দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ অক্টোবর ২০১৫: জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পথে পথে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে গণসংবর্ধনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুরে জাতিসংঘ অধিবেশনে ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দ্যা আর্থ’ এবং ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন’ পুরস্কার লাভ করায় শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দর থেকে তার সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত অভিনন্দন এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা।
শনিবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে সংবর্ধনা জানানোর ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট। সংবর্ধনার সে আয়োজন পরিণত হয় জনঢলে।সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিশেষ প্লেন প্রবেশের আগেই বিজয় সরণি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা দখলে যায় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে উৎসুক সাধারণ মানুষেরও উপস্থিতি। বেলা ১২টার পর এই উপস্থিতি জনঢলে রূপ নেয়।বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, শ্যাওড়া,এমইএস, কাকলী, বনানী, সৈনিক ক্লাব, চেয়ারম্যানবাড়ি, আমতলী, মহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বিজয় সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো সড়কই ছিল আওয়ামী নেতাকর্মীদের দখলে।নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ থেকে শতশত বাস-ট্রাকে করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সংসদ সদস্য (এমপি), দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানাতে আসেন।
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা শনিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন। এর কিছুক্ষণ পরেই বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের উদ্দেশ্যে তার গাড়িবহর রওনা হয়। এ গাড়ি বহরে শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়া মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ছিলেন। এসময় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, নিজ নিজ দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাবে শেখ হাসিনা হাত নেড়ে তাদেরও শুভেচ্ছা জানান। এসময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার ৮টি রুটে উপস্থিত ছিলেন।
এরমধ্যে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গির কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিমসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ফেরার পথে শুক্রবার লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি শেষে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১১টা ২৪ মিনিটে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতির পর শনিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছান। সিলেটে যাত্রাবিরতির সময় স্থানীয় তিন সংসদ সদস্য এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে বাংলাদেশের পক্ষে বিবৃতি পাঠ করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর গ্রহণ করেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনারের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ অ্যাওয়ার্ড’। এর আগের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাওয়ের কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৮ সেপ্টেম্বর অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেদিন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদার মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমাসহ বেশ কিছু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কে পৌঁছান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা দিতে আওয়ামী লীগ গত কয়েক দিন দফায় দফায় বৈঠক করে। সেই বৈঠকের ফল হিসেবে শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণবভন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে গণসংবর্ধনা দেয় রাজধানীর স্থানীয় সংসদ সদসদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এসময় এই ৮টি রুটে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এছাড়াও এ গণসংবর্ধনায় ১৪ দলের সিনিয়র নেতা, ঢাকা মাহনগর আওয়ামী লীগ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক নেতারা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতি কর্মী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ, নারী সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনায় যোগ দেয়া নেতাকর্মীদের জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল শুধুমাত্র শেখ হাসিনার ছবি থাকবে। কিন্তু নেতাদের এই কথা রাখেননি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের হাতের ফেস্টুন, ব্যানারে এসব সংগঠন ও কাউন্সিলরদের ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকে ফেরা প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনার আয়োজনে বিভিন্ন সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজটের ভোগান্তি তে পড়তে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।শনিবার বেলা ১টায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর সড়ক পথে সরাসরি গণভবনে যান। বেলা ২টায় তার গাড়ি বহর মহাখালী ফ্লাইওভার অতিক্রম করতে দেখা যায়।প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মিছিল বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে অবস্থান নিচ্ছিল।
দুপুর ১টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ফেরার এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চলাচল আটকে দিলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।বমানবন্দরের উভয় পাশের সড়কে ১টার দিকে চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।বিমানবন্দরে আটকে পড়া অটোরিকশা চালক মিজানুর রহমান দেড়টার দিকে বলেন, আধ ঘণ্টার উপর এখানে আটকে আছি।গুলশান থেকে মহাখালীমুখী সড়ক আমতলীতে আটকে দেওয়ায় সেখানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ফার্মগেইট এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি না পাওয়ার কথা জানান চাকরীজীবী সায়েদ হোসেন।ঈদের ছুটির পর গত কয়েকদিনে রাজধানীতে যানজট ছিল না বললেই চলে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও যানজটে পড়তে হয়।বিজয় সরণী থেকে চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তার এক পাশে কৃষক লীগ অবস্থান নিয়ে ছিল। তাদের মুখে স্লোগান ছিল শেখ হাসিনার জন্য/ বাংলাদেশ ধন্য।এই সড়কের অন্য পাশে পূজা উদযাপন কমিটি, যুবলীগকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
বিজয় সরণিতে অবস্থানরত যুবলীগের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মালিবাগ ইউনিটের সভাপতি কাজী মিন্টু বলেন, নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজারো মানুষের মতো আমিও উপস্থিত হয়েছি। দেশের জন্য তিনি পুরস্কার নিয়ে এসেছেন, এটি আমাদের সবার গর্ব।নিরাপত্ত্রা বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন,তারা বিভিন্ন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছেন।প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিমানবন্দর ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করবেন জেনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।র্যাবের মুখাপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নিরাপত্তা জোরদারে র্যাব বিমানবন্দর এলাকায় অতিরিক্ত টহলে ছিল।বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তারও বলেন, তারা সর্ব্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিলেন ।