দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য এবারের নির্ধারিত দাম ঘোষণা করেছে চামড়াসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের তিনটি সংগঠন। তবে এবারও নির্ধারিত দাম গত বারের চেয়ে কম।ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এবার ঢাকায় কোরবানি হওয়া গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৫০-৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া ৪০-৪৫ টাকা। আর প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা, বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকা। চামড়াসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সংগঠন তিনটি বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে কোরবানির পশুর চামড়ার এই দাম ঘোষণা করে।সংগঠন তিনটি হলো—বাংলাদেশ প্রস্তুত চামড়া, চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএলএলএফইএ), বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।এর মধ্যে প্রথম দুটি ট্যানারি মালিকদের এবং অন্যটি কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন।এই তিন সংগঠন গত বছরও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিল। গত বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০-৭৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৬০-৬৫ টাকা। খাসির চামড়া ৩০-৩৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ২৫-৩০ টাকা। এবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পেছনে বিশ্ববাজারে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার অজুহাত দেওয়া হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করতে চাননি তাঁরা। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে তা করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চামড়ার চাহিদার ৪৮ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে।গত বছর কোরবানিতে ৭০-৭৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ট্যানারির মালিকেরা।ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের মূল্য নির্ধারণ করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা; পশু ও আকারভেদে এবার দাম ঠিক করা গয়েছে গতবারের চেয়েও কম।ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় টওতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনবেন ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা।এছাড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হবে।বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদবলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের নেতা আফতাব খান বলেন, বলেন, গত বছরের অনেক চামড়া এখনও রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও পশুর চামড়ার দাম অপেক্ষাকৃত কমেছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।গতবছর সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণের বিষয়টি ব্যবসায়ীদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর আগের বছরের তুলনায় কম দাম ঠিক করেন তারা। আর এবার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা গতবারের চেয়েও কম। গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা; খাসির লবণযুক্ত চামড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকায় সংগ্রহ করা হয়।
২০১৩ সালে সরকার নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৮৫-৯০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে তা কেনা হয় ৭৫-৮০ টাকায়।ওই সময় প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। বকরির চামড়া ৪০-৪৫ টাকা এবং মহিষের চামড়া ৪০-৪৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।পশুর চামড়া পচনশীল হওয়ায় এর দাম নির্ধারণ নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করার কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আফতাব।প্রতিবছর দাম কমতে থাকায় পাশের দেশে পশুর চামড়া পাচারের শঙ্কাও দেখছেন না এ ট্যানারি ব্যবসায়ী।সরকারি নির্দেশনা মেনে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশের দেশেও চামড়া যায় না। ঢাকা থেকে সীমান্তের দূরত্ব অনেক; পচনশীল এ জিনিস সেখানে নেওয়া যায় না।ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।