Untitled-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫: চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর আরোপিত সাড়ে সাত শতাংশ মূসক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।সোমবার বেলা তিনটা ২০ মিনিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা শাহেদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে যে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার আশা করে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকবর্গ তাঁদের আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাবেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টির সুযোগ দেবেন না।এদিকে, কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে ভ্যাট প্রত্যাহারের খবর আসায় উল্লাসে মেতে উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির মুখে সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।গত কয়েক দিনের মত সোমবার সকালে রামপুরা-বাড্ডা, গুলশান, উত্তরা ও কাকলিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর বেলা ১২টার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাট প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয় বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর এলে আন্দোলনকারীদের অবস্থানে শুরু হয় উল্লাস। ভ্যাট প্রত্যাহারের খবর শুনে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে উৎসব শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।ইউআইটিএসের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যে পারে, সেটা আমরা করে দেখালাম। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির মুখে সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।একই বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, ২০১৫ সাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিজয়ের বছর। শিক্ষায় ভ্যাট দিলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তা এই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিশোধের ঘোষণার পর আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানো সংগঠন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আসাদুজ্জমান রনো বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। ভ্যাট নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিলো। তার অবসান হল।

অবশ্য ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে দুপুরে এনবিআরের আয়কর দিবসের সংবাদ সম্মেলনে তা ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে। উত্তরার বিইউএফটির শিক্ষার্থী মো. সামির সাকলাইন বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের খবর শুনে আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছি। ভবিষ্যতে আবার ভ্যাট আরোপ করা হলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছি। রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে উৎসব করছি। এখানে টিভি চলছে। আমরা সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেখতে চাই।অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিন্দু বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তবে এখনো আমরা নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

সরকার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের অবরোধে ঢাকা কার্যত অচল হয়ে গেলে সরকার জানায়, ওই ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেবে, শিক্ষার্থীরা নয়।কিন্তু কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত বেতন বাড়িয়ে ছাত্রদের কাছ থেকেই ভ্যাটের টাকা আদায় করবে- এই আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়। রোববারও বিভিন্ন সড়কে তাদের অবরোধের কারণে নগরজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় বাজেট পাসের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই মূসকের হার সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়। বাজেট পাস হয় জুন মাসে। প্রায় তিন মাস পর এই মূসক নিয়ে কতিপয় ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে নেমেছেন। আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ প্রতি ঘরে ঘরে। এবং অনেকেই অতি নির্দিষ্ট সামর্থ্যের মধ্যে ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যয়বহুল। শিক্ষা খাত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। তাঁর বিশ্বাস যে জাতিকে শিক্ষা দিলেই দেশের উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা দ্রুতগতি লাভ করে। যারা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক খরচ করে শিক্ষা গ্রহণ করছেন তাঁরা অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক দিতে চান না। এ জন্য তাঁরা ক্লাস ছেড়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে জনজীবন বিঘিœত করছেন এবং উন্নয়নের যাত্রার পথে বাধা সৃষ্টির সুযোগ করে দিচ্ছেন।এই পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার কোনোভাবেই শিক্ষাঙ্গনে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং জনজীবনে অসুবিধারও সৃষ্টি করতে চায় না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার প্রতি আগ্রহী দেশের সকল স্তরের মানুষ নির্দিষ্ট সামর্থ্যের মধ্যেও ছেলে- মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন। বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফিতে মূসক আরোপিত থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে মূসক আরোপিত নেই। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পাশাপাশি এ খাতগুলোকেও মূসকের আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে করভার সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে এক্ষেত্রে সংকুচিত মূল্যভিত্তিতে বাজেটে ১০ শতাংশ মূসক নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট পাসের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ মূসকের হার নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। বাজেট পাস হয়েছে গত জুন মাসে। প্রায় তিন মাস পর এ মূসক নিয়ে কতিপয় ছাত্র-ছাত্রী আন্দোলনে নেমেছেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক খরচ করে শিক্ষা গ্রহণ করছেন, তারা এজন্য অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে চান না। এ জন্য তারা ক্লাস ছেড়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে জনজীবন বিঘ্নিত করছেন এবং উন্নয়নের যাত্রাপথে বাধার সুযোগ করে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তি মালিকানা খাতের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যয়বহুল। শিক্ষাখাত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস যে, জাতিকে শিক্ষা দিলেই দেশের উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা দ্রুতগতি লাভ করে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সরকার প্রায় ৩৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে প্রদান করে। প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করে, খাদ্য সহায়তা দেয় এবং শিক্ষক সৃষ্টিতে ব্যাপক অবদান রাখে।সরকার আশা করে যে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাবেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টির সুযোগ দেবেন না।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করে গত ৪ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদেশ জারি করে। এর পর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ স্লোগানে গত বুধবার (০৯ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মাঝে দু’দিন বিরতি দিয়ে রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) ও সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ফের রাজপথ অবরোধ করে দাবির পক্ষে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে গোটা রাজধানীতে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।ভ্যাট প্রত্যাহারের সরকারি ঘোষণার পর পরই অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।