দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি, সড়ক-মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট, ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল, ভ্যাপসা গরম ইত্যাদি কারণে যাত্রার শুরু থেকেই ভোগান্তির মধ্যে পড়েন এসব মানুষ। বাস ও গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ পথে পথে নানা বিড়ম্বনা ও ধকল সহ্য করতে হয়েছে তাদের। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সবক’টি ট্রেন ও লঞ্চের ছাদেও ছিল যাত্রী। লোকাল বাসগুলোতে দেখা গেছে একই চিত্র।খালি নেই বাসের আসন। ভেতরে ফাঁকা জায়গা নারী-পুরুষে গাদাগাদি। পুরো বাসের ভেতর যেন বস্তাবন্দি করে মানুষ ভরে নেওয়া হয়েছে। ছাদেও পা ফেলার জায়গা নেই। চারদিকে েেমাটা রশি বেঁধে রাখা হয়েছে। সেই রশিতে বাঁধা হয়ে নাড়ির টানে ছুটছেন মানুষ। ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবসে লঞ্চ ও রেলপথে রাজধানী থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।বুধবার সকালে ঢাকার সদরঘাটে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। কমলাপুর স্টেশনে ভিড় বাড়লেও ঈদের আগের থৈ থৈ চেহারা এখনো পায়নি।এবার ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন বাংলাদেশের মুসলমানরা। তিন দিনের ঈদের ছুটির আগে বুধবারই শেষ কর্ম দিবস। এ কারণে বিকেলে অফিস ছুটির পর ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। অবশ্য ঈদের আগে অনেকে ছুটি নেওয়ায় এবং পোশাক কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে কর্মীদের ছুটি দেওয়ায় মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ।ব্যাংক কর্মকর্তা আল আমিন বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চাঁদপুরের লঞ্চ ধরেছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসায় রাজধানীর বাইরে ছুটতে থাকা মানুষ আর যানবাহনের চাপে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকা গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের চিত্র উল্টো। সেখানে ফেরিগুলোই বরং গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।
শুক্রবার ঈদ সামনে রেখে মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। বুধবার সকালে ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বেড়েছে। ফলে সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় থেমে থেমে যানজটে পড়ছে ঈদযাত্রার যানবাহন। সদরঘাট টার্মিনালে একগাল হেসে তিনি ক বলেন, দুই দিন সরকারি ছুটি বাদ গেল, একদিন অগ্রিম ছুটি নিতে বাড়ি যাচ্ছি। বেসরকারি হাসপাতালের চাকুরে মাহমুদুল হাসান ঈদ করতে যাচ্ছেন বরিশালে। তিনিও একদিন বাড়তি ছুটি নিয়েছেন বলে জানালেন।বিআইডবি¬উটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) সৈয়দ মাহফুজুর রহমান বলেন, বুধবার ভোরে খুব ভিড় ছিল। তবে ১০টার দিকে ভিড় কিছুটা কমে আসে। বিকেলের দিকে আবার বাড়ব্। তখন বহু মানুষ ঢাকা ছাড়বে।সকাল ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ২০টি লঞ্চ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সারাদিনে গেছে ১১০টি লঞ্চ।যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে নৌপুলিশ টার্মিনালে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে। হাত মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানানো হচ্ছে কোন জেলার লঞ্চ কোন পন্টুনে।
নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সদরঘাটে মোট ১৩টি পন্টুন। যাত্রীরা তাদের লঞ্চ কোথায় বুঝতে না পেরে এক পন্টুনে এসে ভিড় করে। নৌ পুলিশের শতাধিক সদস্য পর্যায়ক্রমে সদরঘাটে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।সকালে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়। তবে কিছু যাত্রীকে ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে চড়ে রওনা হতে দেখা যায় বিমানবন্দর ওেস্টশনে। রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা দেরি করলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত আরও ১৯টি ট্রেন মোটামুটি ঠিক সময়েই কমলাপুর ছেড়ে গেছে। স্টেশন মাস্টার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অতিরিক্ত চাপের কারণে একটি ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে।যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালের ভাগে মোটামুটি স্বস্তি নিয়েই ট্রেনে চড়ে যাত্রা শুরু করতে পেরেছেন তারা।রাজধানী ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের সব বাসের ভাড়া হঠাৎ দ্বিগুণ-তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বুধবার দুপুরের পর থেকে শুরু হয়েছে এমন তুঘলকি কাণ্ড। লোকাল বাসগুলো বনে গেছে সিটিং বাসে। এতে বাসে উঠতে না পেরে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও বলেন, হঠাৎ দ্বিগুণ ভাড়া আদায় মেনে নেওয়া যায় না। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।শাহবাগে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা পরিবহন, দিশারি পরিবহন, সেফটি, ইটিসি, ইউনাইটেড, নিউ ভিশন, শিখর, শেকড়, বিহঙ্গ, বিকল্প পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কেবল স্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছে গাবতলী থেকে আসা ৭ ও ৮ নম্বর বাসগুলো।ঢাকা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা; দিশারি, সেফটি, নিউ ভিশন, শিখর, ইউনাইটেড ও বিকল্প পরিবহন ২২ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা; আর ইটিসি ২২ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা আদায় করছে।দিশারী পরিবহনের যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঈদির সময় বেশি নিত পারে, কিন্তু এত বেশি কেমনে হয়? ভাড়া কম দিতি গেছি কয় সিটিং করেছি টাকা বেশি লাগবো। রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ছেড়ে আসা ইটিসি পরিবহনের যাত্রী আবদুল জব্বার বলেন, ২২ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নিছে। হঠাৎ করে মনে হয়—দেশটা মগের মুল¬ুক হয়ে গেছে।জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, কোনো পরিবহন যদি এভাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে, তাহলে যাত্রীদের অনুরোধ করব নিকটস্থ ট্রাফিক পুলিশকে জানান।এদিকে এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহন (৩ নম্বর)সহ কিছু লোকাল বাস হঠাৎ করে সিটিং করায় ঢাকার অভ্যন্তরের যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। বিশেষ করে নারী যাত্রীরা। জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা মনোয়ারা বেগম নামে একজন যাত্রীর ভাষ্য, ‘বুঝতিছি না এত কম বাস কেন। দেখেন সবগুলো বাসের দরজা আটকানো।’ আলী হোসেন নামের আরেক জন যাত্রী বলেন, ‘এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, কোনো বাসই পাইতেছি না।’ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী কোনো ট্রাকও খালি আসছে না। ভাড়া না পাওয়ায় ট্রাকগুলোকে খালি আসতে হচ্ছে না। ঘরমুখো মানুষের স্রোতে ট্রাকের বডিগুলো মানুষেই ভরে যাচ্ছে। তবে ঘরমুখো এই মানুষগুলোর জন্য বৃষ্টি আরেক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রশি বাঁধা হয়ে ও পলিথিনে মুড়িয়ে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষগুলোকে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।একইচিত্র ট্রেনেও। ভেতরে কোনো আসন ফাঁকা নেই। ছাদেও মানুষের ঠাসাঠাসি। ট্রেনের ছাদের দু’পাশ ও ইঞ্জিনের চারদিকে কেবলই ঘরমুখো মানুষ আর মানুষ। তাই বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ মানুষ বহনে সক্ষম-এমন সব যানবাহনেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে এভাবেই তারা নাড়ির টানে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছেন। স্বাভাবিক জীবন নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কি-না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। তবু বাড়ি ফেরা চাই তাদের। কেননা ঈদের আনন্দ মিলেমিশে ভাগাভাগি করে উপভোগ করতেই এতোসব আয়োজন।
সদরঘাট: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন যাত্রীরা। লঞ্চের সিঁড়ি, কেবিনের বারান্দা কিংবা ছাদ, যেখানেই একটু স্থান সেখানেই আসন বা বিছানা পেতে বসে পড়েছেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ। যেকোনো মূল্যেই তারা ফিরতে চান পরিবার-পরিজনের কাছে।বুধবার দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা লঞ্চে উঠে যে যার মতো স্থান করে নিচ্ছেন। গল্প-গুজব করে সময় পার করছেন। কেউ বা আবার সময় পার করতে বসে পড়েছেন তাস বা লুডু খেলার কোর্ট নিয়ে। সঙ্গে রেখেছেন শুকনা খাবার। গল্প ও খেলার ফাঁকে চিবাচ্ছেন চানাচুর কিংবা মুড়ি।দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন ১১ লঞ্চের সিঁড়িতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিছানা পেতে বসেছেন সৈয়দ মো. নান্নু। তিনি জানালেন, সকাল ৭টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে লঞ্চে উঠেছেন। বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে একমাত্র মেয়ে আফসানা আক্তার মীম ও স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দিয়েছেন।বরিশালগামী পারাবাত ১০ লঞ্চের ডেকে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য যাত্রী গাদাগাদি করে শুয়ে-বসে আছেন। কেউ বসে তাস খেলে সময় পার করছেন, কেউ খেলছেন লুডু। সবারই চোখে-মুখে খুশির আমেজ। যেভাবেই হোক ঈদে বাড়িতে ফিরতে পারবেন এতেই সন্তুষ্ট সবাই।লঞ্চের ছাদে ওঠার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানতে রাজি নন ঘরমুখো এসব মানুষ। বৃষ্টি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর বাধা অতিক্রম করে অনেকেই উঠেছেন ছাদে। তাদের নিচে নামাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের।দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতকারী প্রিন্স সোহাগ, প্রিন্স অব হাসান-হোসেন ১ ও অভিযান ৫ লঞ্চে দেখা গেলো যাত্রীদের ছাদে চড়ে যাওয়ার দৃশ্য। তখনও টার্মিনাল থেকে ভেসে আসছে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে না ওঠার অনুরোধ।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবি¬টিসি) টার্মিনাল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে টার্মিনাল ছেড়ে গিয়েছে ২৬টি লঞ্চ আর ঘাটে ভিড়েছে ৬২টি লঞ্চ।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবি¬উটিএ) যুগ্ম-পরিচালক (ট্রাফিক ব্যাবস্থাপনা) জয়নাল আবেদীন বলেন, সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তবে মূল চাপটা পড়বে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর)। তিনি বলেন, সেদিন পোশাক কারখানার কর্মীরা যেতে শুরু করবেন। যাত্রীদের ঈদে বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
কমলাপুর :বুধবার সরকারি ছুটি শেষ। নাড়ির টানে এখন বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেনের সিডিউলে বিপর্যয় ঘটে। ফলে কমলাপুর প¬াটফর্ম জনস্রোতে রুপ নেয়। বৈরী আবহাওয়া আর অধিক যাত্রী উঠা নামার কারণে বুধবার ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়। অনেক যাত্রীকে ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের ছাদে চড়ে রওনা হচ্ছে। বিমানবন্দর স্টেশনেও দেখা গেছে ভিড়। যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও হিমশিম খেতে হয়েছে। রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা দেরি করলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত আরও ১৯টি ট্রেন মোটামুটি ঠিক সময়েই কমলাপুর ছেড়ে গেছে। স্টেশন মাস্টার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অতিরিক্ত চাপের কারণে একটি ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে। সামনে কোনো সিডিউল বিপর্যয় হবে না। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালের ভাগে মোটামুটি স্বস্তি নিয়েই ট্রেনে চড়ে যাত্রা শুরু করতে পেরেছেন তারা। দুপুরে পর থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে।
এদিকে বুধবার থেকে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ তদবির ছাড়া ফিরতি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আজ দেয়া হচ্ছে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। কাল বৃহস্পতিবার দেয়া হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের টিকিট।
