দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : সৌদি কর্তৃপক্ষ মিনায় পদদলনে নিহত ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করেছে, যাদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর বাইরে আরও এক নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত ছবির মধ্যে তাকে পাওয়া যায়নি। হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে মিনায় শয়তানের স্তম্ভে পাথর ছুড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের ওই ঘটনার তিন দিন পর রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হল।এদিকে, চলতি বছর হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবের মিনায় পদদলিতের ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজ হাজিদের যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তৎপর বাংলাদেশ। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিজন হাজির নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিনা ট্র্যাজেডিতে পদদলিতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৯১ জন।ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের দাফন, আহতদের চিকিৎসা ও নিখোঁজদের সন্ধান করা ছাড়াও সবাইকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনাই এখন মূল কাজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিহতদের দাফন কোথায় সম্পন্ন হবে, সে সিদ্ধান্ত হবে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে। মৃত্যুর আগে হাজিরা তাদের পরিবারের কাছে দাফনের ব্যাপারে কখনো কোনও ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন কি না, তা জানার চেষ্টা করা হবে। সৌদি সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, পদদলনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৬৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৯৩৪ জন।আহতদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়। সৌদি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পদদলনের ঘটনায় উদ্ধার লাশগুলো বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে হাসপাতাল থেকে মিনার মুয়াইজাম মর্গে স্থানান্তর করা হয়। এরপর মর্গে গোসল করিয়ে নেয়া হয় লাশের ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ।কয়েক দফায় এ পর্যন্ত ৬৫০ জনের ছবি সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে, যাতে স্বজন, হজ এজেন্ট বা তার দেশের হজ কর্মকর্তারা লাশ শনাক্ত করতে পারেন।হজযাত্রীরা বিমানবন্দরে নামার পর তাদের আঙুলের যে ছাপ ইমিগ্রেশন দপ্তর সংগ্রহ করেছিল, তার সঙ্গে লাশের আঙুলের ছাপও মিলিয়ে দেখার কথা।এসব প্রক্রিয়া শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে তিনজনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন, তাদের দুজন হলেন- খুলনার মো. শহিদুল ইসলাম ও সাভারের আমিনুর রহমান। এছাড়া আরও একজনকে বাংলাদেশি বলে শনাক্ত করার কথা বলা হলেও তার পরিচয় জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ফিরোজা খানম নামে জামালপুরের এক নারীর মৃত্যুর খবর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সৌদি আরবের প্রকাশিত তালিকায় তার ছবি এখনও পাওয়া যায়নি।বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে পদদলনের ঘটনার পর রাতেই ফিরোজা খানমসহ জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও ফেনীর চারজনের মৃত্যুর খবর পরিবারের মাধ্যমে জানতে পারে জেলা প্রতিনিধিরা। এরপর শনিবার পাওয়া যায় আরও পাঁচ বাংলাদেশির নাম। ওই নয়জনের মধ্যে মন্ত্রলালয়ের দেওয়া দুইজনের নাম ছিল না। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ টেলিফোনে বলেন, স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় ২০০ জনের একটি তালিকা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষেও প্রকাশিত ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।মিনায় নিহত বাকিদের ছবিও সোমবারের মধ্যে প্রকাশ করা যাবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ আশা করছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগে কোনো লাশ দাফন করা হবে না, বলেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ছয়টি মেডিকেল টিম মিনার আশেপাশের ছয়টি হাসপাতালে ঘুরে আহত বাংলাদেশিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কাউকে পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা ঠিকমত হচ্ছে কি না, সে বিষয়টিও তারা দেখবেন।পদদলনে হতাহতের ঘটনার পর ওইদিনই বাংলাদেশিদের খবর জানতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে হটলাইন চালু করা হয়।+৯৬৬৫৩৭৩৭৫৮৫৯ ও +৯৬৬৫০৯৩৬০০৮২ নম্বরে ফোন করে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মিনার বিষয়ে তথ্য জানা বা জানানো যাবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যারা সৌদি আরবে মৃত্যু হলে সেখানেই দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন, তাদের ইচ্ছার মর্যাদা দেওয়া হবে। তবে সৌদি সরকার এ ব্যাপারে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেয় কি না, তাও দেখবে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও প্রতিনিধি দল এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানায় মন্ত্রণালয় সূত্র। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বেশ ক’জন আমলা রয়েছেন এ দলে।
মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. ফয়জুর রহমান ফারুকী বলেন, চলতি বছর হজ উপলক্ষ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন ও পরে আরও ৫ হাজার হাজির সৌদি আরব যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এর মধ্যে ভিসা জটিলতাসহ বিভিন্ন কারনে কেউ কেউ যেতে পারেন নি। তবে সব মিলিয়ে এবার এক লাখ ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি হাজি পবিত্র হজ পালন করেছেন।মন্ত্রণালয়ের অপর কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সৌদিতে নিজেদের মতো করে তৎপরতা চালানোর সুযোগ নেই। কারোর মরদেহ পেলে তারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চাইলেই সেটি আমরা দেখতে বা নিতে পারি না। কিন্তু আমাদের দল কাজ করে চলেছে।তিনি জানান, নিহত হাজিদের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অথবা তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মিনা ও অন্যান্য স্থানের হাজিদের খোঁজে সবসময় হটলাইনে যোগাযোগ করছে মন্ত্রণালয়।ফারুকী জানান, আগামী ৭ অক্টোবর ধর্মমন্ত্রী ও সচিবের দেশে ফেরার কথা। তবে পরিস্থিতি যদি দাবি করে, তাহলে প্রয়োজনে আরও সময় বাড়াবেন তারা। মোট কথা, তারা বাংলাদেশের সকল হাজির তথ্য পাওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন।এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট। তাদের আগমন যেন নিরাপদ ও স্বস্তির হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা।উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে শয়তানের স্তম্ভে পাথর ছোড়ার সময় পদদলিতের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৬৯ জন হাজি। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৩৪ জন।