doinikbarta-1 (1)

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫: ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত বাস,মিনিবাস ও অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ তবে দূরপাল্লায় চলাচলকারী গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ছে না৷ আগামী ১ অক্টোবর থেকে বাস ও মিনিবাসের এবং ১ নভেম্বর থেকে অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে৷বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বৈঠকের পর পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন৷ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে গণপরিবহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ বিষয়ে বিআরটিএ’র সুপারিশমালা পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়৷

সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে প্রতি যাত্রীর জন্য আগের ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে৷সিএনজিতে চলে না এমন গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে না বলে তিনি জানান৷আগে প্রথম দুই কিলোমিটারে অটোরিকশার ভাড়া ছিল ২৫ টাকা৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা৷ পরের প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়ে হয়েছে ১২ টাকা৷ আগে এই ভাড়া ছিল সাত টাকার বেশি৷ প্রতি মিনিটের ওয়েটিং চার্জ বেড়ে হয়েছে দুই টাকা৷ আগে এই ভাড়া ছিল এক টাকা ৪০ পয়সা৷মালিকদের অটোরিকশা জমা দেওয়ার ভাড়া আগে ছিল ৬০০ টাকা, এখন তা বেড়ে ৯০০ টাকা হয়েছে৷

ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে চলা সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়াও বাড়ছে৷ বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা করে বেড়েছে৷ আগে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল এক টাকা ৬০ পয়সা৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে এক টাকা ৭০ পয়সা৷ মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ছিল এক টাকা ৫০ পয়সা, এখন তা বেড়ে এক টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে৷ বৈঠকের পরে মন্ত্রীর কাছে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়বে কি না, জানতে চাওয়া হয়৷ এ সময় তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়বে না৷ কারণ দূরপাল্লার বাস সিএনজিতে চলে না৷সর্বনিম্ন ভাড়া অপরিবর্তিত রেখে প্রতি কিলোমিটারে বাস-মিনিবাসের ভাড়া ১০ পয়সা করে বাড়িয়েছে সরকার৷ এছাড়াও যেকোনো দূরত্বে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১৫ টাকা৷ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা এবং চট্টগ্রামে বাস-মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়লেও দূরপাল্লার পরিবহনে কোনো ভাড়া বাড়ছে না৷

ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরিসংদী- ডিটিসিভুক্ত এলাকা এবং চট্টগ্রামে এই ভাড়া কার্যকর হবে৷বাস-মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাস ৭ টাকা এবং মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকাই থাকবে৷ সিএনজির সর্বনিম্ন ভাড়া ৪০ টাকা ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটার যেকোনো দূরত্বে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে৷পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ টাকা৷ বিরতিকালে প্রতি মিনিটের ভাড়া ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ২ টাকা করা হয়েছে৷ সিএনজিচালিত অটোরিকশার জমা আগের ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০০ টাকা৷ ওবায়দুল কাদের বলেন, মিটার ঠিকঠাক করার জন্য মালিকেরা সময় চেয়েছেন, এজন্য ১ নভেম্বর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে৷ সিএনজি চালুর আগে মিটার ক্যালিবারেশন করে নিতে হবে, অন্যথায় চলতে পারবে না৷

কঠোরভাবে তদারকি করা হবে মন্ত্রী বলেন, সবাইকে খুশি করে করতে পারবো না৷ তারপরও বাস্তবসম্মত এবং সব দিক সামলে নিয়ে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷সিএনজির মিটারের বিষয়টি স্ট্রিক্টলি ফলো করা হবে, ভাড়ার তালিকা বাসে টানাতে হবে৷ ঢাকা-চট্টগ্রামে বাস-মিনিবাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া মনিটরিং করার জন্য বিআরটিএ’র ১১ সদস্যের মনিটরিং টিম গঠন করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং পরিবহন মালিক ও ভুক্তভোগীর প্রতিনিধি থাকবে৷ ভাড়া না মানলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবে, মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে, ব্যবস্থা নেবে৷মন্ত্রী বলেন, অতীতে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে যে যার মতো ভাড়া বাড়িয়েছে৷ এবার আর তা হবে না, আমরা মন্ত্রণালয় থেকেই মনিটরিং করব৷গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরি প্রেক্ষিতে গণপরিবহনের ভাড়া পুননির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবাইকে ডাকা হয়নি৷

ভাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিছু কিছু বিষয় বিবেচনা করতে বলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঈদের আগে যেন কার্যকর না করা হয়৷

সভায় সড়ক বিভাগ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পরিবহন মালিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷এদিকে, গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি৷ সংগঠনটির দাবি, সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করা হলে ভুয়া এবং অযৌক্তিক ব্যয় বাদ দেওয়া গেলে বিদ্যমান ভাড়া আরও কম হওয়ার কথা৷ তাই ভাড়া বৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷বৃহস্পতিবার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পর সংগঠনের চেয়ারম্যান শরীফ রফিকউজ্জামান ও মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন৷এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি অবিলম্বে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে৷বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ভাড়া নিয়ে সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসবে সেই ভয়ে সরকার যাত্রী প্রতিনিধি বাদ দিয়ে শুধু মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে সভা করেছে৷ এতে যাত্রী স্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে৷ ভাড়া নৈরাজ্যকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়বে৷ তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির আগেই মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়াতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রচেষ্টা চালায়৷ নামমাত্র জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও বাস ভাড়া কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে৷ নতুন গাড়ি দেখিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড়, মেয়াদ উত্তীর্ণ বাস ও অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি করা যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করার শামিল৷ তাই পুরোনো গাড়ির ও নতুন গাড়ির আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা জরুরি৷ সরকারের সিদ্ধান্তে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ একচেটিয়াভাবে প্রাধান্য পেয়েছে৷ এটা বর্তমান সরকারের গণমুখী নীতির পরিপন্থী৷