দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫: রাজধানীতে নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোথাও কোনো পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট এবং গণপরিবহনের টার্মিনালগুলোর নিরাপত্তায় এবার কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তারই অংশ হিসেবে এবার ১৯সেপ্টেম্বরের আগে কোরবানীর হাটে কোনো পশু মজুদ ও বিক্রি করতে দেয়া হবে না।বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টু রোডে ঈদে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার চামড়া পাচার রোধে রাজধানীর ১৩টি স্থানে চেকপোষ্ট বসানো হবে। এছাড়াও ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবারো চেকপোষ্টের পাশাপাশি টহল পুলিশ বাড়ানো হবে।তিনি আরো বলেন, রাজধানীতে পশুর হাট বাসানোর ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। কোরবানির চামড়া পাচার রোধেও থাকছে অতিরিক্ত চেকপোষ্ট।
এছাড়াও রাজধানীর পশুর হাট ও ষ্টেশন গুলোতে ভ্রাম্যমান আদালতও থাকছে— উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, চুরি, ছিনতাই, মলম ও অজ্ঞান পার্টি রোধে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঈদ পরবর্তী রাজধানীর নিরাপত্তায় থাকছে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা ও মার্কেটে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে এবারই প্রথম হাটের পার্শ্ববর্তী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখায় সান্ধ্যকালীন সেবা দেয়া হবে। এতে হাটের টাকা লেনদেন অনেকটাই নিরাপদ থাকবে। জাল টাকা নিয়ন্ত্রণে ১৯টি হাটে জাল টাকা সনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। নিরাপদে টাকা পরিবহনের জন্য প্রতিটি হাটে ২৪ ঘণ্টার মানি এসকট সুবিধাও দেবে পুলিশ। অজ্ঞান ও মলম পার্টি নিয়ন্ত্রণে পশুর হাটের বাইরের কোনো খাবার দোকান বসতে দেয়া হবে না। হাট এলাকায় হাটের ইজারাদারদেরই খাবার দোকান দিতে হবে।
ডিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে সব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ওই বৈঠকে ঈদকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচানা হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মীর রেজাউল আলম বলেন, কোরবানির হাটের বেপারীদের টাকা বহনের ঝুঁকি কমাতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিটি হাটে বুথ স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারা বলেছে হাটে অস্থায়ী বুথ চালু করা কঠিন। তাই হাটের পাশের প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা সন্ধ্যায়ও খোলা রাখার জন্য তারা ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে। ঈদের আগের তিনদিন পশুর হাটের পাশে ছুটির দিনও ব্যাংক খোলা থাকবে। এ সেবা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।মীর রেজাউল আলম আরও বলেন, আমরা প্রতিটি হাটে বেপারীদের টাকা বহন করে নেয়ার সুবিধার্থে মানি এসকট দেব ২৪ ঘণ্টা। আমরা চারটি করে জাল টাকা সনাক্তের মেশিন দিচ্ছি। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংক থেকেও দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঈদের সময় রাজধানীর প্রতিটি পশুর হাটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বেচা-কেনা হয়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে এই আর্থিক লেনদেন। এসব লেনদেন হয় নগদ টাকায়। এতে টাকা ছিনতাইয়ের চরম ঝুঁকি রয়েছে। টাকা বহন করে হাটে যাওয়াকে নিরাপদ মনে করেন না অনেক নাগরিক। বিগত বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। তাই পশুর হাটের পাশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঈদের সময় হাটের ভেতরে ২৪ ঘণ্টার জন্য টাকা লেনদেনের জন্য বুথ স্থাপনের অনুরোধ করে ডিএমপি। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠিও দেয়া হয়। তবে সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে মত বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি বুথ সেবার বদলে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ফলে রাজধানীর ১৯টি এলাকার পশুর হাটের পাশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ঈদের আগে সন্ধ্যায়ও খোলা থাকবে। ঈদের আগে তিন দিন এ সেবা থাকবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এতে গরু, ছাগলসহ কোরবানির পশু কেনার জন্য ব্যাংক থেকে যে কোনো সময় টাকা তোলা যাবে। বিক্রেতারাও ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা রাখতে পারবেন। ব্যাংকগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহন করছে পুলিশ। ব্যাংকে টাকা আনা-নেয়ার জন্য হাটেই একটি করে মানি এসকট টিম থাকবে পুলিশের।
সূত্রমতে, ঈদের আগে রাজধানীবাসী এবং ঘরমুখো মানুষের দুভোর্গ কমাতে ১৯ সেপ্টেম্বরের আগে পশুর হাটে কোনো প্রকারের বেচা-কেনা করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন এবং হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বেপারীরা হাটে গরু নিয়ে আসতে পারবেন। জানা গেছে, এবার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৭টি কোরবানীর হাট বসছে। আর ডিএমপির আওতায় থাকছে ১৯টি হাট। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পুলিশের বুথ থাকবে। পাশাপাশি জাল টাকা পরীক্ষার জন্য মেশিনের একটি বুথও বসানো হচ্ছে। যে কেউ সেখানে গিয়ে টাকা যাচাই করে নিতে পারবেন। পুরো নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি হাটেই ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করবে পুলিশ। থাকবে পেট্রল টিমও। হাট এলাকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে এবার হাট এলাকায় ভাসমান খাবার দোকান বসতে দেয়া হবে না। সেখানে নিজস্ব খাবার দোকান চালু করবেন ইজারাদাররাই। ইজারার শর্ত হিসেবে তাদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে খাবারে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে সতর্ক অবস্থানে থাকবে মহানগর পুলিশ। কোনো গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে দেয়া হবে না। ঈদের সময় সদরঘাট থেকে ছাড়ার পরও কিছু লঞ্চ মাঝ-নদীতে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এ জন্য নৌ-পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ট্রেন ছাড়ার আগমূহূর্তে টিকিট না নিয়ে অনেক যাত্রী ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছাদে ওঠে। এ ব্যাপারে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও রেলওয়ে পুলিশকে (জিআরপি) তথ্য দিয়েছে ডিএমপি। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে ওই সভায় ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আটটি অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি), গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের ডিসি, চারটি ট্রাফিক বিভাগের ডিসিসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তারা নিজ নিজ বিভাগের সুবিধা-অসুবিধার কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন। কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে রাজধানীর বহিগর্মনের ১৩টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, চমড়া পাচার রোধে ১৩টি বহির্গমনে চেকপোস্ট থাকবে। এসব চেকপোস্ট দিয়ে চামড়া বাইরে যেতে পারবে না। শুধুমাত্র আমিন বাজারে বাধা দেওয়া হবে না। হেমায়েতপুরে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়া সেখানে যায়। ফলে আমিনবাজারে দিয়ে চামড়াবাহী গাড়ী যেতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রেও যাচাই বাছাই করা হবে বলেও জানান তিনি।আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কোরবানির ঈদে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কম দামে চামড়া কিনে। এবার যেন তারা এ ধরনের সিন্ডিকেট করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে।ডিএমপি কমিশনার বলেন, চকবাজার ও হাজারীবাগে চামড়া ব্যবসায়ীরা যেন চাঁদাবাজির শিকার না হন সেজন্য পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা টিমও কাজ করবে।