দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫: স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবি এবং নতুন বেতন কাঠামোয় সিলেকশনগ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে চরম ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী জ্ঞানের অভাবে আন্দোলন করছে। এই কর্মবিরতির কোনো জাস্টিফিকেশন নেই। তারা জানেই না পে- স্কেলে তাদের জন্য কি আছে, কি নেই।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়াতে আর কোনো বেতন কাঠামো করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।মঙ্গলবার নতুন পে-স্কেল নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।মন্ত্রিসভায় সদ্য অনুমোদন পাওয়া বেতন কাঠামো নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন।তিনি বলেন, আমরা এমন একটি বেতন কাঠামো করব, যা বাজারের সঙ্গে গ্রহণ যোগ্য হবে। প্রায়ই বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কম। এ জন্য তাঁরা একটু ঘুষটুষ খায়। এই জিনিসটা তখন চলে যাবে। আমি আশা করি, বেতন কম এই অভিযোগ আর সরকারি চাকরিজীবীরা করতে পারবে না। এখন থেকে আর কোনো বেতন কাঠামো হবে না।অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। পরবর্তী সরকার মানবে কি মানবে না, সেটি ভিন্ন বিষয়। ভবিষ্যতে একজন কর্মকর্তা থাকবেন, যিনি পুরো বিষয়টি দেখবেন। ওই কর্মকর্তা বেতন কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না, সে ব্যাপারে প্রতিবছর মন্ত্রিসভাকে প্রতিবেদন দেবেন।
নতুন পে-স্কেলে কীভাবে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি হয়েছে-সে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন তিনি।গত বছর ডিসেম্বরে বেতন কমিশন অষ্টম পে- স্কেল সুপারিশ করার পর থেকেই আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।তাদের অভিযোগ, সপ্তম বেতন কাঠামোতে সচিব, মেজর জেনারেল ও সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকরা একই গ্রেডে থাকলেও নতুন কাঠামোতে তাদের পদাবনতি হয়েছে।এ অভিযোগে মঙ্গলবারও দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা।তাদের এই আন্দোলনের সমালোচনা করে এক পর্যায়ে মুহিত বলেন, শিক্ষকদের করাপট প্রাকটিস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।দুর্নীতির উদাহরণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেমন প্রত্যেকটি শিক্ষক প্রফেসর হয়। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসর (পদে) তাদের ইচ্ছেমত প্রমোশন দেয়।অসংখ্য প্রফেসর হয়েছে দেশে। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও লেকচারার। এদের মধ্যে লেকচারার সবচেয়ে কম। নিচে ১০ জন হলে উপরে এক হাজার। এটা কোনো সার্ভিস হল? শুধু উপরে পদোন্নতি হবে। এটা ঠিক করা দরকার।সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার মূল বেতন ধরে নতুন যে বেতন কাঠামো সরকার অনুমোদন করেছে, অর্থমন্ত্রীর ভাষায় তা ‘যুগান্তকারী’।আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি পে-স্কেল দেব, যেটা বাজারের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য হবে। বাজারের সমান হবে না।কারণ এই যে প্রায়ই বলা হয়, সরকারি চাকুরেদের বেতন কম, এজন্য তারা একটু ঘুষ টুস খায়, যাতে এই জিনিটা চলে যায়ৃ। আশা করছি এখন আর সরকারি চাকুরেরা বেতন কম এই অভিযোগ আর করতে পারবে না।
নতুন করে আর কোনো পে-কমিশন হবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যেটা করা হবে, একজন কর্মকর্তা থাকবেন, যিনি পুরো বিষয়টি দেখবেন। তিনি প্রতিবছর কেবিনেটে প্রতিবেদন দেবেন- কোনো পরিবর্তন দরকার আছে কি না।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রতিবছর ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে জানান তিনি।সরকারি পে-স্কেলের প্রতিফলন বেসরকারি খাতেও থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ায় মূল্যষ্ফীতি বাড়বে না বলেও মনে করে মুহিত।তিনি বলেন, মূল্যষ্ফীতি নামছে, এটা নামতে থাকবে। আবার বাজারে উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু দাম বাড়ানো এখানকার ব্যবসায়ীদের পেশা হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাজ প্রফিট মার্জিন বাড়ানো। বাংলাদেশে যত প্রফিট মার্জিন, অন্য কোনো দেশে নেই।অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রায়ই বলা হয় সরকারি চাকুরেদের বেতন কম, তাই তারা ঘুষ খান। এটাও ঠিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালো বেতন না পাওয়ায় দুর্নীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিলো। নতুন এই পে- স্কেল দেওয়ায় এখন অনেকটা কমে যাবে। মুহিত বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা সব সময় দুর্নীতি করে। সেটা কোনো দিনই বন্ধ হবে না। তবে এদের দুর্নীতি বন্ধ করতে জনগণের মতামত নিতে হবে। কারণ টাকাটা জনগণই দেয়।সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ায় দ্রব্যমূল্য বাড়ার সম্ভাবনা নেই। যদি বাড়ে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এটি করেছিলো। আমরা তার বাস্তবায়ন করেছি। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের সঙ্গে তুলনা করলে পে- স্কেলই গ্রহণযোগ্য হবে। পরবর্তীতে কেউ ক্ষমতায় এসে না মানলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না। মুহিত বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনো পে-স্কেল হবে না। পে-স্কেলে কোনো পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজন দরকার হলে একজন কর্মকর্তারা নিয়োগ করা হবে। তিনি প্রতি বছর মন্ত্রিপরিষদে রিপোর্ট করবেন। আর সেই রিপোর্টের আলোকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।