দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ অক্টোবর ২০১৫: চ্যাম্পিয়নস অফ দি আর্থ’ ও আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পেয়ে দেশে ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রীকে গান আর ফুলে গণভবনে বরণ করেছেন লেখক-কবি, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে শনিবার দুপুরে দেশে পৌঁছান শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে পৌঁছান।জাতিসংঘে গিয়ে দু’টি সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করে আসা প্রধানমন্ত্রী গণভবনের মূলভবনের ফটকে পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী হাশেম খান, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ, এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম, নিশাত মজুমদার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী ফটকে পা রাখতেই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বন্যা সুর তোলেন- ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। এসময় উপস্থিত অন্যরা তার সঙ্গে খালি গলায় গেয়ে ওঠেন, ‘মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত চরণে।গ্রহতারক চন্দ্রতপন ব্যাকুল দ্রুত বেগে করিছে পান, করিছে স্নান, অক্ষয় কিরণে।
এ অভ্যর্থনা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। এরপর বলে ওঠেন, এ অর্জন জনগণের, জনগণের প্রাপ্য এ পুরস্কার। দু’টি পুরস্কারই পুরো জাতির ও দেশের জন্য সম্মানের। তারপর প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর পর সৈয়দ শামসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ কতোটা এগিয়ে যাচ্ছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এই ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ সম্মানানা ও ‘আইসিটি অ্যাওয়ার্ড’। হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য নিরলস কাজ করছেন, এটা তার কাজের পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশের জন্য নয়, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জন্য কাজ করছেন। এ পুরস্কার নিপীড়িত বিশ্বের।
রিজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ পুরস্কার দেশের অর্জন, মানুষের অর্জন, তৃতীয় বিশ্বের অর্জন, যারা পরিবেশের জন্য কাজ করছেন তাদের অর্জন।এ সম্মাননা জাতি হিসেবে আমাদের আরও গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করেছে।মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মুশফিকুর রহিম বলেন,প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মাননা লাভ দেশের মানুষের জন্য আনন্দের। সবাই সমানভাবে একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি আইসিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।অধিবেশনে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণে বেশ ক’টি গোলটেবিল আলোচনা, সভা, সম্মেলন ও সংলাপ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। একইসঙ্গে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমাসহ বেশ কিছু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আট দিনের ব্যস্ত সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ১ অক্টোবর নিউইয়র্ক ছেড়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হন। এখানে একদিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে তিনি ২ অক্টোবর রাতে দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ৩ অক্টোবর বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। ওসমানী বিমানবন্দর থেকেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন শেখ হাসিনা। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০০২ ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এখানে ফুলেল অভ্যর্থনা ও সড়কে- মোড়ে গণসংবর্ধনা পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন।শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পথে পথে শুভেচ্ছা নিয়ে শনিবার ২টার পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর গণভবনে ঢোকে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজও ছিলেন ।