দৈনিকবার্তা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ২ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাসভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রনির্মাণের প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পেয়েছে, যে কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘আশুগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (পূর্ব)’ প্রকল্প এই অনুমোদন পায়। এদিকে, কুড়িল-পূর্বাচল এলাকায় বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজটি যত কঠিনই হোক সঙ্গে তিনি থাকবেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছেন, যারা এটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন তারা যেন সাহস নিয়ে কাজটি করেন। সঙ্গে কেউ না থাকলেও মনে রাখবেন আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে আছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পার্শ্বে (কুড়িল হতে বালু নদী পর্য়ন্ত) ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।কুড়িল পূর্বাচল এলাকায় বেদখল হওয়া জমির তালিকা চেয়ে ঢাকার ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে বিষয়টি সিএস খতিয়ান দেখে করার নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ভুমি দস্যুদের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যখন টাকার নেশা পেয়ে যায় তখন তারা আর অন্যদিকে তাকায় না। তারা কতো মানুষের জমি দখল করেছে। কতো মানুষকে কাঁদিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন উর্ধতন কর্মকর্তা প্রকল্পটি বাস্তাবায়নে কঠিন হতে হবে জানালে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, যারা এটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন তারা যেন সাহস নিয়ে কাজটি করেন। তাদের সঙ্গে কেউ না থাকলেও মনে রাখবেন আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আপনাদের সঙ্গে আছেন। বৈঠকে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘আজকের ৩/৪টি পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে এ প্রকল্প উচ্চাভিলাসী, অবাস্তব ও অহেতুক। এ খাল ১০০ নয় ৩০০ ফুট করার কথা ছিল। এসব নালা জমি ছিল। আমি স্পিডবোট নিয়েও ঘুরেছি।’বৈঠকে প্রধামন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেক রাস্তার পাশে খাল ছিল। তা ভরাট করার কারণেই এখন পানি জমছে।এসময় তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, নিকুঞ্জে ১০০ প্লটের একটা প্রকল্প বাতিল করে জলাধার করা হয়েছে। যে কারণে এখন বিমানবন্দরের রানওয়ে বৃষ্টিতে ডুবে না।একনেকের বৈঠকের পর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিডেট (এপিএসসিএল) ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৩৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা পাওয়া যাবে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। ৪২০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরকার যোগাবে, আর সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে আসবে ১৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।পরিকল্পনা বলেন, প্রকল্পের আওতায় উচ্চ জ্বালানি দক্ষতাসম্পন্ন গ্যাস টারবাইট, স্টিম টারবাইট, স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার, গ্যাস ইন্সুলেটেড সুইস গিয়ার সিস্টেম ও কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রতিস্থাপন করা হবে।এটি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ঢাকা শহরেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা ও এ খাতের স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে। এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাসের দক্ষ ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবারের একনেক সভায় আরো ৫টি প্রকল্প দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভায় ৮ হাজার ৮২৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন থেকে আসবে ৬ হাজার ৩১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ২ হাজার ৩৫৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন হবে ১৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ৩৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, কক্সবাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ- ১ম সংশোধিত’, ৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন- ২য় সংশোধিত’, ৪৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার শিবপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ, ৫ হাজার ৫৩০ কোটি ১৩ টাকা ব্যয়ে ‘কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোড়ের উভয় পাশ্বে (কুড়িল হতে বালু নদী পযন্ত) ১০০ ফুট খনন ও উন্নয়ন’ ও ২০৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ-মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প- ৩য় পর্যায় (শিলখালী থেকে টেকনাফ)।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা কমিশনের সচিব সফিকুল আজম।