DSC_8959

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫: আজ সকাল ১০.০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের উদ্যোগে সহ¯্রাধিক শ্রমিকের অংশগ্রহনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন ও বক্তব্য রাখেন ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন- ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক ডঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ লেবার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আবদুস সালাম খান, টিউসির সভাপতি শহিদুল্লাহ্্ চৌধুরী, সহ সভাপতি- লুৎফুর রহমান ও মাহবুবুল আলম, টিউসির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ্যাডঃ মন্টু ঘোষ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজিকুজ্জামান রতন প্রমূখ। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবদুর রাজ্জাক, সহ সম্পাদক নূরুল আমিন বাবুল, প্রচার সম্পাদক মোঃ আক্তার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শেখ আকরাম হোসেন ও বিএলএফ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ তৈয়্যেবুর রহমান।

জনাব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনারা অবগত আছেন ট্যানারী বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানীমূখী শিল্প। দেশের সর্বমোট রপ্তানী আয়ের ৩% আসে ট্যানারী শিল্প থেকে। সর্বাধিক কেমিক্যাল ব্যবহারকারী ট্যানারী বাংলাদেশের এবং বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প। এইরূপ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত শ্রমিকেরা শিল্পকে গড়ে তুলেছে। জন্য এখানে কোন প্রকার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের যেমন কোন ব্যবস্থা নেই, তেমনি ন্যুনতম মজুরী হতেও তারা বঞ্চিত, শ্রম আইন এখানে উপেক্ষিত। ২০১১ সালে সরকার ট্যানারী শিল্পের শ্রমিকদের জন্য একটি ন্যুনতম মজুরী নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করলেও অদ্যাবধি তা কোথাও বাস্তবায়িত হয়নি। আজ যখন পরিবেশ বান্ধব আধুনিক ট্যানারী শিল্প নগরী গড়ে উঠছে তখন তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে শিল্প ধ্বংসের। দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিক বাদ দিয়ে ট্যানারী স্থানান্তর হলে চামড়ার মান নষ্ট হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী চামড়ার চাহিদা কমবে, চামড়া পাচার হয়ে বাজার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে। দয়া করে মালিক-বিসিকের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। শ্রমিকদের ন্যায় দাবীসমূহ বাস্তবায়ন করুন।

DSC04016

জনাব আবদুল মালেক বলেন, সাভারস্থ আধুনিক ট্যানারী শিল্প অঞ্চলে হাজারীবাগ ট্যানারী স্থানান্তরের কথা শুনে আমরা শ্রমিকেরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে, এবার বোধ হয় শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতের মাধ্যমে শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং নতুন যায়গায় শ্রমিকদের পূণর্বাসন করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা আজ ভিন্ন। যে বিস্তির্ণ এলাকায় ট্যানারী শিল্প স্থানান্তর হচ্ছে সেখানে শ্রমিকদের অবস্থান করার/বাস করার জন্য নিকটবর্তী কোন লোকালয় নেই। নেই অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। ট্যানারী স্থানান্তরের পূর্বেই সেখানে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শিল্পের সাথে জড়িত অন্যান্য লিঙ্কেজ প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য সুবিধাদি সংযুক্ত করে বিস্তারিত রোডম্যাপ উপস্থাপন করার কথা থাকলেও বিসিক তা করেনি। সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্বেও বিসিক নেতিবাচক ভুমিকা পালন করছে। মালিকদের মধ্যে সকল জমি ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ক্ষতিপূরন হিসেবে ২৫০ কোটি টাকাও দিয়েছে। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
ডঃ ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন- ট্যানারী শ্রমিকদের দাবী ন্যায্য দাবী। শিল্প বাাঁচাতে শ্রমিকদের এই দাবী দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সরকারের উপর মহলের সুদৃষ্টি দেয়ার সময় হয়েছে। দ্রুত এব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে গভীর সংকটে পড়বে সম্ভাবনাময় ট্যানারী শিল্প।আবদুস সালাম খান বলেন- শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা না দিয়ে শিল্প টিকতে পারে না। পরিবেশ বান্ধব আধুনিক শিল্প গড়তে হলে প্রথমেই শ্রমিকের বাসস্থান, ইউনিয়ন কার্যালয়, চাকরীর নিশ্চয়তা ও মজুরীসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

দেশ বৈদেশিক মূদ্রা হারাবে। কোন হটকারী সিদ্ধান্তে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পকে ঝুঁিকর মধ্যে ফেলে দেয়া উচিত হবে না। শ্রমিকদের বিষয়সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।বক্তারা আরও বলেন- ট্যানারী শিল্প একটি বিশেষায়িত শিল্প। কোন সাধারণ শ্রমিক দিয়ে ট্যানারীর কাজ করানো সম্ভব নয়। যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা দক্ষ শ্রমিক ট্যানারী শিল্পের প্রাণ। কেবলমাত্র এই দক্ষ শ্রমিকই শিল্পের অগ্রযাত্রাকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করতে পারে। অন্যথায়, অদূরদর্শী ও হঠকারী যে কোন সিদ্ধান্তে এই শিল্পের অগ্রযাত্রা যেমন ব্যাহত করতে পারে তেমনি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে সম্ভাবনাময় এই শিল্প। সরকার ও উদ্যোক্তাগণের বিপুল বিনিয়োগ অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে।তাই শিল্প ও শ্রমিকের স্বার্থে ট্যানারী স্থানান্তরের পূর্বে শ্রমিকদের ন্যুনতম দাবীসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায়, দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। শ্রমিকরা আজ ঐক্যবদ্ধ, আমরা আর বঞ্চিত হতে চাইনা। শ্রমিক বাদ দিয়ে ট্যানারী স্থানান্তর মানি না, মানবো না। বিসিকের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না।