nahid-a_778

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫: কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বৈঠক। তবে দু পক্ষই সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা চলবে বলে জানিয়েছে। শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে শিক্ষামন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু বেশি সময় ধরে এ বৈঠক চলে। এতে শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল।মন্ত্রিসভায় অষ্টম বেতন স্কেল অনুমোদন হওয়ার পর পৃথক বেতন কাঠামো ও পদমর্যাদা সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এটি প্রথম বৈঠক। বৈঠক শেষে মন্ত্রী ও শিক্ষকেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।নুরুল ইসলাম নাহিদ আশা প্রকাশ করেন, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যাবে। সবাই হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকেরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকারও সেটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।শিক্ষকদের মূল দাবি অনুযায়ী পৃথক বেতন কাঠামো করা হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করেনি। আলোচনা হবে। তবে শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোভাবেই ছোট করে দেখা হচ্ছে না।শিক্ষক নেতা ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের প্রথম ও প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ দাবিতে আন্দোলনও চলবে, আলোচনাও চলবে। পরে এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, পৃথক বেতন কাঠামোর জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এটি আমরা বলেছি।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা সমধান শিগগিরই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সরকার তাদের দাবির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পৃথক বেতন কাঠামো ও পদমর্যাদা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে একটি কমিটিও করা হয়েছে।উল্লেখ্য, পে- স্কেল ঘোষণার পর প্রথম কর্মবিরতি পালিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিনই অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অধ্যাপকদের পদোন্নতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এতে ওইদিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলে। এই অবস্থায় ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ৗৈবঠকে বসে। ওই দিন তারা শনিবার ও ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ দুদিন ক্লাস বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকে।এর আগে আন্দোলনে সমর্থন আদায়ের জন্য ফেডারেশন ৫ সেপ্টেম্বর ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে। ভিসিরা ফেডারেশনের কর্মসূচি সমর্থন করেছেন বলে ওই দিনই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ওই দিনের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর পে- স্কেল মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুটি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ফেডারেশনের মহাসচিব জানান, অনুমোদিত পে- স্কেলের দলিল পর্যালোচনা শেষে প্রস্তুতিসহ তারা সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

দীর্ঘ ৯০ মিনিটের রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘নরম’ করতে পারেননি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষকরা নিজেদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে অনঢ় অবস্থানের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীকে। ফলে শিক্ষকদের আন্দোলন চলমান থাকবে, সেই সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুষ্ঠিতব্য স্নাতক (প্রথম বর্ষ) ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।বৈঠক সূত্রে এ সকল তথ্য পাওয়া গেছে।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি গত পাঁচ থেকে ছয়দিন দেশের বাইরে ছিলাম। কিন্তু প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের সঙ্গে ে ােগাযোগ রক্ষা করেছি। সেজন্যই কাল (শুক্রবার) দেশে ফিরেই, আজ তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি। শিক্ষকদের সঙ্গে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, বেতন ও পদমর্যাদা পর্যালোচনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি আশা করছি ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের আলোচনা চলমান থাকবে।

বৈঠক শেষে শিক্ষক সমিতির ফেডারেশন সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত চার মাস ধরে বেতন কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখি নাই। আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ দাবিতে আন্দোলনও চলবে, আলোচনাও চলবে।ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে বলে জানান তিনি।মহাসচিব এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পৃথক বেতন কাঠামোর জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এটি আমরা বলেছি। তবে ঈদের আগেই আমরা আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা চাই। আর অর্থমন্ত্রী এ মাসের শেষে দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তিনি ফিরবেন আগামী মাসের ১৯ তারিখে। এ সময়কালে বেতন ও পদমর্যাদা পর্যালোচনা কমিটির কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে- সেটাও কিন্তু আমরা জানি না।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি ও অবমাননার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলসহ ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে বেশ কয়েকদফা কর্মবিরতিসহ নিজ নিজ ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। এরপর একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাও বর্জনের হুমকি দেন শিক্ষক নেতার। এতে উচ্চ শিক্ষায় বেশ শঙ্কার অবস্থা সৃষ্টি হয়। ফেডারেশন থেকে বলা হয়, শিক্ষকদের দাবিসমূহ বিবেচনা না করেই সম্প্রতি বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে এবং সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে। ফলে বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। উপরন্তু শিক্ষকদের দাবি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রকম কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এরপর জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো পর্যালোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এ কমিটির প্রধান করে বেতন বৈষম্য দূর করা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় এ কমিটির সঙ্গে বর্তমানে কোনো ধরনের আলোচনায় যেতে রাজি নন বলেও জানান শিক্ষকরা। আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের দাবি ছিল একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রণয়ন করা। কিন্তু সরকার সেটা মেনে না নিয়ে জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো পর্যালোচনায় বেতন বৈষম্য দূর করা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করেছে। কমিটিতে অর্থমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে সরকারের বেশকিছু মন্ত্রী ও আমলাকে সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কাছে আগে যেহেতু আমরা সুবিচার পাইনি, আগামীতেও সুবিচার পাব বলে আশা করি না।