Jatri220150720200453

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী শুক্রবার। এ উপলক্ষে নগরীর লাখ লাখ মানুষ ঈদের আনন্দ আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে এখন ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। এতে রাজধানীর রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে আসন না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে এসব যানবাহনের ছাদে উঠে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।তবে রাস্তার দুর্ভোগ যেন কিছুতেই ঘরমুখো মানুষদের পিছু ছাড়ছে না। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মহাসড়কে মহাদুর্ভোগে পড়ছেন তারা।

অতিমাত্রায় বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের বহু স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মাইলের পর মাইল যানজট লেগেই আছে। সব মিলিয়ে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্গতির যেন শেষ নেই।তার উপর এবারের ঈদের ছুটি (আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি) সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে পড়ে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষগুলো পড়েছে মহা সঙ্কটে।ছুটি কমে যাওয়ার কারণে ও যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে আরো দু’তিন দিন আগে থেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। কেউ পরিবার-পরিজন আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন, কেউ আবার নিজের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার ঢাকা থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে উঠলেই গাড়ির চাকা যেন আর চলে না। এ অবস্থা প্রায় প্রতিটি মহাসড়কেরই। সড়কের কিছু অংশ ভালো থাকলেও অধিকাংশই ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা থাকায় যানজট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ঘরমুখো যাত্রীদের ৫/৬ ঘন্টার পথ ১২, ১৪ এমনকি ১৬ ঘন্টায় অতিক্রম করতে হচ্ছে। টানা বর্ষণ মহাসড়কগুলোর বেহাল অবস্থার একটি কারণ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পশুবাহী গাড়ির কারণে রাস্তায় ধীর গতিতে গাড়ি চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। টানা বর্ষণের কারণে অনেক রাস্তা ছয়বারও মেরামত করতে হয়েছে। বর্তমানে রাস্তা ঠিক আছে, রাস্তার জন্য কোথাও যানজট হচ্ছে না।

পশুবাহী গাড়ির জন্য এই মুহূর্তে কিছু জায়গায় গাড়ি স্লো গতিতে যাচ্ছে। গাড়ি স্লো থাকলেও সেটা ১০ মিনিট পর থাকছে না। এটাকে যানজট বলা যাবে না। বাস্তবে কোথাও যানজট নেই। তারপরও যেখানেই গাড়ির গতি স্লো হচ্ছে, সেখানেই তা নিরসনে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট দূর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে তারা কার্পণ্য করেননি।কাদের বলেন, রাস্তায় প্রায়সই পশুবাহী গাড়ি বিকল হয়ে যাচ্ছে, এ জন্যেও কিছুটা যানজট হয়। যেসব জায়গায় এ ধরণের ঘটনা ঘটছে, সেসব স্থানের রাস্তাও দেখা যায় তেমন প্রশস্ত না। তবে সব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সকলকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে।স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। গতকাল সোমবার বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে—সর্বত্রই ছিল ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। তবে সড়কপথে ঢাকা থেকে বের হতেই লেগেছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। যানজটের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার কুর্ণী থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।সড়কপথের তুলনায় রেলপথ ছিল স্বস্তির। কমলাপুর স্টেশন থেকে মঙ্গলবার বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। নৌপথও স্বাভাবিক আছে।

মঙ্গলবার সকালের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি খানিকটা ভোগান্তির কারণ হলেও ঘরে ফেরা মানুষদের দুর্ভোগে ফেলেছে মূলত যানজট। ঢাকা থেকে শুভ বসুন্ধরা পরিবহনে লালমনিরহাট যাচ্ছিলেন গোলাম রাব্বানি। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে আটটায় বৃষ্টির মধ্যে বাস কাউন্টারে যান তিনি। বাস ছেড়েছে ১০টার দিকে। বাসটি টেকনিক্যাল মোড় থেকে ঘুরে গাবতলী পার হতেই দুই ঘণ্টা লেগেছে। এরপর তিনি সাভার ও টাঙ্গাইল এলাকায় লম্বা যানজটে পড়েন। বিকেল পাঁচটায় মুঠোফোনে তিনি জানান, তখন বগুড়া পর্যন্ত পৌঁছেছেন।আগামী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক ও লরি চলবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পশুবাহী ট্রাক, পোশাকপণ্য, পচনশীল পণ্য ও ওষুধবাহী ট্রাক এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।মহাসড়কে ট্রাক বিকল, দুর্ভোগ যাত্রীদের: গরুবাহী ট্রাকের সংখ্যা ও ঘরমুখী মানুষের বাড়ি ফেরার চাপে মহাসড়কে যানজট বেড়েছে।

