দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫: সব ধরনের সরকারি ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য একটি সাধারণ আইন করতে যাচ্ছে সরকার৷ এই আইন হলে আর প্রত্যেক ট্রাস্টের জন্য আলাদা আইন করতে হবে না৷ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নতুন এই আইন করার সিদ্ধান্ত হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান৷ এদিকে সোমবারের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট আইন ২০১৫ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ বৈঠক শেষে মাশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, দেশে যে ট্রাস্ট আইন আছে তা বেসরকারি ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য৷ সরকারি খাতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য কোনো আমব্রেলা আইন না থাকায় প্রত্যেক ট্রাস্টের আলাদা আইন করতে হয়৷এ কারণেই মন্ত্রিসভা সরকারি খাতের ট্রাস্ট গঠনের জন্য এই আমব্রেলা ল’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতে ভবিষ্যতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য আলাদা আইন করার প্রয়োজন হবে না৷
তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট আইন আছে৷ কিন্তু সরকারি খাতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য কোনো সমন্বিত বা আম্ব্রেলা আইন নেই৷ তাই সরকারি খাতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য আলাদা আইন করতে হয়৷ এ জন্য মন্ত্রিপরিষদ সরকারি খাতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য সমন্বিত আইন বা আম্বেৃলা ল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যাতে সরকারি খাতে ট্রাস্ট গঠনের জন্য আলাদা আইন করতে না হয়৷এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নতুন আইন প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷ মন্ত্রিসভায় এটি প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করা হয়েছে এবং ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুদোন হলো বলে জানান সচিব৷সচিব জানান, এই আইনে ১৮টি ধারা আছে৷ এছাড়া ট্রাস্টটির গঠন কীভাবে হবে; বোর্ডের কাজ কী; তহবিল ও বাজেট সম্পর্কে বলা হয়েছে৷এই আইন বিষয়ে সচিব আরো জানান, ফেলোশিপ দেয়া, বিশেষ করে যারা বিজ্ঞান গবেষেণা করেন তাদের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই৷সরকারি খাতের ট্রাস্ট পরিচালনায় নতুন একটি সমন্বিত আইন করছে সরকার, যা পাস হলে প্রতিটি ট্রাস্ট গঠনের জন্য আলাদা আইন করার প্রয়োজন আর থাকবে না৷
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগকে মৌখিকভাবে নতুন আইন প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷তারা এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরি করেছে৷ সোমবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হিসাবে বিষয়টি চূড়ান্ত হল৷মন্ত্রিসভা এদিন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দেয়৷ বিজ্ঞানী বা তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের ফেলোশিপ দিতেই এ আইন করা হচ্ছে৷এছাড়া বিজ্ঞান গবেষণা উন্নয়নে মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল গবেষকরাও এ আইনের মাধ্যমে সহায়তা পাবেন বলে মোশাররাফ জানান৷নতুন আইনের খসড়ায় ট্রাস্টের গঠন, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ব্যবস্থাপনা, ট্রাস্টি বোর্ডের গঠন, বোর্ডের কাজ, তহবিল সংরক্ষণ, বাজেট ও হিসাব নিরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও ফেলোশিপ ট্রাস্ট আইনের আওতায় সরকার বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারবে৷১৩ সদস্যের এই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী৷ মন্ত্রণালয়ের সচিব হবেন ট্রাস্টের সহসভাপতি৷সরকারের পক্ষ থেকে এই ট্রাস্টে অর্থের যোগান দেওয়া হবে৷ এর বাইরে ট্রাস্ট অন্য উত্স থেকেও অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান৷
এদিকে, স্থাপনা নির্মাণে অধিগ্রহণ করা জমির ভিডিও ধারণ করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে সরকার৷ তবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ নেওয়া যাবে না৷ আপিলে খারিজ হলে নিজ খরচে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হবে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পায়রা বন্দর প্রকল্প (ভূমি অধিগ্রহণ) আইন-২০১৫ এর খসড়ার ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়৷ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান,ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৯৮২ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল অধ্যাদেশ’ বলে জমি অধিগ্রহণ করা হয়৷ পদ্মা সেতু প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এঙ্প্রেস ওয়ে নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইন রয়েছে৷ একই আদলে এ আইন করা হয়েছে৷ সচিব বলেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, এ আইনের আওতায় বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে৷ আইনের বিশেষ বিধানে পাঁচ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে, প্রত্যাশী সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে৷ যাদের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তারাই প্রত্যাশী সংস্থা৷ যখন প্রকল্প নেওয়া হয় দুষ্টু লোকেরা বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য রাতারাতি স্ট্রাকচার তৈরি করে অসাধু কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজসে ক্ষতিপূরণ নেন৷ এ ধরনের পেশাদার লোক রয়েছে৷ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে এ ধরনের লোক পাবেন৷ পরে নিজেদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেন৷ এটি চেক দেওয়ার জন্য এ প্রভিশন রাখা হয়েছে৷তিনি বলেন, যদি জনস্বার্থবিরোধী কোনো অসাধু উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি নির্মাণ বা জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কৃষিজমি বাণিজ্যিক প্লট হিসাবে কেউ দেখান, তাহলে কেউ বর্ধিত হারে ক্ষতিপূরণ পাবেন না, এ প্রভিশন রয়েছে৷ শ্রেণি পরিবর্তন করে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে জেলা প্রশাসন প্রত্যাখান করবে৷ প্রত্যাখানের বিরুদ্ধে সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে আপিল করা যাবে৷ অনেক সময় নিলে প্রকল্প ঝুলে যাবে ও বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি জানান৷
তিনি আরও জানান, আপিলের পাঁচ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে৷ আপিল নিষ্পত্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন৷ আপিলে হেরে গেলে জেলা প্রশাসক ঘরবাড়ি স্থাপনা নিজ খরচে সরিয়ে নিতে বলবেন৷ না হলে নিলামে বিক্রি করে ট্রেজারিতে টাকা জমা দেবেন৷আর একটি বিষয়, জমির প্রকৃতি নির্ধারণে ভিডিওর আলোকে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হবে৷ ভিডিও’র আলোকে গাছপালা, স্ট্রাকচারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোর্ট-কাচারি হলেও এই ভিডিও গ্রহণযোগ্য হবে৷এটি জনস্বার্থের জন্য করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতে একদিকে সরকারের টাকা লুটেরা গোষ্ঠী ভোগদখলের সুযোগ বন্ধ হবে এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে তারা খুব তাড়াতাড়ি টাকা পেয়ে যাবেন৷ অন্যদিকে, মোটরযান ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত, প্রযুক্তিনিভর্র ও টেকসই করতে একটি আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে ১৯৮৩ সালের একটি মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিআরটিএ পরিচালিত হচ্ছে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পরিবহন খাতের উন্নয়ন ও বিস্তৃতি ঘটেছে৷ কিন্তু আইনি ভিত্তি সবল নয়৷ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কার্যকরভাবে কাজ করতে গেলে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে৷ এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সমন্বিত আইন করার উদ্যোগ নেয়৷ বিভিন্ন সভায় মতামত, পরামর্শ দিয়ে আইনের খড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে৷
অধ্যাদেশে চারটি ধারা থাকলেও আইনে ২৮টি ধারা ও ৭২টি উপধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতে কর্তৃপক্ষ ও উপদেষ্টা পরিষদের গঠন, কাজ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রশাসন পরিচালনা, কমিটি গঠন, বাজেট-হিসাব-অডিট ইত্যাদি যুক্ত করা হয়েছে৷কর্তৃপক্ষকে ভবিষতে কোম্পানি গঠন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তবে এই মুহূর্তে কোম্পানি গঠন হচ্ছে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷ আইনের মূল উদ্দেশ্য মোটরযান ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত, প্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং দক্ষতর করা৷আইনের অধীনে সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে৷ উপদেষ্টা পরিষদে থাকবেন ঢাকার মেয়র, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা৷ তারা গাইড লাইন্স বা উপদেশ দেবেন৷প্রশাসন পরিচালনা করবেন পরিচালনা পর্ষদ, যার প্রধান হবেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান৷ কয়েকজন সার্বক্ষণিক ও খণ্ডকালীন পরিচালক থাকবেন, যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসবেন৷আইনে বিধিমালা ও প্রবিধিমালা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে৷এই আইনের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও দক্ষতর করা যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