দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ঈদের বাকি আর তিন দিন।তবে গরু কেনা- বেচা জমেনি। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলীতে এখন গরু বেশি, ক্রেতা কম। হাট ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আসছে, কিন্তু গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ক্রেতারা হাটে আসেনি।অব্যবস্থাপনা ও বেপারিদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেন গাবতলী হাটের পরিচালক রাকিব ইমরান। তিনি বলেন, আমাদের হাট স্থায়ী অংশে ছাউনি আছে। কিন্তু হাট অনেক এলাকজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। এত বিশাল এলাকাজুড়ে ত্রিপলের ছাউনি দেয়া সম্ভব নয়। তার দাবি হাটে অনেক গরু এসেছে। ক্রেতা নেই। কিছু গরু বিক্রি হয়ে গেলে জায়গা খালি হবে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে আমাদের এই সর্বনাশ হয়েছে। বেপারিরাও কষ্ট পাচ্ছে। বেপারিদের থাকা-খাওয়া সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাটে খাবারের অস্থায়ী দোকান বসেছে প্রচুর। তাই বেপারি ও গরুর খাবারের সংকট নেই। থাকার সংকট কিছুটা আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমদ বলেন, হাটে নিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের বিষয়ে দেখার জন্য কর্পোরেশনের মনিটরিং টিম ও মোবাইল কোর্ট আছে। কিন্তু পুলিশের অসহযোগিতায় মোবাইল কোর্টগুলো কার্যকর করা যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১০টি হাটের অব্যবস্থাপনা দেখার জন্য মোবাইল কোর্টগুলো কাজ করছে বলে তিনি দাবি করেন। বেপারিদের থাকা-খাওয়াসহ অন্য কোনো অভিযোগ থাকলে ইজারাদারদের জমা রাখা ৫ শতাংশ জামানত বাজেয়াপ্তসহ আর্থিক দণ্ডের বিধান রয়েছে বলে তিনি জানান। ইজারাদার, করপোরেশন ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বেপারি ও ক্রেতাদের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি একজন সাধারণ দর্শক ছাড়া হাটে গিয়ে আমার কিছু করার নেই। আবর্জনা সরানোর বিষয়টি দেখছে কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।নোংরা পানিতে ভরে গেছে পুরো এলাকা। পানি বের হবার কোন পথ নেই। এরই মাঝেই চলছে গরু কেনাবেচা। কেউ সেচে পানি কমানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ পানিতেই দাঁড়িয়ে আছেন। গরুর পাশেই রাখা খাবারগুলোও ভিজে গেছে। নিরাপত্তার জন্য খোলা আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর বুথেরও অবস্থা বেহাল। অগত্যা এর দায়িত্বে থাকা সদস্যরা বুধ ছেড়ে জায়গা নিয়েছেন পাকা হাসিল রুমের কক্ষে। রোব ও সোমবার বৃষ্টিস্নাত বিকেলে এমই চিত্র ছিল রাজধানীর শাহজাহানপুর কলোনীর গরুর হাটের।হাটে প্রবেশের গেটে আইন শৃংখলা বাহিনীর বুথ পানির উপর ভাসছে। বুথের ভিতর রাখা টেবিল ও চেয়ারও পানিতে ভিজে গেছে। হাঁটু পানির কারণে যে কেউ একটু চলাচল করলেই ঢেউ খেলছে পুরো এলাকায়। এলাকার বিভিন্ন ড্রেনের পানি ও বৃষ্টি পানি এক সাথে মিশে হয়ে গেছে একাকার।
গরুর গোবর, কাদা আর নোংরা পানিতেই ভরে গেছে পুরো হাট। তবে বৃষ্টির সময় বিক্রেদের অনেকে হাতে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর যাদের ছাতা ছিল না তাদের পুরো বৃষ্টিতেই ভিজতে হয়েছে। আর বৃষ্টি থামার পর বেশির ভাগই বিক্রেতাকেই গরুর গা মোটা কাপড় দিয়ে মুছতে দেখা দেছে। মূল রাস্তা থেকে হাটটি সামান্য ঢালু হওয়ার কারণেও পানি জমেই ছিল অনেক সময়। পানি নেমে গেলেও কাঁদা হবে এই হাটের নিত্য সঙ্গী। শত কষ্টকে উপেক্ষা করে অঝোড় বৃষ্টির পর দাঁড়িয়ে থাকা বিক্রেতাদের দু’টি চোখ শুধুই খুঁজে ফিরেছে ক্রেতাকে। আর বৃষ্টির পর ক্রেতার সংখ্যা কমতে থাকে। কারণ একটাই পানি মাড়িয়ে কোন ক্রেতাই ঢুকতে চাচ্ছিলেন না হাটে। তাই প্রতি মূহুর্তেই তাদের অপেক্ষা ছিল শুধু ক্রেতার জন্য। তবে পানি কিছুটা নেমে যাওয়ার পর ক্রেতারা প্যান্ট হাটু পযন্ত জড়িয়ে হাটে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বেপারীকে ডেকে রাস্তা থেকেই গরুর দাম জিজ্ঞেস করছেন।যারা গরু কেনার নিয়তে এসেছিলেন তাদের অনেকে হাটের বেহাল অবস্থা দেখে বাহির থেকে গরু দেখে চলে গেছেন।