এর মধ্যে রোববার গভীর রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় গরুবোঝাই একটি ট্রাক বিকল হয়। ট্রাকটি পরে পুলিশ সরিয়ে নিলেও ততক্ষণে যানজট লাগতে শুরু করে ভোর চারটার দিকে টাঙ্গাইলের করটিয়া বাইপাসে ঢাকাগামী গরুবোঝাই আরেকটি ট্রাক বিকল হলে যানজট তীব্র হয়। একপর্যায়ে তা এলেঙ্গা থেকে মির্জাপুরের শুভুল্যা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ েেরকার দিয়ে ওই ট্রাকটি সরিয়ে নিলে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তবে যানবাহনের চাপ থাকায় মির্জাপুরের কুর্ণী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে।ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের চালক মো. মতুর্জা বলেন, নীলফামারীর দেবীধস থেকে সোমবার রাত সাড় ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ভোরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু টাঙ্গাইলের পর যানজটে পড়েন, সকাল স ড়ে নয়টার দিকে তিনি কেবল মির্জাপুর পার হন।

????????????????????????????????????

গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরুর হাটে যাচ্ছিলেন পিকআপচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চন্দ্রা এলাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিলেন।মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতু রেল সংযোগ সড়কে মির্জাপুরের ধেরুয়া রেল ক্রসিংয়ে উড়ালসেতু নেই। ওই এলাকায় প্রতিদিন উভয় পথে ১৪টি ট্রেন ২৮ বার যাওয়া-আসা করে। প্রতিটি ট্রেনের জন্য গড়ে সাত-আট মিনিট করে মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এটাও যানজটের একটা কারণ। মির্জাপুরের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে মহাসড়কে যানবাহন খুব বেশি গতিতে চলাচল করতে পারে না। এ ছাড়া পশুবাহী ট্রাকের ও ঘরমুখী যাত্রী বহনকারী যানবাহনের চাপ তো রয়েছেই। তিনি বলেন, পুলিশ যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল রাখতে নিরলস পরিম করে যাচ্ছে। রেলস্টেশন: ছুটি শুরুর আগেই ঢাকাবাসীর ঈদযাত্রা শুরু হলেও কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের চাপ এখনো ততটা বাড়েনি।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনগুলো মোটামুটি ঠিক সময়েই স্টেশন ছেড়ে গেছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত ২১টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। যাত্রীরা নির্বিঘেœ গন্তব্যে যেতে পারছেন।ঈদের ছুটি শুরুর আগে বুধবার থেকেই যাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন সিতাংশু। ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ বিল্লাল হোসেন বলেন, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস দুপুর ১২টায় জেনেও দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি আগেই স্টেশনে চলে এসেছেন। পথে তেমন যানজটে পড়তে হয়নি। ফলে একটু আগেভাগেই স্টেশনে পৌঁছে গেছি।তবে নির্ধারিত সময়ের মাত্র পাঁচ মিনিট পর স্টেশনে ঢুকে সকাল ১০টার কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যবসায়ী আহমেদ গোলাপ।পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে স্টেশনে কিছুক্ষণ উদ্বিগ্ন চেহারায় ঘোরাঘুরির পর ১১টায় চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলতে দেখা গেছে গোলাপকে। তিনি জানান, টিকিটে ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ১০টা লেখা থাকলেও বুঝতে ভুল করেছিলেন তারা। আর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের বাসা থেকে কমলাপুরে আসতে মতিঝিলে যানজটেও খানিকটা সময় নষ্ট হয়েছে।চট্টলা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী সফর বাতিল করেছেন। তার টিকিটগুলো পেয়ে স্বস্তি পেয়েছি, বলেন গোলাপের আত্মীয় আবুল হোসেন।

মঙ্গলবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে আসছে। প্রবেশপথেই র্যা বের বুথ। ভেতরে স্কাউটের একটি বুথ। তারা লোকজনকে বিভিন্ন ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম দেখিয়ে দিচ্ছে। কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের সঙ্গে। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তাঁর ট্রেন মহানগর প্রভাতীর ছাড়ার কথা। কিন্তু সেই ট্রেন ছেড়েছে ৯টা ২০ মিনিটে। তাতে কোনো আক্ষেপ নেই সাইদুলের। তিনি বলেন, এই যে বাড়ি ফিরতে পারছেন, সবার সঙ্গে ঈদ করবেন, সেটাই বড় আনন্দ।তবে কমলাপুরের স্টেশনমাস্টার সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। ২০-২৫ মিনিট দেরি হলেও সেটিকে দেরি বলা যাবে না। চট্টগ্রামে যাওয়ার ট্রেনের দেরি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ট্রেনগুলো একটু দেরি করেছে।ট্রেনের আগাম টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে দেখা গেল লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিচ্ছে।

এদের বেশির ভাগই দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কিনছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে যাত্রীদের ফেরত যাত্রার ট্রেনের টিকেট আগামীকাল বুধবার থেকে অগ্রিম বিক্রি শুরু হবে। রেলওয়ে সূত্র এ কথা জানায়।ঈদ শেষে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর যাত্রার টিকেট ২৩ সেপ্টেম্বর, ২৮ সেপ্টেম্বর যাত্রার টিকেট ২৪ সেপ্টেম্বর, ২৯ সেপ্টেম্বর যাত্রার টিকেট ২৬ সেপ্টেম্বর, ৩০ সেপ্টেম্বর যাত্রার টিকেট ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর যাত্রার টিকেট ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। একজন যাত্রীকে সর্বাধিক ৪টি টিকেট দেয়া হবে এবং বিক্রিত টিকেট ফেরত নেয়া হবে না। উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদের দিন বাংলাদেশ রেলওয়ে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে মুসল্লীদের ঈদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে সোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করবে।

সদরঘাট: ঈদের ছুটি শুরু হতে আরও একদিন বাকি থাকলেও যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে ঢাকার সদরঘাটে। বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) মো. সোলায়মান ক বলেন, অনেকেই আগাম ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ঘাটে যাত্রীর চাপ ছিল অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নৌবন্দরগুলোতে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হলেও নৌযান চলাচলে কোনো বাধা নেই বলে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (পরিবহন) মো. শরিফুল হক জানান।এবার ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন বাংলাদেশের মুসলমানরা। তিন দিনের ঈদের ছুটির মধ্যে দুই দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় অনেকে আগে বা পরে ছুটি নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছেন।

জসিম উদ্দিন টিটু নামের এক যাত্রী জানালেন, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি যাচ্ছেন চাঁদপুরে।বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই রওয়ানা দিলাম। গতকালই যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় রওয়ানা হতে পারিনি। টিটু অভিযোগ করেন, স্বাভাবিক সময়ে চাঁদপুরের লঞ্চগুলো ডাবল কেবিনের ভাড়া নেয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এখন তার চেয়ে এক থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম হাসান লঞ্চের মাস্টার আবু তাহের বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া আরও বেশি। লঞ্চগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে অন্য সময় নির্ধারিত হারের চেয়ে কম ভাড়া নেওয়া হয়। টিআই মো. সোলায়মান জানান, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে নয়টি লঞ্চ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আগের দিন সোমবার সারাদিনে গেছে ৮৫টি লঞ্চ। ঈদ উপলক্ষে সোমবার থেকে বিশেষ স্টিমার সার্ভিস চালু করেছে বিআইডব্লিউটিসি, যা চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সন্ধ্যা ৬টায় এই বিশেষ সার্ভিসের একটি স্টিমার যাবে হুলারহাটে; সন্ধ্যা ৭টায় ছাড়বে মোড়লগঞ্জের স্টিমার।বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ শাহ বরকত উল্লাহ বলেন, প্রতিদিন দুটি স্টিমার সদরঘাট ছেড়ে যাবে। চাঁদপুরে একটি স্টিমার ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হযেছে; প্রয়োজনে চালানো হবে। সোমবার ‘বিশেষ সেবার’ প্রথম দিন তেমন যাত্রী পাওয়া যায়নি জানিয়ে বরকত উল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার থেকে স্টিমারেও যাত্রী পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করছেন।ভিড় বাড়ছে নৌপথেও: মঙ্গলবার সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড়।

