দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১অক্টোবর ২০১৫ : মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগ এলাকায় এই কর্মসূচি পালিত হয়।পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবেকরা। সোয়া ১টার দিকে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যান তারা।শাহবাগে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় তারা সেখানেই অবস্থান নেন। এ সময় শাহবাগ-টিএসসি সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পৌনে ৩টা পর্যন্ত গণগ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন শেষে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টের দুই অংশ ও ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে। শাহবাগে অবস্থান ধর্মঘটে এসে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান।প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে চিকিৎসক ইমরান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেডিকেলে পড়তে আসে। কেনই বা এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো, কেনই বা মেডিকেল শিক্ষাকে ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র?
দেশের স্বাস্থ্যখাত ও সাধারণ জনগণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই পরীক্ষা বাতিল করতে হবে।বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা ‘যদি হবে প্রশ্নফাঁস, পড়বো কেন ১২ মাস?’, প্রহসনের পরীক্ষা মানি না মানব না,‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট রি-এক্সাম’ লেখাসম্বলিত প্ল্যাকার্ড ডদর্শন করেন।আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সুমন হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি পালন করেছি। কুমিল্লা, ময়নমনসিংহ কয়েকটি জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।পুলিশের রমন জোনের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ধারবাহিকভাবে এই আন্দোলন চলছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থী আসার কথা ছিল, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।প্রাথমিকভাবে তাদের পয়েন্ট ছিল শহীদ মিনার, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে তারা বললেন, তারা শাহবাগে আসতে চান, আমরা তাদের অনুমতি দিয়েছি। যেহেতু শাহবাগ মোড়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, ভিআইপি রোড ও হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এখানে সেজন্য আমরা ব্যারিকেড দিয়েছি।এদিকে বেলা পৌনে ১টার দিকে আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসা দুপক্ষের মধ্যে ব্যানার নিয়ে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। সেখানে আগে থেকে ‘শিক্ষায় নৈরাজ্য বন্ধ কর’ লেখা একটা ব্যানার ছিল শিক্ষার্থীদের কাছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর ছবিসম্বলিত একটি ব্যানার শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করে।ছাত্র-অভিভাবক ঐক্য ফোরামের নামে ওই ব্যানারে লেখা ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।এ সময় কোন ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল হবে- তা নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।
প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বাক-বিতন্ডা ও তর্কাতর্কির পর ব্যানার ছাড়া শাহবাগের দিকে সবাই মিছিল নিয়ে যান।কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনের অবস্থান ধর্মঘট শেষে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সংহতি সমাবেশের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।সমাবেশের ডাক দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন হোসেন বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আমাদের সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দেশের নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকসহ ছাত্র সংগঠনগুলোকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।এদিকে, মেডিকেলে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার সংগঠনের এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শনিবার দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান আন্দোলনরত মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁরা নতুন পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি ‘ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে হওয়া মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার ও আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।