দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাল্যবিবাহকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে একসাথে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দলমত এবং ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেছেন, ১৮ বছরের কমবয়সী মেয়ে শিশুর বিয়েকে উৎসাহিত করবে এমন কোনো শর্ত ‘বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে’ থাকবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যগত বা অন্য যে কারণই হোক না কেন ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হতে পারে না। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নয়, এটি বন্ধ করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাল্যবিবাহ রোধে দ্রুত আইন পাস ও বাস্তবায়ন চাই’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও চাইল্ড রাইটস্ অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।এছাড়াও বৈঠকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, আইন বিচার বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য আবদুল মতিন খসরু, সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম মুক্ত ও ওয়াসিকা আয়শা খান, আইন কমিশন (জেলা জজ)-এর মূখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফউজুল আজিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শুধুমাত্র প্রচলিত আইন দিয়ে সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করা সম্ভব নয় বরং এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, নারী শিক্ষার প্রসার ও দারিদ্র বিমোচন করা। তিনি বলেন, সামাজিক সচেতনতার কাজটি প্রথমে পরিবার থেকে শুরু করতে হবে, সামাজিক মূল্যবোধ ও মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সকল পর্যায়ে প্রচারাভিযান চালিয়ে যেতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে না দিয়ে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য সমাজের আলেম-ওলামা, শিক্ষক রাজনীতিবিদসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নারীকে পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছেন। এই সুযোগ গুলো আমাদের গ্রহন করতে হবে।
বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে আসলে কী থাকছে, সে বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এই মন্ত্রী পরিষ্কার ধারণা দেন। তিনি বলেন, আইনে কোনো তবে-টবে থাকবে না। একটা সুযোগ দেওয়া হলে ওই ধরনের লোকেরা সুযোগ নেবে। এ ধরনের সুযোগ আইনে থাকবে না। স্বাস্থ্যগত কারণে ১৮র নিচে বিয়ে হতে পারে না। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পক্ষে গণভোট হলে ১০ শতাংশ ভোটও পড়বে না।বিশ্বে বাল্যবিবাহ প্রবণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ‘বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন’ নামে দেশে যে আইনটি আছে তা পাস হয় ১৯২৯ সালে। সরকার আইনটিকে যুগোপযোগী করতে নতুন করে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এই আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বিয়ের বয়স ১৮ই থাকছে। তবে যুক্তিসংগত কারণে’ ১৮ বছরের পরিবর্তে ১৬ বছরে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে, এমন একটি অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক তৈরি হয়। অবশ্য খসড়াটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।