দৈনিকবার্তা-ঢাকা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফের রাজপথ দখল করে বিক্ষোভ করেছে। রোববার ক্লাস বর্জন করে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এবং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ সড়ক অবরোধ করে পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করছে তারা।এতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানীর সড়কগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। তীব্র যানজটে অফিসগামী মানুষ পড়ে চরম ভোগান্তিতে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্বিষহ গরম এড়াতে পায়ে হেটেই গন্তব্যে রওনা দেন যাত্রীরা।তবে বিকাল ৪টায় সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিক্ষোভ স্থগিত ঘোষণা দিয়ে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। এদিকে সাভার, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানেও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ ভাগ আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গত বুধবার থেকে কয়েক দফা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী েেরাববার সকাল ১০টার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়।ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, উত্তরা ও রামপুরাসহ রাজধানীজুড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ দুঃসহ ভোগান্তিতে ফেলেছে নগরবাসীকে। কর্মসূচির শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে সতর্কাবস্থানে রয়েছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কর্মসূচিকে ঘিরে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে।
টিউশন ফি’র ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল ১০টার পর থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে সোয়া ১০টার পর রাজপথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি আদায়ে লাখো ছাত্রের একই স্বর, ভ্যাট দেবো না গুলি কর’, নো ভ্যাট অন এডুকেশন’, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড হলে, ভ্যাট কেন?’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তারা।প্রথমে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়কে নেমে অবরোধ শুরু করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এরপর বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন উত্তরা, ক্যামব্রিয়ান, এশিয়ান, শান্তা মারিয়াম, বিজিএমইএ, আইইউবিএটি ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি (উত্তরা শাখা), কলাবাগান থেকে শংকর পর্যন্ত সড়কে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, গুলশান ২ নম্বর মোড়ে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, শিকদার ও শাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ এবং বনানীতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে এসব এলাকার সড়কগুলোতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় । এতে দুঃসহ ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মস্থলমুখী সাধারণ মানুষ। অনেককে রিকশা-সিএনজি ভাড়া করে ভেঙে ভেঙে, এমনকি পায়ে হেঁটে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা দিতেও দেখা গেছে।
অবশ্য, কর্মসূচির কারণে যেন জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় এবং যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য সকাল থেকেই চিহ্নিত পয়েন্টগুলোতে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।বনানী মোড়ে এআইইউবি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ কারণে মহাখালী ফ্লাইওভারের জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন অংশ থেকে বনানী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য সতর্কাবস্থানে ছিলেন ।বারিধারায় সকাল সাড়ে ১০টার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে প্রগতি সরণিতে অবস্থান নেন। তারা সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস সড়কে আড়াআড়িভাবে রেখে তার ওপর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। বিভিন্ন দাবিতে লেখা এ স্লোগানের মধ্যে রয়েছে, লাখো ছাত্রের একই স্বর, ভ্যাট দেবো না গুলি কর’, নো ভ্যাট অন এডুকেশন, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড হলে, ভ্যাট কেন?’ ইত্যাদি। এখানে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । অবস্থানস্থলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং জনভোগান্তি কমাতে সতর্কাবস্থানে ছিল পুলিশ।রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়কে কেবল টিউশন ফিই নয়, শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার দাবির বিভিন্ন স্লোগানে এ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের সড়ক অবরোধের কারণে রামপুরা, হাতিরঝিল, বনশ্রী, বাড্ডা এলাকার যান চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসে ব । তবে আমিন বলছেন, শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন হয়।ধানমন্ডিতে সাড়ে ১০টার পর কলাবাগান থেকে শংকর অভিমুখে বিক্ষোভে করেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এখন ওই এলাকার সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন তারা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে গাবতলীমুখী মিরপুর রোড, ঝিগাতলা থেকে মোহাম্মদপুরমুখী রোড এবং নিউমার্কেট ও শাহবাগমুখী সড়কগুলো পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এসব এলাকায়ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্কাবস্থানের ছিল । ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ওহিদুল ইসলাম তাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের রাজপথ অবরোধের কর্মসূচিতে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছি।’ রমনা বিভাগের এডিসি ইব্রাহীম খানও সতর্কাবস্থানে থাকার কথা জানান ।গুলশান ২ নম্বরে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, শিকদার ও শাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তাদের অবস্থানের কারণে এ মোড় ঘিরে থাকা সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । তবে, আন্দোলনকারীরা হজযাত্রী, রোগী, স্কুল শিক্ষার্থী বহনকারী গাড়ি চলাচলে বাধা দেন নি।
উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকায় উত্তরায় সড়কে বিআরটিসির বড় একটি বাস আড়াআড়িভাবে রেখে বিক্ষোভ করেছেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কুশপুতুলও পোড়াতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় অবস্থানের কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে খিলক্ষেত-কুড়িল পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল । শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কর্মসূচির প্রভাবে পুরনো ঢাকাসহ পুরো রাজধানীজুড়েই যান চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসে । সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কলাবাগান ওভারব্রিজ, সোবহানবাগ মোড়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।একই সময়ে বসুন্ধরায় ইনডিপেনডেন্ট ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এছাড়া প্রগতি সরণির সড়কে আইইউবির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।এদিকে রাজধানীর আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্যাম্পাসে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করলেও পৌনে ১১টার দিকে তারা রামপুরা ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় তারা নানা স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্টার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড এলাকায় এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে সড়কে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।ঢাকা-আরিচা মহাড়কের বাইশমাইল এলাকায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে ওই সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।এছাড়া গুলশান, মহাখালী, রামপুরা, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, রাফা প্লাজা মোড়, মানিক নগর ও ধানমন্ডির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। তারা সড়ক অবরোধ করায় ওইসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।তবে এসব এলাকায় পুলিশ অবস্থান নিলেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আন্দোলনের নামে বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে ধ্বংসাত্মক কর্যকলাপ করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ইস্যু বানিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে কোনো নাশকতা সৃষ্টি করার সুযোগ না পায় সেজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুপুর সাড়ে ১২টায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সড়কগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে মানুষকে পায়ে হেটে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। বেসরকারি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।শনিবারের মতো আজ রোববারও ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীরা রাজপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তারা ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন, ক্যাম্পাসে অবস্থান, মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছে। আন্দোলনের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়ও বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এই ব্যানার ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার ভ্যাট বিষয়ে ফের নতুন বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাদের ওপর আরোপিত ভ্যাট দেবে। তারা রাজিও হয়েছে। এই ভ্যাটের কারণে যাতে নতুন করে টিউশন ফি বা অন্য কোনো নামে বাড়তি অর্থ নিতে না পারে, সে জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ভ্যাট দেবে। আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদেরই ভ্যাট দিতে হবে।চলতি বছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করে। এর প্রতিবাদে গত জুন থেকে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ও বৃহস্পতিবার ঢাকার অন্তত ৯টি পয়েন্ট অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেয় শিক্ষার্থীরা। শুক্রবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে মানববন্ধন-বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি পালন করে। এদিকে, শিক্ষার ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্পট থেকে তাদের অবস্থান কর্মসূচি রোববারের মতো শেষ করেছেন। তবে সোমবার সকাল থেকে তাদের আন্দোলন ফের শুরু করবেন। রোববার বিকেলে রাজধানীর রামপুরা, বারিধারা, গুলশান, বনানী, উত্তরা, ধানমণ্ডিসহ সব পয়েন্ট থেকে রোববারের মতো অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে সড়ক থেকে সরে যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। টিউশন ফি’র ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার সকাল ১০টার পর সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে তারা রোববারের মতো অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন এবং বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সরে যান।পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকালে আবারও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাস্তায় অবস্থান নেবেন। এদিকে, শিক্ষার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইইউবি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে।মূলত শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। রোববার সকাল থেকে প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়কেই যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষজন। অনেকে পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে পৌঁছান।অপরদিকে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট নেবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলন সরকারের বিপক্ষে নয়, সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিপক্ষে।তারা বলেন, শিক্ষার্থীও নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ও নয়, কেউই ভ্যাট দেবে না।