8566

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫: বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে হাই কোর্ট৷জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এই মামলা বাতিলের জন্য খালেদার রিট আবেদনে সাত বছর আগে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট৷সে সময় জারি করা রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়৷এর ফলে অন্য দুই দুর্নীতি মামলার মতো এ মামলারও বিচারিক কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলতে কোনো বাধা থাকলো না৷ এর আগে গত ৩০ আগস্ট বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়৷যেকোনো দিন রায় দেওয়া হবে জানিয়ে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান(সিএভি) রাখেন আদালত৷পরে মঙ্গলবার প্রকাশিত কার্যতালিকা অনুসারে বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য হয়৷ এ মামলায় বিচারিক আদালতে জামিনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিকিত্‍সার জন্য আগের রাতে লন্ডনে গেছেন৷ সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে এ মাসের শেষ দিকে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷ খালেদার আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী রায়ের পর বলেন, আমরা সংক্ষুব্ধ৷ এ রায়ের বিরদ্ধে আমরা আপিল করব৷অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়া গেছে৷ এ আবেদন চলতে পারে না বলে আদালত রুল খারিজ করে দিয়েছেন এবং স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন৷ ফলে নিম্ন আদালতে এ মামলার বিচার চলতে আর কোনো বাধা নেই৷

এ নিয়ে গত চার মাসে খালেদার তিনটি দুর্নীতি মামলা দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর সচল হল৷গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনও হাই কোর্টে খারিজ হয়ে গেছে৷ এ দুটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে প্রধান আসামি খালেদার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট৷ গত ৯ এপ্রিল এ মামলাটির কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন আদালত৷এরপর থেকে শুরু হওয়া রুল শুনানি ও যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী৷ দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান৷খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন দুর্নীতি মামলার মধ্যে অন্য দু’টি নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে যথাক্রমে গত ১৮ জুন ও ৫ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট৷ একইসঙ্গে দুই মামলায়ই রায়ের কপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খালেদাকে৷

বিচারপতি মো.নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ নাইকো এবং বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে করা খালেদার আবেদন ও রুলের রায় দেন৷খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল৷ সমপ্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধাযের্র আবেদন জানায় দুদক৷এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া৷গত ১৯ এপ্রিল গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি পেছাতে খালেদার চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট৷ পরে পর্যায়ক্রমে মামলাগুলোর রুল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাত্‍ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক৷ এ মামলায় একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক৷

এরপর মামলাটি বাতিল চেয়ে ওই বছরই হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া৷ ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন৷ একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন৷ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন-এম সাইফুর রহমান (মৃত), আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, এম শামসুল ইসলাম (মৃত), আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন৷বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা হয়৷ ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক৷চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এঙ্পোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্‍পাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়৷খালেদা মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাই কোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে৷ মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়৷ হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার৷