আর যারা হাটে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকেও ভিজতে হয়েছে নোংরা পানিতে। সব মিলে বেশি দূর্ভোগে পড়েছেন দূর দুরান্ত থেকে ট্রাকে আসা গরু বেপারীরা। ঠিক বৃষ্টির সময়ে গরু আনার কারণে তাদের ট্রাকেই গরুর সাথে ভিজতে হয়েছে।তবে বৃষ্টি বিক্রেতাদের জন্য কিছুটা ভোগান্তির হলেও তা ছিল ক্রেতাদের জন্য সুখকর। দেখা গেছে, বিক্রেতা যে দাম বলেছেন ক্রেতা তার অর্ধেক বলে চুপ ছিলেন। ফলে দাম শুনেই লাখ টাকার আশায় গরু নিয়ে আসা বেপারীরা হতাশ ।গাবতলী পশু হাটের হাসিলঘরে দায়িত্বরত কর্মী মো. সরোয়ার বলেন, আজ সকাল আটটা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মাত্র ৫০টি গরু বিক্রি হয়েছে।পশুর হাটের ইজারাদারদের ব্যবস্থাপক মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, গরু যথেষ্ট এসেছে, এখনো আসছে; কিন্তু ক্রেতা কম। তবে কেনাবেচা এখন পর্যন্ত কম হলেও আগামীকাল রাত থেকে বেচাকেনা বাড়তে পারে।মাগুরা থেকে গরু নিয়ে গাবতলী হাটে আসা দুলাল মিয়া জানান, তিনি ১৮টি গরু নিয়ে গত রাত ১২টার দিকে গাবতলী হাটে এসেছেন। তবে আজ বেলা ১টা পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি।
কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া থেকে হাটে আসা করম আলী বলেন, আটটি বড় আকারের গরু নিয়ে শনিবার গাবতলী হাটে এসেছেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তাঁর আনা সবচেয়ে বড় গরুটির দাম হেঁকেছেন ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা। কালো রঙের এ গরুটির দাম উঠেছে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাঁর দাবি, গরুটিতে ১১ মণ মাংস হবে। বাছুর অবস্থায় কিনে সেটিকে পালন করে বড় করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, গরুটির পেছনে তাঁর সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন সাড়ে চার লাখ টাকা দাম তিনি এটি বিক্রি করে দেবেন।এদিকে ক্রেতাদের মধ্যে গরুর দাম নিয়ে হতাশা দেখা গেছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলী হাটে গরু কিনতে আসা আনিসুর রহমান মনে করছেন, এবারে গরুর দাম অনেক বেশি। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে পশুর হাট ঘুরে একটি মাঝারি ও একটি ছোট গরু কিনতে পেরেছেন তিনি।
মাঝারি আকারের গরুটির দাম পড়েছে ৪৩ হাজার টাকা ও ছোটটির দাম পড়ছে ৩০ হাজার টাকা।আনিসুরের দাবি, গরুর যে দাম হাঁকানো হচ্ছে তাতে মধ্যবিত্তরা ছোট ও মাঝারি গরুর দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ইটের তৈরি ঘরে শীতের সময় তাপ দেওয়ার জন্য একাধিক লাইট জ্বালাতেন, আর গরমে চালাতেন ফ্যান। কিন্তু এখন সেই আদরের গরুকে রাখতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টির পানি ও কাদার মধ্যে। দিতে পারছেন না সময় মতো খাবার, পরিচর্যাও করতে পারছেন না মনের মতো।ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা গরুর খামারিরা এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন। সেই সঙ্গে পশুর হাটের নানা অব্যবস্থাপনার কথাও উল্লেখ করলেন তারা। টয়লেট সংকট, বৃষ্টি-কাদা ও জোঁকের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এসব গরুর খামারিরা। রাজধানীর বিভিন্ন গরুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতিরি কথাই জানা যায়।