দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেয়া উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির ( ইউএনইপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। নীতি-নির্ধারণী নেতৃত্ব ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। ইউএনইপি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনে বিনিয়োগ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবেশগতভাবে নাজুক অবস্থায় থাকা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপের স্বীকৃতি’ হচ্ছে পুরস্কার।পরিবেশ নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর চারটি ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দি আর্থ’ পুরস্কার দিয়ে আসছে ইউএনইপি। নীতি নির্ধারণী, বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও সুশীল সমাজ-এই চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৬৭ জনকে এবার পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল।
প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর একটি হচ্ছে দেশটি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও দেশটির ওপর সবচেয়ে বেশি। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা ইত্যাদি।ইউএনইপি এর নির্বাহী সম্পাদক অ্যাচিম স্টেইনার বলেন, এই পরিস্থিতিতেও ভবিষ্যতমুখী নীতি, উদ্যোগ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জসমূহকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।জলবায়ু পরিবর্তনকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং তা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী সাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদূর প্রসারী ভূমিকা রেখেছেন।এর আগে শিশুমৃত্যুর হার কমানোয় সাফল্যের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘের পুরস্কার পান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কয়েকদিনের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ডিসেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনের অংশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কর্মসূচির অগ্রগামী বাস্তবায়নকারী এবং অভিযোজন নীতির স্বপক্ষের একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে শেখ হাসিনা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।পুরস্কারের মানপত্রে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান ২০০৯’-এর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম উন্নয়নশীল দেশ যেখানে এ ধরণের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইউএনইপি বলেছে, বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিল দ্বারা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এ তহবিলে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়,শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে সাংবিধানিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।ইউএনইপি জানায়, সংবিধানে জলাভূমি এবং বণ্যপ্রাণী রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার গৃহীত বন নীতিমালা আবহাওয়ার বেশকিছু চরমভাবাপন্ন অবস্থার প্রতিকার হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিযোজনে বস্তুগত এবং আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াও সরকার ক্রমবর্ধমান অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মোকাবেলায় জনগণকে প্রস্তুতি গ্রহণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।এতে আরো বলা হয়, এগুলোর মধ্যে বন্যাজনিত কারণে পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে স্বাস্থ্যসেবা, আগাম সতর্কীকরণে কম্যুনিটি দল গঠন এবং পরিবেশ-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তিতে উৎসাহ প্রদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।ইউএনইপি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার দূষণমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার হোম সিস্টেম গড়ে উঠেছে যা গ্রিড বহির্ভূত এলাকার ১০ শতাংশ জনগণের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটা”েছ। এছাড়া সরকার দেশের সবচেয়ে বৃহৎ গ্যাস নির্গমন উৎস – ইটভাটা থেকে গ্যাস নির্গমন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছে।
পরিবেশ, মানবস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জীবিকা সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে জাহাজ-ভাঙা শিল্প যাতে উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশ বিনষ্ট না করতে পারে সেজন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাহাজ ভাঙা শিল্পে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করে থাকে।বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ১৯৯০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ তার বার্ষিক জিডিপি’র ১.৮ শতাংশ হারিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব নিরসন শুধু অর্থনীতির প্রশ্ন নয়, বরং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।চলতি বছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি (সাইন্স এন্ড ইনোভেশন), ব্রাজিলীয় কসমেটিক ফার্ম নাচুরা (এনট্রাপ্রিনিউরিয়াল ভিশন) ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লাক মামবা এন্টি পোচিং ইউনিট (ইন্সপাইরেশন এন্ড অ্যাকশন)।