ঈদের দিন বন্ধ থাকবে। ২৬ সেপ্টেম্বর হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের, ২৭ সেপ্টেম্বর ৩০ সেপ্টেম্বরের ও ২৮ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে আগামী ১ অক্টোবরের টিকিট।এদিকে, ঈদ ঘনিয়ে আসায় রাজধানীর বাইরে ছুটতে থাকা মানুষ আর যানবাহনের চাপে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে।মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকা গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেলেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের চিত্র উল্টো। সেখানে ফেরিগুলোই বরং গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।শুক্রবার ঈদ সামনে রেখে মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। বুধবার সকালে ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বেড়েছে। ফলে সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় থেমে থেমে যানজটে পড়ছে ঈদযাত্রার যানবাহন।নাওজোর মহাসড়ক ফাড়ির উপ-পরিদর্শক রাহার আলম জানান, ভোগড়া বাইপাস মোড় ও চান্দনা চৌরাস্তার পশ্চিমাংশে গাড়ির জটলা রয়েছে। যাত্রীর অপেক্ষায় বাসগুলো রাস্তার অনেকটা জুড়ে থেমে থাকায় জট তৈরি হচ্ছে।চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের যানজট কমাতে ওই এলাকায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সেখানে কর্তব্যরত শ্রীপুর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে টঙ্গীর স্টেশন রোডের পাশে ও আমতলী এলাকায় পশুর হাট বসায় ঘোড়াশাল-টঙ্গী এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ির সারি বড় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী।গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র এএসপি সাখাওয়াত হোসেন কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায়ও গাড়ির চাপ থাকার তথ্য দিয়েছেন।দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনে ধীরগতি দেখা গেছে বলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. কামরুজ্জামান জানান।তিনি বলেন, দুপুরে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে জটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।এদিকে ঢাকা থেকে দক্ষিণ জনপদে যাওয়া আসার সময় পদ্মা পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ পথ পাটুরিয়া ঘাটে দুপুরে পাঁচশর বেশি যানবাহনকে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। যানবাহনের সারি ঘাট এলাকা ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে উথলী-পাটুরিয়া সড়কের নবগ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার জুড়ে।বিআইডবি¬উটিসির আরিচা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাটুরিয়া- দৌলতদিয়ায় নয়টি রো রো, তিনটি কে-টাইপ ও ছয়টি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। খান জাহান আলী নামের আরেকটি ফেরি রাতে বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিগুলো চলাচলে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগছে।এই কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল¬ুর রহমান জানান, বেলা ১টার সময়ও পাটুরিয়ায় দেড় শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ, প্রায় সমান সংখ্যক ছোট গাড়ি ও দুই শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।ফেরির তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে পদ্মা পারাপারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ঘাট মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় সকাল থেকে যানবাহনের তেমন কোনো চাপ দেখা যায়নি। অন্যান্য বছর ঈদের এ সময়ে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলেও এবার পরিস্থিতি উল্টো। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, নাব্য সঙ্কট ও ড্রেজিংয়ের কারণে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি চলাচল প্রায় ৩২ দিন বন্ধ থাকায় অনেকেই এবার এই পথ এড়িয়ে অন্য দিক দিয়ে পদ্মা পার হচ্ছেন। এ কারণে শিমুলিয়ায় চাপ এবার কম। তবে ড্রেজিংয়ের পর এ ঘাটের ১৬টি ফেরিই নিয়মিত স্বল্প সময়ে যাতায়াত করায় জটিলতা অনেক কমে এসেছে বলে মনে করেন বিআইডবি¬উটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক এসএম আশিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘাটে এখন কোন জট নেই। ফেরিগুলো ঘাটে নোঙর করে আছে গাড়ির অপেক্ষায়। যখন কোনো গাড়ি আসছে, সাথে সাথে ফেরি পেয়ে যাচ্ছে।শিমুলিয়া ঘাটের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, যাত্রীর তেমন চাপ নেই। অন্য বছরের তুলনায় লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে কম যাত্রী নিয়ে। স্পিডবোটেও যাত্রী কম। বৃহস্পতিবার ঈদের আগের দিন চাপ বাড়তে পারে।