দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৪সেপ্টেম্বর: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫৯ মিনিটে ৬৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের মৃত্যু হয় বলে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান জানান।মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।উল্লেখ্য, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মন্ত্রী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার মারা যান তিনি।২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে মৌলভীবাজার পৌরসভায় পরপর তিন বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী।তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। কলকাতার সেন্টজেভিয়ার্স স্কুল থেকে জুনিয়র কেম্রিজ ও সিনিয়র কেম্রিজ পাস করেন। পরে বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন অধ্যায়নের পর আবারও কলকাতা ফিরে যান ও ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের তাড়ণায় ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধচলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী। তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও সৈয়দ মহসিন আলীর ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। মৌলভীবাজার মুহকুমার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ মহসিন আলী।স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পর পর তিন বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। সৈয়দ মহসিন আলীর বাবা সৈয়দ আশরাফ আলী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তার মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে কলকাতা যান আশরাফ আলী। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল বাড়ি। সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মহসিন আলী।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ৩ সেপ্টেম্বর সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর। ছোট মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা শারমীন এবং স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিনও তার সঙ্গে যান।এর আগে একবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল মহসিন আলীর। এছাড়া ডায়াবেটিসের সমস্যার কারণে দিনে দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হত তাকে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য সৈয়দ মহসিন আলী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।২০০৮ সালে মেলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর গতবছর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।তিন মেয়ের বাবা সৈয়দ মহসিন আলী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে একাধিকবার সংবাদের শিরোনামে আসেন। সাংবাদিকদের নিয়ে মন্তব্যের কারণেও বিভিন্ন সময়ে তাকে সমালোচিত হতে হয়।