2015_09_18_14_28_53_mLDeQU4oxCk4BTNALPXyjhAaMUekUX_original

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের সকল ভোটারদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড সরবরাহ করা সম্ভব নয়৷তাই আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১৮ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)৷প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি এখন পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷এদিকে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষের দিকে এলেও কম বয়সী বিশেষ করে ১৫ ও ১৬ বছর বয়েসীদের অনাগ্রহে নির্বাচন কমিশন উদ্বিগ্ন৷ বয়স প্রকাশ করতে না চাওয়া, স্থানান্তর, নিবন্ধন সনদ না পাওয়াসহ নানা কারণে এই অনাগ্রহ হতে পারে বলে ইসি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন৷২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ভোটারযোগ্য হচ্ছেন, ১৭ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ তথ্য সংগ্রহ আশানুরূপ হলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভোটারযোগ্যদের ক্ষেত্রে এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না বলে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়৷ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, এটা নিয়ে আমরাও চিন্তিত৷বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর, নিবন্ধন সনদ না থাকা, মহিলাদের অনাগ্রহ ও আইডি কার্ড পাওয়ার বিলম্বের কারণে একটি বড় অংশকে তথ্য সংগ্রহের আওতায় আনা যাচ্ছে না৷একই মত জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন৷তিনি বলেন, অনেক নারী-ই বয়স প্রকাশ করতে চান না৷ গ্রামে যেমন, শহরের পরিস্থিতিও এর ব্যতিক্রম নয়৷ মাঠ কর্মকর্তারাও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না, এজন্যে কম বয়সীদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হবে৷

তবে নিবন্ধন শেষ হওয়ার আগে এই সংক্রান্ত হিসাবটা দিতে পারছেন না ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান৷তথ্য নিলেও তাত্‍ক্ষণিকভাবে আইডি কার্ড পাওয়া যাবে না জানাও কম বয়সীদের অনাগ্রহের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম৷চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এ তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷কমিশন সদস্যদের মতপার্থক্যের মধ্যেই এবারের হালনাগাদ কর্মসূচিতে কমবয়সী বিশেষ করে আগামী ৩ বছরে যারা ভোটার হবেন তাদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ২.৫ শতাংশ এবং ১৫ ও ১৬ বছর বয়সীদের জন্য ৫ শতাংশ করে তিন বছরের জন্য মোট ৭২ লাখ নাগরিককে নিবন্ধনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল ইসি৷বাদপড়াদের নিয়ে ২০১৬ সালের ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন৷কিন্তু ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভোটার হবে এমন নাগরিকদের হালনাগাদ তথ্যের অবস্থা বেশ সঙ্গীন৷ এই দুই বছরের মিলিত সংখ্যা ২০১৬-র হালনাগাদের সংখ্যার চেয়েও কম হবে বলে তারা জানান৷ এ দুই বছরে ভোটার হবে এমন ৪৮ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ইসির৷২০১৬ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী এমন এক লাখেরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ঢাকায়৷ এর মধ্যে ৮০ হাজারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান মিহির সারওয়ার৷তবে ১৫-১৬ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের সংখ্যা এর অর্ধেকেরও কম হবে জানিয়ে ইসির এ উপসচিব বাসায় বাসায় গিয়ে উপযুক্তদের পেতে ঝামেলার কথাও বলেন৷এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিইসি আবু হাফিজ বলেন, এখনও সময় রয়েছে৷ পুরো কাজ শেষ হওয়ার পরেই এ নিয়ে তথ্য জানানো হবে৷

এদিকে তথ্য দিতে আগ্রহী অনেকেরই অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের কথা থাকলেও গত ১০ দিনে তারা মাঠ কর্মকর্তাদের দেখা পাননি৷পূর্ব রামপুরা, পশ্চিম মনিপুর, তোপখানা রোড় ও তেজতুরি পাড়াসহ ঢাকার অনেকে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে৷ভুক্তভোগীদের একজন ১৬ বছর বয়সী সামিরা বলেন, কর্মকর্তারা বাসায় আসবে- এতদিন পর্যন্ত এমনটাই ভেবেছিলাম৷ উপায়ান্তর না দেখে এখন এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছি৷এ বিষয়ে ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার বলেন, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ কেউ চাইলে নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়েও তথ্য দিয়ে আসতে পারবেন বলে জানান তিনি৷

