দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: আগামীকাল শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজের মধ্যদিয়ে সারা দেশে পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ওই জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লীদের সুবিধার্থে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যাপ্ত পানি ও নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহসহ ৩৬২টি ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঈদুল আজহার ২২৮টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে ৫ হাজার মহিলা মুসল্লি¬সহ লক্ষাধিক মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে বসার জায়গা, ওজু ও মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ।
এদিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্ল¬¬াজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে কোরবানির এ প্রচলন শুরু। মহান আল্ল¬াহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই এ কোরবানির প্রচলন। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমান ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোরবানির শিক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করি- এটাই হোক এবারের ঈদের অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের যে অনুপম দৃষ্টান্ত হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা সকলেই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকা-ে অংশ নিয়ে বিভেদ-বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। হযরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্রকে কোরবানি দেয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্ল¬াহপাকের নির্দেশে তাঁর জীবদ্দশায় প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তাঁর উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এ আদর্শ অনুসরণের জন্য গোটা মুসলিম জাহানের মতো বাংলাদেশেও ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্ল¬াহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার জন্য রাজধানী ছাড়ছেন। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিসি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লি¬¬¬-উটিসি), বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা বিপুলসংখ্যক যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এদিকে পবিত্র উৎসব উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।