দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ : হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমানকে অপসারণে রাষ্ট্রপতির আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপতির আদেশ বহাল রাখেন। ইদ্রিসুর রহমান নামে এক আইনজীবীর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়। এর ফলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই বহাল থাকল বলে আপিলকারীর আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান জানান।উল্লেখ্য, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদ ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল জামিন জালিয়াতির অভিযোগে বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমানকে অপসারণের আদেশ দেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমান হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০০৫ সালে শাহিদুর রহমানকে অপসারণের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন হাই কোর্ট। হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে ইদ্রিসুর রহমানের করা আপিলের শুনানি শেষে বুধবার আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় খারিজ করে দিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ বহাল রাখেন।
ওই বিচারককে অপসারণ করে রাষ্ট্রপতির দেওয়া সিদ্ধান্ত এর আগে অবৈধ ঘোষণা করেছিল হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টেরএক আইনজীবীর করা আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্টের ওই রায় বাতিল করে দিয়েছে।মামলার নথিতে দেখা যায়, সৈয়দ শাহিদুর রহমান ২০০৩ সালের এপ্রিলে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছর নাসিম সুলতানা কনা নামের এক নারী ঘুষের বিনিময়ে জামিন করানোর একটি অভিযোগ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তখনকার সভাপতি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের গোচরে আনেন।ওই বছর ১ অক্টোবর এক সভায় রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, একজন বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় তার সহকর্মী বিচারককে বলে জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন।
নাসিম সুলতানা কনার ওই অভিযোগ ১৪ অক্টোবর তখনকার প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে জানান রোকন উদ্দিন মাহমুদ। এরপর ২০ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেন।এর ধারাবাহিকতায় একই বছর ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ওই অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ। সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুহুল আমিন ও বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিষয়টি তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দেন। ২০০৪ সালের ২৬ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।এতে বলা হয়, বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি; তবে তথ্যপ্রমাণে এটাও বলা যাচ্ছে না যে এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে শাহিদুর রহমানের দায়িত্ব পালন করা উচিৎ নয় বলেও প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ (৬) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে শাহিদুর রহমানকে অতিরিক্ত বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করেন।এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শাহিদুর রিট আবেদন করলে হাই কোর্ট রুল দেয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২ ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রপতির ওই সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন। আপিল বিভাগ ২০০৫ সালের ২৫ এপ্রিল হাই কোটেৃর রায় স্থগিত করে আপিল করার অনুমতি দেয়।এই আপিলের ওপর ৫ কার্যদিবস শুনানি শৈষে গত ১৮ অগাস্ট আপিল বিভাগ বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার আপিল মঞ্জুর করে রায় দেয় আপিল বিভাগ।আদালতে আপিলকারী পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হৈাসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জৈনারেল মুরাদ রেজা। শাহিদুর রহমান নিজের পক্ষে নিজেই শুনানি করেন।রায়ের পর ইধ্যিসুর রহমান বলেন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি এবং সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতেই লিভ টু আপিল ও আপিল করেছিলাম। আপিল বিভাগ আপিল মঞ্জুর করেছেন। রাষ্ট্রপতির দেওয়া ওই সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন।