দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ অক্টোবর ২০১৫: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া চুড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) আবেদন করবেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। শনিবার কারাগারে মুজাহিদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তার আইনজীবী শিশির মনির।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুজাহিদের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যান ৫ আইনজীবী।আইনজীবীরা হলেন শিশির মনির, নজরুল ইসলাম, মশিউল আলম, মতিউর রহমান আনন্দ ও গাজী তামিম।শিশির মনির সাংবাদিকদের আরো জানান, তারা কারাগারে মুজাহিদের সঙ্গে আইনি বিষয়ে আধা ঘণ্টা কথা বলেছেন।গত ১৬ জুন মুজাহিদের আপিল মামলায়ও মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে সুপ্র্রিম কোটের আপিল বিভাগ । গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিলের পুর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। গত ১ অক্টোবর মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে তা কারাগারে পৌঁছে দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, পুর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামী তার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন।তিনি কারা ফটকে সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (মুজাহিদ) রিভিউ আবেদন প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।
রিভিউ আবেদন করতে রায়ের পর ১৫ দিন সময় থাকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে আবেদন করা হবে বলে শিশির মনির জানিয়েছেন।কারাবন্দি জামায়াত নেতা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রয়েছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন।শিশির মনির বলেন, উনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন, মানসিকভাবেও অনঢ় ও অবিচল আছেন। উনি আমাদের আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা যেন রিভিউ আবেদন দায়ের করার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।রায়ের একটি অনুলিপি মুজাহিদের কাছে দিয়েছেন জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, উনি বলেছেন, রায়টি পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং রিভিউ আবেদন দায়ের করার পূর্বমুহূর্তে আরেকবার আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছ প্রকাশ করেছেন।উনি আমাদের বলেছেন, যে অভিযোগে উনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, উনি মনে করেন রাষ্ট্রপক্ষ উনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয়েছে। উনি এটিও বলেছেন, আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ উনার বিরুদ্ধে এনেছেন।
উনি এটিও আমাদের আবারও বলেছেন, ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ৪২টি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলার কোনোটিতে তিনি আসামি ছিলেন না। এই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৯৭২ সালে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। জহির রায়হান সাহেবকে আহ্বায়ক করে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে সদস্য করে কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেনি।আপিল বিভাগ গত বুধবার মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করে। ওইদিনই তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, একাত্তরে নিষ্ঠুরতার জন্য আল বদর নেতা মুজাহিদকে যথাযথভাবেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।এই ধরনের নিষ্ঠুরতা ও প্রমাণ পাওয়ার পর অপরাধী সর্বোচ্চ দণ্ড না পেলে তা ন্যায়বিচারের উপহাস হয়ে যাবে।
পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার দুই ফাঁসির আসামির দণ্ড কার্যকরে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং তা কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। াকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদকে এবং কাশিমপুর কারাগারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া।রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।