দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : ভাষা সৈনিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রবীণ নেতা কমরেড কর্নেল (অবঃ) শরফুদ্দিন আহমদ (এস. ডি. আহমদ) আর নেই। তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় সিএমএইচ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। এস. ডি. আহমদ ১৯২২ সালে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে বি.এ., বি.এস.সি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিয়ারিং, এম.বি.বি.এস., এল.এল.বি. ডিগ্রী অর্জন করেন। এস. ডি. আহমদ পেশাগত জীবনে ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়েতে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, গোপালগঞ্জে হেলথ অফিসার হিসেবে এবং পাকিস্তান আর্মি মেডিক্যাল কোর, বাংলাদেশ আর্মি মেডিকেল কোর, মিলিটারি হাসপাতাল ত্রিপোলি, ঢাকা জজকোর্ট ও হাইকোর্টে কর্মরত ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৯৫১-৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নির্মাণ কাজের অন্যতম নেতৃত্বপ্রদানকারী। তিনি দীর্ঘদিন সিপিবি’র উত্তরা থানা কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আমৃত্যু তিনি সিপিবি’র সদস্য ছিলেন। কমরেড এস.ডি. আহমদের মৃত্যুতে সিপিবি’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড এস. ডি .আহমদের মৃত্যুতে দেশ শুধুমাত্র একজন বিশিষ্ট ভাষা সৈনিককেই হারায়নি, একই সাথে একজন বিশিষ্ট প্রগতিশীল নেতাকে হারালো। কমিউনিস্ট আন্দোলন হারালো এক অসাধারণ যোদ্ধাকে। তার বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কমিউনিস্ট আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে সর্বস্তরের জনগণ কমরেড কর্নেল (অবঃ) এস. ডি. আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সিপিবি’র নেতৃবৃন্দ কাস্তে-হাতুড়ি খচিত লাল পতাকা দিয়ে প্রয়াত কমরেডের মরদেহ আচ্ছাদিত করেন। যুদ্ধাপরাধীদের জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ভাষাসৈনিক অ্যাড. গোলাম আরিফ টিপু, ভাষা সৈনিক আহমেদ রফিক, ভাষাসৈনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, ভাষা সৈনিক ডা. মির্জা মাজহারুল ইসলাম, সিপিবি’র উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআসম আরেফিন সিদ্দিকী, অধ্যাপক এম এম আকাশ, প্রসিকিউটর অ্যাড. জেয়াদ আল মালুম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, কবি মুহাম্মদ সামাদ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু প্রমুখ প্রয়াতের প্রতি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এছাড়া সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ক্ষেতমজুর সমিতি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষা কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, মানবাধিকার নাট্য পরিষদ, ব্রতচারী সংসদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস। সবশেষে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গাওয়া হয়। কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া গ্রামে কমরেড এস. ডি. আহমদকে সমাহিত করা হয়।