অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির হুমকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫: স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন।পূর্বঘোষণা অনুযায়ি মঙ্গলবার সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ পরীক্ষা বন্ধ ছিল।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব প্রফেসর মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো আশা করছেন। এ দাবি পূরণ না হলে আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবো।ঘোষিত পে স্কেল অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, অষ্টম জাতীয় পে- স্কেলে বিশ্ববিদালয় শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে ও শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে র্যালি ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক ও ভবন প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়।

রালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, পে-কমিশন রিপোর্ট তৈরীর সঙ্গে জড়িত সচিবগণ অপকৌশল করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মর্যাদার অবমাননা করার চেষ্টা করছেন। তারা এতে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের বেতন স্কেল সচিবদের দুইধাপ নিচে নামিয়ে এনেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিকে অগ্রাহ্য করেছে।তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দেলন করে যাচ্ছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন কোন সাড়া দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা চাইলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দিতে পারেন বলে হুমকি দেন তিনি। দাবি মানা না হলে আগামীতে লাগাতার কর্মসূচির হুমকিও দেয়া হয়।

এদিকে, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছেন, তারা এখন ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।ওই কমিটির প্রস্তাব সন্তোষজনক না হলে আবারও আন্দোলনে যেতে ‘বাধ্য হবেন’ বলেও হুঁশিয়ার করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।চার দফা দাবিতে দেশের ৩৭টি রাষ্ট্রায়াত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মঙ্গলবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। পাশাপাশি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।সপ্তম বেতন কাঠামোতে বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচিব, সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক সর্বোচ্চ গ্রেডে (গ্রেড-১) ছিলেন। আর জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা গ্রেড-২ এবং অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ এ বেতন পেয়ে আসছিলেন।

অষ্টম বেতন কাঠামোতে অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অবস্থান ঠিক থাকলেও সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপকদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যা নিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন এই বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। সেখানে শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পরে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়।সেজন্য মন্ত্রিসভা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার দায়িত্ব দিয়েছে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে।তবে তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে মঙ্গলবারের কর্মবিরতির কর্মসূচি বহাল রাখেন বিশ্ববিদ্যারলয়ের শিক্ষকরা। সে অনুযায়ী এদিন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি।

কর্মবিরতি চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা সাড়ে ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মৌন মিছিল বের করেন। টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছে শেষ হয় তাদের মৌন মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন।পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা বেতন কাঠামোতে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখার দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে আমাদের আন্দোলনের জয়গাথা রচিত হয়েছে।শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য এসেছে; একটি কমিটিকে এটা নিয়ে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সেই কমিটির দিকে তাকিয়ে আছি।

ওই কমিটির সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের রাখার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, শিক্ষকদের মধ্য থেকেই এ দাবি এসেছে, যাতে কোনো কমিটি নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রতিবেদন না দিতে পারে।ফেডারেশন মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আগামী রোববারও আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। তবে দাবির বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাই শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বসে ওইদিনের কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানা গেছে।