷ পরে তদন্তে আরও পাঁচজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় এ মামলার আসামি হয়েছেন মোট আটজন৷এদিকে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১২ আক্টোবর তারিখ ধার্য করা হয়েছে৷
আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আজ এ আদেশ দেয়৷ একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন আসামি এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ৷ একটি মামলায় পাঁচ আসামি হচ্ছেন জেলার করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারম্নল ইসলাম৷ রোববার আসামি এডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদকে ট্রাইবু্যনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়৷ আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান এ মামলার আইনজীবী৷ আসামি শামসুদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানায় তার আইনজীবী৷গত ২২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে প্রসিকিউশন শুনানি করেছে৷ প্রসিকিউশনের পৰে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন শুনানি করেন৷ গত ১৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের বিরম্নদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয় ট্রাইবু্যনাল৷ গত ১০ মে পাঁচ রাজাকারের বিরম্নদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন৷ প্রসিকিউশন গত ১৫ এপ্রিল এ মামলায় তদনত্মের পূর্নাঙ্গ প্রতিবেদন ট্রাইবু্যনালে দাখিল করে৷ এর আগে গত ১৩ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয় ট্রাইবু্যনালের তদনত্ম সংস্থা৷ এ পাঁচ আসামির বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও এ পর্যনত্ম আসামি শামসুদ্দিনকে ছাড়া অন্যদের গ্রেফতার করা যায়নি৷
তদনত্মে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুন্ঠন, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ এবং সাক্ষ্য-প্রমান পাওয়া গেছে৷ এ আসামিরা মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের বিসত্মীর্ণ অঞ্চলে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে৷ এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ৪০ জন সাক্ষী রয়েছেন৷