এদিকে,সমপ্রতি ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে৷ সেই প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাস্তবায়নাধীন আইডিইএ প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই তার মেয়াদ ১৮ মাস অর্থাত্‍ জুন ২০১৬ এর পরিবর্তে ডিসেম্বর ২০১৭ বৃদ্ধির করার জন্য বলা হয়৷প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে আইএমইডি’র চাওয়া তিনটি প্রশ্নের উত্তরও পাঠনো হয়েছে৷ প্রশ্নগুলো হলো- প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট (এনআইডি) উত্‍পাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্তমানে সমঝোতা হয়েছে কি না, প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ১৮ মাস কেন প্রয়োজন হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান এবং উল্লেখিত বর্ণিত সময়ের জন্য কোনো ব্যয় বৃদ্ধি হবে না এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান৷আইএমইডি’র প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে যে, দাতা সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে- সময় বাড়ানো হলেও এতে কোনো ব্যয় বাড়বে না এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে স্মার্টকার্ড তৈরি করা গেলেও ওই সময়ের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না৷ এ কারণে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷পাঠানো প্রস্তাবে আরো বলা হয়,প্রকল্প শুরুর দিকে ফাইন্যান্সিং এগ্রিমেন্ট শর্ত সংশোধন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (সংশোধন) ২০১৩ এবং বিধিমালা ও প্রবিধানমালা করতে প্রায় ৩০ মাস ব্যয় হয়৷ চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠারে এ বছরের মধ্যেই কার্ড উত্‍পাদন আরম্ভ হবে৷ প্রতি মাসে গড়ে ৬ মিলিয়ন হারে কার্ড উত্‍পাদন ও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হবে৷ এ হারে কার্ড উত্‍পাদন ও বিতরণের জন্য প্রায় ১৫ মাস সময়ের প্রয়োজন হবে৷ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের সকল নাগরিদের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া ও ডাটাবেজ ব্যবহার করে আইডি ভেরিফিকেশন সেবা নিশ্চত করা৷ এ কারণেই এই সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৮ মাস সময় বৃদ্ধি করা প্রয়োজন৷ ১৮ মাস বৃদ্ধি করা হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়৷এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন,’২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এর যৌক্তিক কারণ দেখিয়েছি আমরা, আশা করছি পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির সময় বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন দেবে৷ আমরা ইতিমধ্যে স্মার্টকার্ড প্রস্তুতের জন্য মেশিন বসানো থেকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি৷ শিগগির কার্ড তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে৷ মেয়াদ বাড়লে বিতরণের সময়ও বেশি পাওয়া যাবে৷’ এছাড়া অল্প সময়ে মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দিতে গেলে কাজের মান নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে জানান তিনি৷

ইসির সূত্র জানায়, আইডিয়া প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সাড়ে নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল৷ এ জন্য উত্‍পাদন শুরুর কথা ছিল গত আগস্টেই৷ এ বছরের ১৪ জানুয়ারিতে স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষার করে ইসি৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী স্মার্টকার্ড উত্‍পাদন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি নাগরিকের মাঝে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, আমরা আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পেয়েছি৷ বিষয়টি যাছাই-বাছাই করে দেখছি৷ কেউ সময় চাইলে তো আর দেয়া যায় না৷ প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব৷প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে৷ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা৷ ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা৷ এছাড়া ১৪ জানুয়ারি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি৷এরপর থেকে কমিশন বিভিন্ন সময় স্মার্টকার্ড বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে৷ বিভিন্ন ব্যর্থতার কারণে বারবার কথা দিলেও এখন পর্যন্ত বহুল আকাক্ষিত সেই স্মার্টকার্ড কোনো নাগরিককের হাতে দেয়া তো দূরে থাক তা তৈরিও করতে পারেনি৷ অথচ ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা ছিল৷ কিন্তু তখনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি ইসি৷এরপর চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরবর্তীতে গত ২৬ মার্চ অর্থাত্‍ স্বাধীনতা দিবসে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ হবে বলে জানানো হয়৷ এ উদ্যোগটিতে ব্যর্থ হলেও বাঙালির বর্ষবরণ উত্‍সব পহেলা বৈশাখে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়৷ তবে সে সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখতে পারেনি৷স্মার্টকার্ড প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, স্মার্টকার্ড উত্‍পাদনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে৷ আশা করছি এ বছর থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে৷উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে ৯ কোটি ৬২ লাখ ২৬ হাজার ৫৪২ জন ভোটার রয়েছে৷ সেই সঙ্গে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ৭২ লাখ নাগরিককে অন্তর্ভূক্ত করা হবে৷