সরেজমিনে দেখা যায়, পাতলা পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বৃষ্টির পানি থেকে গরুগুলোকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কাদা আর বৃষ্টির পানি জমে আছে হাটের ভেতর ও সরু রাস্তায়। সারাদিন ক্রেতাদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরও বিশ্রাম নেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে গভীর রাতেও জেগে আছেন খামারিরা। অনেকেই গরুর পাশেই পলিথিন বিছিয়ে বসে আছেন। গরুর মল ও কাদার দুর্গন্ধে হাঁপিয়ে উঠেছেন কেউ কেউ। সবার চোখে-মুখে হতাশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।
রাত একটার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় বনরূপা গরু-ছাগলের হাটে কথা হয় পাবনা থেকে আসা খামারি মো. সোহেলের সঙ্গে। গত শুক্রবার চারটি গরু বিক্রির করার উদ্দেশে তিনি ঢাকায় এসেছেন।তিনি বলেন, বাড়িতে লালন-পালন করার সময় কষ্ট কী জিনিস গরুকে বুঝতে দেইনি। কিন্তু এখানে এসে কষ্ট কাকে বলে গরু হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। সারা বছর পরিশ্রম করে এদের (গরু) বড় করছি। কিন্তু শেষ সময়ে তাদের যতœ করতে পারছি না। পাশেই বসা কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটু বসে বা শুয়ে যে বিশ্রাম নিবেন তারও উপায় নেই। জোঁকের জ্বালাতন হজম করতে হচ্ছে তাদের। দিনে পরিশ্রম করে রাতে একটু বিশ্রাম পর্যন্ত করতে পারছেন না। চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে তাদের সময় যাচ্ছে।ওই হাটে ঢু মারতেই একই দৃশ্য চোখে পড়লো। সিরাজগঞ্জ এলাকার খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টি আর কাদা থেকে গরুকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের খাবার ও আরাম আয়াশের কথা ভুলেই গেছি। কিন্তু তাতেও গরুগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না।প্রতিটি হাটে প্রায় হাজারের অধিক করে খামারি থাকলেও নেই টয়লেটের সুব্যবস্থা জানালেন ঝিনাইদহের খামারি সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, এখানে সব ধরনের ব্যবসায়ীরা আছেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। পরিবেশ যে এতোটা খারাপ হবে কল্পনাও করতে পারিনি।
রাজধানীর প্রায় সব গরুর হাটের একই অবস্থা দাবি করে আরেক খামারি আনসার আলী বলেন, রোববার তিনি বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখেছেন। সব হাটগুলোর একই অবস্থা। খামারিদের কোনো মূল্যায়ন নেই। অথচ আমাদের জন্যই হাজার-হাজার টাকা উপার্জন করছে হাট কমিটি।খামারিরা জানান, বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজেরাই পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে আগলে রেখেছেন গরুগুলো। নেই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। ফলে চারপাশে জমে আছে পানি আর কাদা। কেউ কেউ জানালেন, কোনো দিন এতো দুর্ভোগে তারা পড়েননি। তবে হাট কমিটি এ বিষয়ে একেবারেই নির্বাক। যেন এ অব্যবস্থাপনার জন্য সব দায়ভার খামারিদের। তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। আফতাব নগর গরু ছাগলের হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ রায়হানের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করতেই তিনি বলেন, গরু রাখার জন্য উঁচু জায়গা রাখা হয়েছে। কিন্তু খামারিরা নিচু জায়গায় গরু বাঁধছেন। আমাদের হাটে বালু থাকায় তেমন কাদা নেই।মাত্র তিন দিন বাদেই কোরবানি ঈদ। সবারই দৃষ্টি এখন পশুর হাটের দিকেই। আর সেই পশুর হাট হয়েছে দুর্ভোগের অপর নাম। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ব্যবস্থানার মাধ্যমে পশুর হাটে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত হোক-এটাই সবার প্রত্যাশা।
