1436720407

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫: কাউন্টার খোলার তখনও আধঘন্টা বাকি৷এর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে কমলাপুর রেলস্টেশন৷স্টেশনের দীর্ঘ সারিগুলোই যেনো বলছে, দুয়ারে ঈদ উত্‍সব৷ ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে সেই চিরচেনা দৃশ্য৷ টিকিট পেতে সেই সংগ্রাম৷ ঈদের আগে কমলাপুর স্টেশনে এমন দৃশ্যই গতানুগতিক৷

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে মঙ্গলবার সকালে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে৷ কেউ এসেছেন রাতে,কেউবা ভোরে৷ টিকিটের অপেক্ষায় সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে৷ পবিত্র ঈদুল আজহা ভোর থেকেই স্টেশনে অপেক্ষা৷ মঙ্গলবার দেওয়া হচ্ছে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিট৷কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল নয়টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে৷ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে ৷ যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট নিতে পারবেন বলে তিনি জানান৷অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায়৷ কিন্তু বরাবরের মতোই এর কয়েকঘন্টা আগে কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শতাধিক মানুষ৷ সকালে যখন কাউন্টার খোলা হলো, টিকিটের আশায় তখন লাইনে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ৷ ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটেও এ দিন রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে৷ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি৷ এদিন ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিটের জন্যই লাইনে দাঁড়িয়েছেন ঘরমুখো মানুষ৷টিকিট বিক্রি চলবে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ আর ফিরতি টিকিট ২৩ সেপ্টেম্বর বিক্রি শুরু হয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হবে৷ কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বিক্রি হচ্ছে ২০সেপ্টেম্বরের টিকিট৷ এছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২১ সেপ্টেম্বরের, ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ সেপ্টেম্বরের, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বরের এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে৷একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকিট৷ এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট৷ ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের, ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০সেপ্টেম্বরের টিকিট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১অক্টোবরের টিকিট৷কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঈদুল আজহার অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে৷ একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন৷ ঈদের সময় বিক্রির টিকিট ফেরত দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি৷

জানা গেছে, বর্তমানে রেলের মোট ৮৮৬টি কোচ রয়েছে৷ ঈদ উপলক্ষে ১৩৮টি কোচ ঈদের আগেই ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে৷ ১৯৯টি ইঞ্জিন চালু রয়েছে; ঈদ সামনে রেখে মেরামতকৃত আরো ২৫টি বহরে যুক্ত হবে৷ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়৷ ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে৷ এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে৷ এই ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ঈদের আগে তিন দিন এবং ঈদের পরে সাতদিন চলবে৷ এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে৷

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়রোধে সতর্ক রয়েছি৷ এবারও ঈদে ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ যাত্রী নিরপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে৷ যেখানেই যাত্রী হয়রানি, অজ্ঞান পার্টির তত্‍পরতা দেখা যাবে সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় সক্রিয় হবে এসব নিরাপত্তা বাহিনী৷ মঙ্গলবার প্রথম দিনে স্টেশনে দেখা গেছে টিকেটপ্রত্যাশীদের চিরাচরিত সেই ভিড়৷ অনেকে সোমবার রাত থেকেই স্টেশনে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানালেন৷ ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে গেলেও টিকেট বিক্রি শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে৷প্রথম দিন দেওয়া হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বরের টিকেট৷ একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন৷ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক মুজিবুর রহমান জানান, মেইল ট্রেন ও এলাকাভিত্তিক ট্রেনের জন্য আলাদা সারি করে টিকেট বিক্রি হচ্ছে৷ সবাই সকাল ৬টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন৷ তবে রাতে যারা এসেছেন তাদের টোকেন দেওয়া হয়েছে৷ সেই টোকেন নিয়ে অনেকে সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন৷মিরপুর থেকে কিশোরগঞ্জের টিকেট কিনতে আসা অটোরিকশাচালক আমির হোসেন ও মজিবুর রহমান জানালেন, রাতেও তারা একবার এসেছিলেন, তখন হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন৷ কিন্তু সকালে এসে লাইনে অসংখ্য মানুষ দেখতে পান৷জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী সোহেল, আশিক ও নাহিদ রাতে সংগ্রহ করা টোকেন নিয়ে সকালে এসে যশোরের টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন৷ তবে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তারা টিকেট হাতে পাননিবুধবার বিক্রি হবে ২১ সেপ্টেম্বরের যাত্রার টিকেট৷ ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ২২, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকেট পাওয়া যাবে৷

ঈদের পর রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকেও ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকেট পাওয়া যাবে৷ ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর পাওয়া যাবে যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবরের টিকেট৷ঈদের আগে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর তিনদিন ও ঈদের পরে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সাতদিন পাঁচ জোড়া স্পেশাল’ ট্রেন চলবে৷ আর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় যাওয়া-আসা করবে দুটি বিশেষ ট্রেন৷ স্পেশাল ট্রেনগুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা- দেওয়ানগঞ্জ, চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ চট্রগ্রাম-চাঁদপুর, পার্বতীপুর স্পেশাল ঢাকা-পার্বতীপুর এবং খুলনা স্পেশাল ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচল করবে৷ স্বাভাবিক সময়ে সর্বোচ্চ এক লাখ ৯০ হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে আড়াই লাখ যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক৷ ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রেলের সম্পদ সীমিত, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সীমিত সম্পদ দিয়েই সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার কাজ চলছে৷সকাল ৯টায় কাউন্টার খোলার অনেক আগে থেকেই টিকেটপ্রত্যাশীদের চিরাচরিত সেই ভিড় শুরু হয় কমলাপুরে৷ অনেকে স্টেশনে অবস্থান নেন সোমবার রাত থেকেই৷প্রথম দিন দেওয়া হয় ২০ সেপ্টেম্বরের টিকেট৷ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুরে এসে টিকিট বিক্রির পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন রেলমন্ত্রী৷তিনি জানান, ঈদের তিন দিন আগে থেকে স্পেশাল ট্রেন চালু হবে, যা ঈদের পরেও সাত দিন চলবে৷ যাত্রীদের যাওয়া-আসা নির্বিঘ্ন করতে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে রেলসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছুটি৷

বর্তমানে চালু ৮৮৬টি কোচের সঙ্গে আরও ১৩৮টি কোচ মেরামত করে ঈদ সেবায় যোগ করা হবে৷ আর ১৯২টি চালু ইঞ্জিনের সঙ্গে যোগ দেবে নতুন ২৫টি ইঞ্জিন৷মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর ঈদুল ফিতরের আগেই রেলে ২৭০টি নতুন কোচ যুক্ত হবে৷ এর মধ্যে ১২০টি আসবে ভারত থেকে৷ এডিবির অর্থায়নে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসবে বাকি ১৫০টি কোচ৷নতুন ৭০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য টেন্ডার হয়েছে জানিয়ে মুজিবুল হক বলেন, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ পেলে সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে৷ রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, ঈদ উপলক্ষে রেল বহরের নিয়মিত ৮৮৬টি কোচের সঙ্গে ১৩৮টি যাত্রীবাহী কোচ যুক্ত করা হবে৷ আর নিয়মিত চলাচলকারী ১৯৯টি ইঞ্জিনের সঙ্গে আরও ২৫টি ইঞ্জিন যুক্ত করা হবে৷

এদিকে, ট্রেনের আগাম ঈদটিকেট বিক্রির প্রথম দিনের আধাবেলা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ভিড় না থাকায় সহজেই মিলেছে টিকেট৷ বেলা ১২টার পর থেকে ভিড় কিছুটা বাড়লেও নেই হুড়োহুড়ি৷মঙ্গলবার চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে সকাল ৯টা থেকে আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়৷ প্রথম দিন দেওয়া হচ্ছে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরের টিকেট৷সকালে স্টেশনে অল্প কয়েকজন যাত্রীকে টিকেটের লাইনে দেখা গেছে৷ বেলা ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে যাত্রী উপস্থিতি ছিল কম৷টিকেট নিতে আসা যাত্রী মো. কামাল হোসেন বলেন, আধ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেই টিকেট পেয়েছি৷ কোনো সমস্যা হয়নি৷

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) মকবুল আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবার টিকেটের কোনো সংকট হবে না৷যাত্রীদের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে থাকবে স্পেশাল ট্রেনও৷ কোনো সমস্যা হলে সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷প্রথমদিন নয়টি ট্রেনের বিপরীতে চার হাজার ২৮০টি টিকেট দেওয়া হচ্ছে৷এরমধ্যে ঢাকাগামী সুর্বণ এঙ্প্রেসের ৫২৬টি, তূর্ণার ৪০৯টি, প্রভাতীর ১১১টি, সিলেটগামী পাহাড়িকার ৮৫টি ও উদয়নের ১১৪টি টিকেট বিক্রি হবে৷এছাড়া চাঁদপুরগামী মেঘনা এঙ্প্রেসের ৩৮৭টি, ময়মনসিংহগামী বিজয় এঙ্প্রেস টেনের ২০৫টি এবং চট্টলার ৭৩টি টিকেট বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে৷দুপুরের পর চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আগাম টিকেটের জন্য ভিড় কিছুটা বাড়ে প্রথম দিন ভিড় কম থাকায় চট্টগ্রামে সহজেই ট্রেনের আগাম টিকেট মিলছেচট্টগ্রাম স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টম্বর প্রতিদিন চাঁদপুরগামী দুটি স্পেশাল ট্রেন চলবে৷ ঈদের পর দিন থেকে এক সপ্তাহ চলবে স্পেশাল ট্রেন দুটি৷এদিকে ট্রেন ও স্টেশনে অজ্ঞান পার্টির তত্‍পরতা ঠেকাতে এবং যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে পূর্বাঞ্চলে এবার রেলওয়ে পুলিশের এক হাজার ২৫০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে বাহিনীর এসপি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন৷আর স্টেশনকেন্দ্রিক মানুষের জটলা কমাতে এক সপ্তাহ আগে থেকে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম থেকে অবৈধ হকার উচ্ছেদও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি৷