image_135423_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: মূল বেতন দ্বিগুণ করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় পে- স্কেলের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নুতন এই কাঠামোর মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আর ভাতা কার্যকর হবে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে।সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সকাল দশটার দিকে শুরু হওয়া মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষ হয় দুপুর দুইটায়। এরপর শুরু হয় ব্রিফিং। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের নতুন পে স্কেলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।নতুন বেতন কাঠামোয় গ্রেড আগের মত ২০টিই থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গ্রেড ২০টিই থাকবে। সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা তবে এই গ্রেডে কোন ইনক্রিমেন্ট থাকবে না, বেতন হবে ফিক্সড। সর্বনিম্ন বেতন হবে ৮ হাজার ২৫০ টাকা। অবশ্য যা পরে এক পর্যায়ে ২০ হাজারের বেশিও হতে পারে।সিলেকশন গ্রেড অব্যাহত থাকবে না জানিয়ে সচিব বলেন, বেতন সবার জন্য বাড়ছে। কাজেই কিছু পদ বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা দেওয়ার চেয়ে সবাইকে সুবিধা দেওয়াই যৌক্তিক। একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি এখন থেকে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়তি একটি ভাতা পাবেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত ২১ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরে ১৬টি গ্রেডে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করা হয়েছিল।ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সচিব কমিটি গত ১৩ মে সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ এবং সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মূল ধরে কাঠামো সুপারিশ করে।অর্থমন্ত্রণায়ে পর্যালোচনার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে নতুন এই কাঠামো অনুমোদন করা হল।

বেতন কমিশন ১৬ গ্রেডের কাঠামো দিলেও সচিব কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি গ্রেডেই এই বেতন কাঠামো করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রেণি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।তিনি বলেন, এখন থেকে আর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ- কোনো শ্রেণি থাকবে না। গ্রেড দিয়ে পরিচিতি হবে। আগে শ্রেণি দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিচিতি হত।মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী টাকা পাবেন। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকেই তা কার্যকর হবে।তবে কীভাবে শিক্ষকদের এই বেতন দেওয়া হবে তা অর্থ বিভাগ পরিপত্র দিয়ে নির্ধারণ করবে। শিক্ষকদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।আর নতুন কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসন্তোষের প্রসঙ্গে টেনে মোশাররাফ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে মন্ত্রিসভা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছে।তাদের অবস্থান নিয়ে সরকার সচেতন। তারা নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। যে যে গ্রেডে আছেন সেই গ্রেডের নতুন কাঠামোতেই বেতন পাবেন।এর আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে সপ্তম বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল ২০০৯ সালের ১ জুলাই। সে অনুযায়ী এতোদিন সরকারি চাকরিজীবীরা সর্বনিম্ন ৪,১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা বেসিক ধরে বেতন পেয়ে আসছিলেন।এর সঙ্গে ২০১৩ সালের ১ জুলাই তারা পাচ্ছিলেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা, যা নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে বিলুপ্ত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তিন বাহিনীর প্রধানের জন্য একই বেতন নির্ধারণ করে সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগে সেনা প্রধানের বেতন নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানের চেয়ে বেশি ছিল। এখন তিন বাহিনীর প্রধানের বেতনই ৮৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনী প্রধানের র‌্যাংকও আপডেট করা হবে।তিন বাহিনীর প্রধানরা এখন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী মূখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তবে মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন ও চার নম্বর গ্রেড প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড দুই-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর এক নম্বর গ্রেডে কোনো প্রবৃদ্ধি হবে না।এ ব্যাপারে মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মূল বেতনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরুন, কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা। ৫ শতাংশ হারে এক বছরে তার প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে পট্রত্যেক বছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। প্রতি বছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে।সচিব বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে আগে টাইম স্কেলে অনুযায়ী যে বেতন বাড়তো, নতুন পদ্ধতিতে তার চেয়ে বেশি বেতন বাড়বে।

এবার থেকে বাংলা নববর্ষ ভাতা শুরু হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, সবাই ধর্মভিত্তিক ভাতা পায়। কিন্তু সবার জন্য এবার থেকে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করা হবে।এছাড়া এখন থেকে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো শ্রেণীবিভাগ থাকবে না উল্লেখ করে সচিব বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এখন থেকে এটি বিলুপ্ত। প্রথম শ্রেণী বা তৃতীয় শ্রেণী বলে কিছু থাকবে না। সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। তাদের জন্য এটি হবে মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট।সত্যায়িত করার ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করে সচিব বলেন, বিষয়সহ শ্রেণী অনুযায়ী যেসব কাজ, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার জায়গায় গ্রেড ভিত্তিক সত্যায়িতকরণের ক্ষমতা থাকবে।এছাড়া ক্যাডার বা নন-ক্যাডারদেও বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।পাশাপাশি অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য নতুন পে- স্কেল কার্যকর হবে উল্লেখ করে তা পর্যালোচনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, কমিটির মাধ্যমে এর পর্যালোচনা হবে। তবে এমপিওভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন স্কেলে বেতন পাবেন, পাশাপাশি এর পর্যালোচনাও চলবে।এই পে-স্কেলের বাস্তবায়ন ১ জুলাই-২০১৫ থেকে ধরা হবে জানিয়ে অর্থ-বিভাগে এখন এর খুটিনাটি বিষয়গুলো পর্যালোচনা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ঘোষিত পে- স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ গ্রেড প্রথম গ্রেডের বেতন হবে ৭৮ হাজার টাকা (ফিক্সড)। ২য় গ্রেড ৬৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হবে। এছাড়া ৩য় গ্রেড ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ৪র্থ ৫০ হাজার টাকা থেকে, ৫ম ৪৩ হাজার টাকা থেকে, ৬ষ্ঠ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ৭ম ২৯ হাজার টাকা থেকে, ৮ম ২৩ হাজার টাকা থেকে, ৯ম ২২ হাজার টাকা থেকে, ১০ম ১৬ হাজার টাকা থেকে, ১১তম ১২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে, ১২তম ১১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে, ১৩তম ১১ হাজার টাকা থেকে, ১৪তম ১০ হাজার ২০০ টাকা থেকে, ১৫ তম ৯হাজার ৭০০ টাকা থেকে, ১৬তম ৯ হাজার ৩০০ টাকা থেকে, ১৭তম ৯ হাজার টাকা থেকে, ১৮তম ৮ হাজার ৮০০ টাকা থেকে,১৯তম ৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এবং ২০তম বা সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে শুরু হবে।নতুন পে স্কেলে তিন বাহিনীর প্রধান ( সেনা, নৌ ও বিমান) সমান বেতন পাবেন (৮৬ হাজার ফিক্সড)। এছাড়া সেনাবাহিনীর লেফট্যানান্ট জেনারেল বেতন পাবেন ৮২ হাজার টাকা (ফিক্সড)।

এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের বেতন সেনাবাহিনী প্রধানের বেতনের সমান হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে সর্বশেষ পদ হলো সৈনিক, কিন্তু তারা সর্বনিম্নে গ্রেডে বেতন পাবেন না। যারা সৈনিক নন এবং সামরিক দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট নন, তারা সর্বনিম্ন গ্রেডে বেতন পাবেন। ঘোষিত স্কেলের মূল বেতন ১ জুলাই-২০১৫ থেকে এবং ভাতাগুলো ১ অক্টোবর-২০১৬ থেকে কার্যকর হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিকে নতুন কাঠামোর বাস্তবায়নে আগের ব্যয়ের সঙ্গে আরও ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। এতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বেতন বাবদ সরকারের ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এবার রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে, পরের বছর তা আরও বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তাই এই পে- স্কেল বাস্তবায়নে সরকারকে বেশি বেগ পেতে হবে না।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এখন প্রচলিত কাঠামোতেই বেতন পাবেন। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি রয়েছে, তারা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জানাবেন। প্রতিবেদন পরে কেবিনেটে এলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।এ সময় অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব গ্রেড ওয়ানে পড়বেন। তিনি ফিক্সড বেতন পাবেন। সরকারি কর্মচারীরা পদোন্নতি পেলে তার গ্রেড বদল হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।এছাড়া এ মুহূর্তে স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।অবসরের সময়সীমার বিষয়টি আগে যা ছিল এখনও তাই রয়েছে বলেও জানান সচিব।বিজ্ঞানীরাও নতুন স্কেলে বেতন পাবেন উল্লেখ করে সচিব বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান যদি বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় বা পরিচালনা করে, তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে, যার কোন সীমা নেই।