গাবতলী হাটের মতোই ক্রেতাশুন্য অবস্থা রাজধানীর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের পশুর হাটেও। এখানকার ক্রেতারা বলছেন, প্রচুর গরু আসলেও বিক্রেতারা গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি।গরু কিনতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, গরুর সরবরাহ ও ক্রেতার পরিস্থিতি দেখে, গরু বিক্রি করবেন বলে অপেক্ষায় আছেন ক্রেতারা। এবার গরুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। গতবার যে গরু ২৫ হাজারে কেনা সম্ভব হয়েছিল এবার দাম তাঁর প্রায় দ্বিগুণ হাঁকানো হচ্ছে। শেরপুর থেকে ৩০টি ছোট ও মাঝারি আকারের গরু নিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং হাটে আসা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন ছোট গরুর দাম হাঁকছেন ৪৭ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গরু ছোট হলেও ৩৫-৪০ হাজারের কমে তিনি বিক্রি করবেন না।পশুর হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত মো. মিজান বলেন, হাটে ক্রেতা কম। হাটে তিনটা হাসিল ঘর আছে। কেনাবেচা কম বলে একটিতে কাজ চলছে। বিক্রি বাড়লে অন্যগুলো চালু হবে।গাবতলী ও ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে মাঝারি ও ছোট আকারের দেশি গরু বেশি। তবে ভারতীয় বা অন্য দেশের গরুও আছে। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, গরু আসছে। পথেও প্রচুর গরু আছে। যে ধরনের গরু আসছে তাতে এবার সংকট হবে না। সবাই গরু পাবেন। গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা বেশি হবে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত থেকে গরু আসছে। এ ছাড়াও মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের গরুও দেশে ঢুকছে।
কালো পলিথিন কিনে এনে বাঁশের খুঁটি দিয়ে সেটা আটকানোর চেষ্টা করছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার মনসুর বেপারি। তার ১২টি গরু বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। ভিজছেন নিজেও। গাবতলী হাটের প্রবেশমুখের পশ্চিম পাশে বৃষ্টির মধ্যে গরু নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তার। আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই হাটে গরু এইনে এরাম কষ্ট জীবনে পাইনি। অনেকবার হাটে গরু এইনেছি। মেঘের লাগি না পারছি নিজে দাঁড়াতি, না পারছে গরু দাঁড়াতি।’ তিনি আরও জানান, হাটে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, নেই থাকার ব্যবস্থা। খেতে হয় হাটের ভেতরের অস্থায়ী দোকানে। মনসুর বেপারির কথার সত্যতা পাওয়া গেল একটু ঘুরেই। বৃষ্টি থেকে গরুকে নিরাপদে রাখার জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা নেই, বেপারিদের থাকারও নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এছাড়া একদিকে গরুর খাবারের সংকট অন্যদিকে গোবরসহ আবর্জনা সরানোর ব্যবস্থাও নেই বললেই চলে। হাটজুড়েই এমন চরম অব্যবস্থাপনা।
ফলে গরু বেপারিদের এখন মাথায় হাত। বেশি লাভের আশা বাদ দিয়ে চালান তোলা নিয়েও শংকিত অনেকে।গাবতলী হাটের মতোই অবস্থা রাজধানীর আফতাবনগর, গোলাপবাগ মাঠ, মেরাদিয়া, রায়েরবাজার, বনরূপা, বারিধারা জে-ব্লকসহ অন্যান্য হাটের। অথচ এসব হাট থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন। মোটা অংকের লাভ করেন ইজারাদাররাও। কিন্তু যে বেপারিদের উপলক্ষ করে এত আয়, এত আয়োজন সেই বেপারিদের থাকা-খাওয়া ও গরুগুলোকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি কেউ।এদিকে হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ আছে। সেখানে তারা ইজারাদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। হাটে আইনশৃংখলা, প্রতারণা, জাল টাকা এসব দেখছে পুলিশ।