দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ মাঠ ও নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে আরো ভালভাবে সাড়া দিতে একটি জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশল গ্রহণ করছে।প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর সোমবার অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় শান্তিরক্ষা কৌশলপত্র প্রণয়ন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সেনা ও পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে কো-চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কাজে বাংলাদেশের অঙ্গীকার দৃঢ় ও অবিচল। মালি, কঙ্গো এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ ব্লু হেলমেটের অধীনে সেনা মোতায়েন করেছে।বিগত বছরের সম্মেলনে বাংলাদেশের দেয়া কিছু প্রতিশ্র“তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ পদাতিক বাহিনী ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ইউনিট, ইউটিলিটি হেলিকপ্টার, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যারিটাইম ইউনিট ও অন্যান্য সম্পদ সরবরাহ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তি দিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে। তিনি বলেন, এগুলো ব্যবহারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা নীতি অনুসরণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট পিস সাপোর্ট অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি উৎকর্ষের কেন্দ্র হিসেবে এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় অবদানকারী অন্যান্য দেশের সেনা ও পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেসামরিক লোকদের রক্ষা করা এবং নারীদের ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্র“িিতবদ্ধ।
তিনি শান্তিরক্ষীদের দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের সুপারিশমালার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে সারাবিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এবং ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া,জাপান, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, রুয়ান্ডা ও উরুগুয়েসহ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী ও গ্রহনকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন।এদিকে, নেদারল্যান্ড চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর পায়রায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছে।নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে ৭০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সোমবার এক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য খুবই উপযোগী এলাকা। সরকার যথাশিগগির সম্ভব এ বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করতে চায়।শেখ হাসিনা বলেন, নেদারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে নদী খনন, ভূমি পুনরুদ্ধার এবং বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে পারে।
বৈঠকে নেদারল্যান্ড সরকারের সহযোগিতায় প্রণয়নাধীন ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০) তৈরির অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়।শেখ হাসিনা মার্ক রুত্তেকে জানান যে, তিনি শিগগিরই নেদারল্যান্ড সফর করবেন।নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহাম্মদ বেলাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।পরে শিনজো অ্যাবের সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা জাপানের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরো বেশি বিনিয়োগের জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাংলাদেশ সফরের পর দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় পর্যায়ে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ ও জাপান একত্রে কাজ করবে।তারা জাপানের সহায়তায় বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পের (মেগা প্রজেক্ট) বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।