দৈনিকবার্তা-ঢাকা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ। মাত্র তিনদিনেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী কোচ ও বাসের সব আগাম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। যারা সংগ্রহ করতে পারেননি তাদের একমাত্র ভরসা এখন ট্রেন।গত ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়৷ তবে সায়েদাবাদা কিংবা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে চলাচলকারী কোনো বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়নি৷রোববার তৃতীয় দিনের মতো দেয়া হয় বাসের আগাম টিকিট।রোববার গাবতলী বাস টার্মিনালে বিভিন্ন রুটের কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল একেবারেই কম। হানিফ, নাবিল, ডিপজল শ্যামলী ও কেয়াসহ বিভিন্ন কোচের কাউন্টারে ঈদের অগ্রিম টিকিট শেষ নোটিস লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কিছু নরমাল বাসের টিকিট এখনও পাওয়া যাচ্ছে। যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি তারা ট্রেনের আশায় প্রহর গুণছেন।গাবতলী টার্মিনালে টিকিট কিনতে আসা জাকির জানালেন, দুদিন ঘুরেও তিনি দিনাজপুরের টিকিট পাননি৷ এখন তাকে ট্রেনের টিকিটের জন্য কমলাপুরে যেতে হবে৷
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে রংপুর যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কাটতে রোববার সকাল ১০টায় গাবতলীয় হানিফ কাউন্টারে যান মাসুদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি চাচ্ছিলেন ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিট। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত থেকেও তিনি কাঙ্ক্ষিত টিকিটের দেখা পাননি। শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিট পাবেন কি না তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। মাসুদের অভিযোগ, অধিকাংশ কাউন্টারের টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে। বেশি টাকা দিলেই কাউন্টারের লোকজন অন্য স্থান থেকে টিকিট এনে দিচ্ছে।প্রায় একই অভিযোগ বরিশালের টিকিট প্রত্যাশী অশিকের, খুলনার টিকিট প্রত্যাশী লালন মিয়ার, নীলফামারীর টিকিট প্রত্যাশী আব্দুল মমিনের, মাগুরা টিকিট কাটতে যাওয়া মো. ওবায়েদ মিয়ার। তারা বলছেন,কল্যাণপুর এসএ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন ও এসআর পরিবহনের কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট তারা পাননি। কাউন্টার মালিকদের অনিয়মের কারণে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে অনেক সময় আছে, যে বেশি টাকা দিতে পারবে তিনিই টিকিট পাবেন। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। আজ চলছে দ্বিতীয় দিনের মতো টিকিট বিক্রি। টিকিট কিনতে এসে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিন না পেয়ে এরা সবাই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করার জন্যই কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট নেই।টিকিট না পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ দেখয়েছেন যাত্রীরা।হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মোশাররফ জানান, শুক্রবারই বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের আগের তিনদিনের টিকিট ওই দিনই শেষ হয়ে যায়। ফলে শনিবার যাত্রীদের ওই তিন দিনের টিকিট দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে দু-একটি পরিবহন ওই তিনদিনের জন্য নতুন গাড়ি সংযোজন করেছে। তারা টিকিট বিক্রি করেছে।শনিবার রাজধানীর গাবতলীতে হানিফ, ঈগল, সোহাগ, শ্যামলী, নাবিল, এ কে ট্রাভেলস, এসআরসহ বিভিন্ন কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। কয়েকটি কাউন্টারের সামনে নোটিশ দিয়ে বা মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ২১-২৩ সেপ্টেম্বরের কোনো টিকিট নেই।
সাকুরা, হানিফ, সোহাগ, ঈগল, শ্যামলী, এসআর, ডিপজল, আগমনীসহ প্রায় সব বাস কাউন্টারেই ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বরের কোনো টিকিট নেই। তবে ১৯ সেপ্টেম্বর সকালের এবং ২০ সেপ্টেম্বরের কিছু টিকিট এখনো পাওয়া যাচ্ছে।একে ট্রাভেলস কাউন্টারের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, ঢাকা-খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের কাউন্টারে ও অনলাইনে একযোগে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে একটু এদিক- সেদিক হতে পারে। তবে কাউন্টারের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সুষ্ঠুভাবে টিকিট বিক্রির জন্য।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) বাসের টিকিট বিক্রি শুরু করবে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে। এর একদিন আগে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ট্রেনের টিকিট।রেলওয়ে জানিয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বর পাওয়া যাবে ২০ সেপ্টেম্বরের ট্রেনের টিকিট; ১৬ তারিখে বিক্রি হবে ২১ তারিখের টিকিট, ১৭ সেপ্টেম্বর পাওয়া যাবে ২২ তারিখের টিকিট, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট পাওয়া যাবে। ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর পাওয়া যাবে যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবরের টিকিট।একজন যাত্রী চারটির অধিক টিকিট কিনতে পারবেন না। এছাড়া বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না।
এদিকে, যাত্রীসাধারণের হয়রানি কমাতে বাস ও ট্রেনের মতো লঞ্চেও টিকিটিং ব্যবস্থা চালু বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর আওতায় টিকিট কেটে লঞ্চে উঠতে হবে যাত্রীদের।এজন্য সদরঘাট টার্মিনালে নতুন করে ২২টি টিকিট কাউন্টার নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণনৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, সদরঘাটের মূল ঘাটের পশ্চিম পাশে নবনির্মিতি ভবনে এসব কাউন্টার করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এগুলো উন্মুক্ত করা হবে।
এসব টিকিট কাউন্টার থেকে সব লঞ্চ মালিকরা নিজেদের সুবিধা মতো টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করবেন। যাত্রীদেরও কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়েই লঞ্চে উঠতে হবে। টিকিট ছাড়া কেউই লঞ্চে উঠতে পারবেন না।ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে লঞ্চে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য এ ব্যবস্থা চালু করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, এবারের ঈদে তাৎক্ষণিক টিকেট পাওয়া গেলেও আগামী বছর থেকে বাস, ট্রেনের মতো অগ্রিম টিকিট দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া অনুমোদিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় ও মাঝপথে যাত্রী উঠালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান করা হয়েছে। সদরঘাটের ইজারাদারদের হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সদরঘাটে পানীয়জল, পয়নিষ্কাশন, যাত্রীদের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধা ও সেবা অধিকতর উন্নত করা হয়েছে।এর আগে এক সভায় পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে লঞ্চে টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর টিকিট কাউন্টার উন্মুক্তের মধ্য দিয়ে এ সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন হচ্ছে।
এ টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হলে যার যার মতো লঞ্চে ওঠা, নৌকা দিয়ে লঞ্চে ওঠা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই রোধ করা যাবে বলে মনে করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।এছাড়া ঈদের আগে চার দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের চার দিন (মোট নয় দিন) নৌপথে বালখেট এবং কার্গো বন্ধ রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।