দৈনিকবার্তা-কুড়িগ্রাম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: কুড়িগ্রামে কৃষকের এখন মাথায় হাত। পরপর দুদফা বন্যায় বেড়ে ওঠা আমন ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। ২০ দিন স্থায়ী বন্যায় পানিতে ডুবে থাকা চারাগুলো অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জেলার ৩ লাখ কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সোনালি ফসলের বদলে এখন তাদের দুই চোখে শুধুই অন্ধকার। আর কৃষি বিভাগ শুধু পরামর্শ দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৮৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করেন কৃষকরা। দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় জেলার ৪৪ হাজার হেক্টর জমির চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পড়েছেন প্রায় ৩ লাখ কৃষক। গত ১৯শে আগস্ট থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই দফা বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়নের ৫০৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর ফলে তলিয়ে ৭৬ হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। ১৯ই আগস্ট থেকে ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই ৩১শে আগস্ট থেকে দ্বিতীয় দফা বন্যা আঘাত হানে যা ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ফলে তিন সপ্তাহব্যাপী বন্যার পানি ক্ষেতে অবস্থান করায় অধিকাংশ ক্ষেতের চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। দুই দফা বন্যায় পানিতে তলিয়ে যায় প্রায় ৭৬ হাজার ৬৮৮ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। এরমধ্যে ৪৪ হাজার ৮৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেতের চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এতে ৩৯৭ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছেন জেলার ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭২ জন কৃষক। বেলগাছা ইউনিয়নের টুপামারী বিলের গৃহস্থ কৃষক জিতেন সরকার জানান, আমার ৬-৭ একর জমির আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বন্যায় খেয়ে গেছে।
এখানকার বিলে কৃষকদের লাগানো প্রায় ১৬০ একর রোপা আমন ক্ষেত পচে মাটিতে মিশে গেছে। বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে পুনর্বাসন প্রয়োজন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার বলেন, চলতি বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নাভি জাতের রোপা আমনের চারা রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর যেসব জায়গায় পানি সরতে দেরি হচ্ছে সেখানে আগাম জাতের শাকসবজি, সরিষা, মাসকালাই এবং চরাঞ্চলে বাদাম আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।