DSC_1534

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। গ্রেফতারকৃতদের নাম মোঃ শফিকুল ইসলাম ওরফে সজল, মোঃ বুলু, ডাকাত চক্রের দলনেতা মোঃ ফয়সাল, মোঃ মাইনউদ্দিন ও মোঃ আসলাম। এদের মধ্যে মোঃ শফিকুল ইসলাম ওরফে সজল ও মোঃ বুলুকে নারায়নগঞ্জের সানারপাড় থেকে এবং মোঃ ফয়সাল, মোঃ মাইনউদ্দিন ও মোঃ আসলাম কে রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।এ সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে ডাকাতি সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ, ৩ টি চাপাতি, ছিনতাইকৃত ৩টি মাইক্রোবাস ও ১টি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত চক্রের সদস্যরা জানায়, তারা রাত্রিকালে পিকআপ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫/৬/১৫ ইং তারিখ রাত ০২.০৫ টায় দারুস সালাম থানা এলাকায় ১৫/১৬ জনের একটি ডাকাত দল  পিক আপ যোগে এসে লোহার রড, চাপাতি ও ছোরা দিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ৭১ টেলিভিশনের একটি সাদা রংয়ের নোয়া মাইক্রোবাস ঢাকা মেট্রো চ ৫৩-৫৬২০ সহ নগদ টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।একই কৌশলে ডাকাত দলের সদস্যরা গত ২৭/০৬/২০১৫ তারিখ শেরে বাংলা নগর থানার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস, গত ১৯/০৫/২০১৫ তারিখ কাফরুল থানার বিমান বন্দর এলাকা থেকে একটি নোয়া মাইক্রোবাস, গত ১৮/০৮/২০১৫ তারিখ আদাবর থানার বায়তুল আমান এলাকা থেকে ১টি মাইক্রোবাস ও মোবাইল সেট এবং গত ০২/০৫/২০১৫ তারিখ মতিঝিল থানা এলাকা থেকে ১টি মাইক্রোবাস মৃত্যু ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।

এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও দস্যুতা মামলা রুজু হয়। কিন্তু মূল আসামীদের সনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করা সম্ভব না হওয়ায় তারা একের পর এক ডাকাতি ও দস্যুতা সংঘটন করে আসছিল। এই ব্যাপারে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশেষায়িত টিম আসামীদের সনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, আদাবর থানায় সংঘটিত উপরোল্লেখিত ঘটনায় উক্ত থানায় মামলা রুজু হলে আদাবর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী সোহবারকে গ্রেফতারসহ ১টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে। সোহরাবকে গোয়েন্দা পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা-পশ্চিম থানার গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মঞ্জুর হোসেন আলীকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। সোহরাব ও মঞ্জুরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ নারায়নগঞ্জের সানারপাড় এলাকা হতে আসামী মোঃ শফিকুল ইসলাম ওরফে সজল ও মোঃ বুলুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরাবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্যাদি পাওয়া যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায়, কুখ্যাত ডাকাত ফয়সাল ও টিটুর নেতৃত্বে সহযোগী আসামী আসলাম, মাইনউদ্দিন, সোহরাব, কোরবান আলী, শুকুর আলী, নাহিদ, সেলিম, রবিন, আবদুল্লাহ, সোহেল, মিজান সহ আরো কিছু উঠতি যুবক পিক আপ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে লোহার রড, চাপাতি ও ছোরা দিয়ে ড্রাইভারকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইতোমধ্যে অনেক মাইক্রোবাস, পিকআপ ও প্রাইভেট কার ছিনিয়ে নিয়েছে। এসব ছিনতাইকৃত গাড়ি ডাকাত দলের সদস্যরা আসামী মোঃ শফিকুল ইসলাম ওরফে সজল এর নিকট হস্তান্তর করে। সজল গাড়িতে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট বানানোসহ জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রির জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতো। আর একাজে তাকে সহায়তা করতো আসামী মোঃ বুলু। এরপর সজল গাড়িগুলো বিক্রির জন্য আসামী মোঃ মঞ্জুর হোসেন আলীর নিকট হস্তান্তর করলে, মঞ্জুর গাড়ির ক্রেতা ঠিক করে। গাড়ি বিক্রয়ের সময় কখনও শফিকুল ইসলাম ওরফে সজল, কখনও মোঃ বুলু আবার কখনওবা মঞ্জুর হোসেন আলী মালিক সেজে গাড়িগুলো বিক্রয়ের জন্য সাধারণ ক্রেতাকে প্রস্তাব করতো।

গোয়েন্দা পুলিশ ডাকাতি কাজে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারসহ লুন্ঠিত গাড়িসমূহ উদ্ধারের জন্য তৎপর হয়। আসামীদের দেয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার তারাবো এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কার, ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ১টি মাইক্রোবাস, কদমতলী থানা এলাকা থেকে গত ২১/০৯/২০১৫ তারিখ রাত ০৩.২৫ টায় ডাকাত চক্রের দলনেতা মোঃ ফয়সল, সহযোগী মোঃ মাইনুদ্দিন ও মোঃ আসলামকে গ্রেফতারসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ ও ৩ টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।পরবর্তী সময়ে সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকা থেকে ও নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে যথাক্রমে ২টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের ডিসি, ডিবি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান এর নির্দেশনায়, এডিসি আশিকুর রহমান, পিপিএম এর সাার্বিক তত্ত্বাবধানে, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাদত হোসেন সুমার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।