দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদ ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে জাতীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগের সামনে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়ার কথা থাকলেও স্থান পরিবর্তন করে প্রথমে বেলা ১১টায় শহীদ মিনারে ও পরে শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক নিয়ন বলেন, পরীক্ষা বাতিল করা না হলে তাদের আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, আমরা শহীদ মিনার ও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়েছি। এখানেই বিক্ষোভ করব। মেডিকেল পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র ফাঁসের প্রতিবাদ ও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রয়োজনে ঈদের দিনও তারা রাজপথে অবস্থান নিবেন বলে জানান তিনি।
গত শুক্রবার সারাদেশে একযোগে ২৩টি কেন্দ্রে এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। তবে পরীক্ষা চলাকালেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে অভিযান চালিয়ে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে র্যাব। এর আগে একই ঘটনায় বুধবার রাজধানীর মহাখালী থেকে চিকিৎসকসহ চারজনকে আটক করেছিল র্যাব। এদিকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পরীক্ষার আগের রাতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনে কিছু নমুনা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। পরে পরীক্ষা বাতিল চেয়ে শনিবার দেশব্যাপী আন্দোলন করেন তারা। এ ছাড়া এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হলেও পরে তা খারিজ হয়ে যায়।এর মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতর তড়িঘড়ি করে ফলাফল প্রকাশ করলে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে পুলিশ হামলা চালিয়ে তাদের মানববন্ধন পন্ড করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় চারজনকে। এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।অন্যদিকে, প্রশ্নপত্র ফাসের প্রতিবাদে ও পুনরায় মেডিকেল পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে খুলনা, সিলেট, ফরিদপুর ও রংপুরেও বিক্ষোভ করছে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষা বাতিলের এক দফা দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থীর স্লোগানে উচ্চকিত হয় নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজারের গুলজার চত্ত্বর। ব্যস্ত এই মোড়ে অবরোধের কারণে যান চলাচলে সমস্যা হলেও পুরো সড়কে অবরোধ নেই, উভয় পাশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা এলে শিক্ষার্থীরা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে সহযোগিতা করতে অনুরোধ জানান।মিফতা উদ্দিন নামের এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।চকবাজার থানার ওসি মো. আজিজ আহমদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। যান চলাচলে রাস্তার একটি অংশ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
গত শুক্রবার সরকারি- বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পর রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ফল ঘোষণা করেছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন।এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে’ জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে পরীক্ষার্থীরা। বিএনপিও পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টেও করা হয়।
তবে সোমবার রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে আদালতএছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামে সংগঠন।মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। একই সঙ্গে সদ্যঘোষিত অষ্টম পে-স্কেল বাতিলের দাবিও জানান তারা।এ সময় প্রশ্ন রেখে বক্তারা বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পরও পরীক্ষাটি বাতিল না করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে। দুর্নীতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হওয়া এসব শিক্ষার্থী যখন পড়াশুনা শেষ করে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হবে তখন তাদের সেবার মান কী হবে।
তারা আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর পরিশ্রম করেও মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। একদল দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষার্থী অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে, এ বিষয়টি খুবই লজ্জার।মানবন্ধন থেকে অবিলম্বে এ পরীক্ষা বাতিল করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনটির সভাপতি ডা. নাজমুন নাহার, সাধারণ সম্পাদক কাজী রকিবুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম কামরুজ্জামান, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বুলবুল, সমন্বয় সম্পাদক আমিরুল রসুল প্রমুখ।