সদরঘাট টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের চাপের কারণে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, রায় সাহেব বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সকাল থেকেই ছিল তীব্র যানজট। এই যানজট ঠেলে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সদরঘাটে পৌঁছাতে পেরে খুশি ব্যবসায়ী সৈয়দ রায়হান আলী। এমভি কর্ণফুলী লঞ্চে ভোলায় যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামে ঈদ করবেন। আজ মঙ্গলবার গ্রামের বাজার থেকে কোরবানির গরু কিনবেন তিনি।ঢাকা থেকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গোলাম রাব্বানী। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে তাঁর গাড়ি ছাড়ার কথা ছিল সকাল আটটায়। নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে রাব্বানী যখন তাঁর গন্তব্যে পৌঁছলেন তখন রাত তিনটা। অর্থাৎ তাঁর সময় লেগেছে ১৯ ঘণ্টা। অথচ ঈদের সময় বাসে এই পথ পাড়ি দিতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজটের কারণে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট লোকজন যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত তা ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি লাঘবে যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন যাত্রীরা। রাব্বানী বলেন, কল্যাণপুর কাউন্টারে গিয়ে দেখি বাস নেই। আটটার বাস কাউন্টারে এল সাড়ে ১০টায়। টেকনিক্যাল মোড় থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতেই সময় লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টা। এরপরে সাভার, চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত গাড়ি চলেছে ধীরে ধীরে। বগুড়া পৌঁছাতে সন্ধ্যা ছয়টা। এরপর ভাঙা সড়কে কখনো ধীরে কখনো যানজট পেরিয়ে বাসায় পৌঁছাতে হয়েছে।এবার মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকেই। সেদিন থেকে নিয়মিত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট। প্রতিবছরই ঈদের আগে মন্ত্রীরা ঘোষণা দেন ‘এবার মহাসড়কে যানজট হবে না’। এবারও তেমনই ঘোষণা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই মহাসড়কে উত্তরবঙ্গ গন্তব্যের গাড়িচালক মান্নান মিয়া বলেন, শোনেন, ওগো কামই হইলো টিভির সামনে কথা কওয়া। কামের কাম কিছুই অয় না।’ আরও কয়েকজন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত আছে।

চালকেরা বলেন, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে গাড়ি চলে ধীরগতিতে, এতে যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া কোরবানির ঈদে বাড়তি যানজট থাকার অন্যতম একটি কারণ মহাসড়কে পশুবোঝাই ট্রাকের চলাচল। ঢাকা রংপুরের নিয়মিত যাত্রী হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান বললেন, ঈদের আগে বারবার বলা হয় যানজট হবে না। এই সড়কে কেন যানজট হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে এর স্থায়ী সমাধান করার লোক কি সরকারে নেই? তাঁর মতো আরও কয়েজনের প্রশ্নটাও একই, কেন বারবার এই মহাসড়কে যানজট হচ্ছে। যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, ঈদের আগে ঢাকার বিভিন্ন ফিটনেসহীন বাস ও অব্যবহৃত বাসে করে মানুষ নিজ এলাকায় ফেরেন। ওই বাসের চালকরাও থাকেন অদক্ষ। ফলে দুর্ঘটনা বেশি হয় ওই বাসের মাধ্যমে। ওই বাসের চালকদের কেবল ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাস চালানোর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ পথে গাড়ি চালনার অভিজ্ঞতার সমান হয় না। আর এ জন্য দুর্ঘটনাও ঘটে তাঁদের মাধ্যমে। এমন মত দিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাও। কিন্তু এটি প্রতি ঈদেই হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজটের কারণে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষকে।

মঙ্গলবার দুপুরে পাটুরিয়া প্রান্তে শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ এবং অর্ধশত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।এছাড়া মঙ্গলবার থেকে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকায় পাটুরিয়ায় টার্মিনালে আড়াইশ এবং মহাসড়কের উথলী মোড় থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত দেড়শ মিলে মোট চারশ ট্রাক দীর্ঘ সারিতে রয়েছে।অপেক্ষায় থাকা এসব যানবাহনের যাত্রী, চালক ও সহকারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন।মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে এ রুটে সাত দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে।