দৈনিকবার্তা-সিলেট, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পর খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেটের বরখাস্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩২ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান রোববার এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১৪ জন ও জামিনে থাকা আটজনের উপস্থিতিতে আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এর আগে আদালতে হাজির করা হয় লুৎফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের বরখাস্ত হওয়া পৌর মেয়র জি কে গউছ ও নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নানসহ কারাবন্দী ১৪ আসামিকে।
অভিযোগ গঠনের আগে আদালতে প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন সিলেট জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, হবিগঞ্জের জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি আকবর হোসেন প্রমুখ। আর আসামি পক্ষে শুনানি করেন এম নুরুল হক, নোমান মাহমুদ, আবদুল গাফফার ও এমাদ উল্লাহসহ প্রায় অর্ধশত আইনজীবী।শুনানি শেষে আদালত উপস্থিত ১৪ আসামি ছাড়াও জামিনে থাকা আটজন এবং পলাতক থাকা ১০ জনসহ মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।আরিফুল হক চৌধুরীর অসুস্থতার কারণে এর আগে নয় দফা পিছিয়ে যায় মামলাটির অভিযোগ গঠনের তারিখ। আজ সকালে আরিফুলকে কারাগার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে হুইল চেয়ারে করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আদালতপাড়ায় সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল। আদালত পাড়ায় মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ।২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অধিকতর তদন্ত করে গত বছরের ১৩ নভেম্বর তৃতীয় পর্যায়ে একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে। এতে আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গউছসহ নয়জন নতুন করে অভিযুক্ত হন। গত বছরের ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর আরিফুল ও গউছ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ বছরের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক আদেশে এই দুই মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করে।২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন কিবরিয়া।
তিন দফা তদন্তের পর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর আরিফুল, গউছ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম যোগ করে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।এরপর আরিফুল ও গউছ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠান। সরকার তাদের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ মামলাটি বিচারের জন্য গত ১১ জুন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। সেখানেই এ মামলার বিচার হবে।