দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ : আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় টাঙ্গাইল-৪ আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। লতিফ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় তার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকেও আর কোনো সিদ্ধান্ত দিতে হচ্ছে না। টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন লতিফ। হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে বিতর্কের মধ্যে গতবছর তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পাশাপাশি দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল এ সংক্রান্ত একটি গেজেট কমিশনে পাঠিয়েছেন। গেজেটে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী গত ১ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করায় দশম জাতীয় সংসদের ১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ আসনটি শূন্য করা হয়েছে।
এদিকে এর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর তার সংসদ সদস্যপদ থাকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। পরে তার সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার ইসির উপর পড়ে। এর ফলে কমিশন গত ২৩ আগস্ট লতিফ সিদ্দিকী ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিকে শুনানিতে ডাকে। কিন্তু ওই দিন লতিফ সিদ্দিকী ইসিতে উপস্থিত হয়ে কমিশনের কাছে সময় চাইলে শুনানি স্থগিত রাখা হয়। সে হিসেবে আজ রোববার লতিফ সিদ্দিকীর শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে শুনানির কারণে আজকে ইসিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন ও কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিল না। এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, আমরা কমিশনে বৈঠকে বসেছিলাম এ বিষয়ে বিকেলে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে উনি পদত্যাগ করায় এক্ষেত্রে কমিশনের কিছুই করার নেই বলে কমিশন শুনানি না করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার লতিফ সিদ্দিকীর স্বহস্তে লিখিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে গৃহীত হয়। পদত্যাগপত্রটি বিধিসম্মত হলে সংসদে কার্যপ্রণালি বিধির ১৭৮(৩) অনুযায়ী বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন স্পিকার। উল্লেখ্য, গেল বছর ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাত দুটোর ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতোটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রকাশের পর শোরগোল ওঠে। তাকে গ্রেপ্তার এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার দাবি তোলে ইসলামী বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে তাকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার নামে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। দেশে ফেরার পর ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মামলায় নয় মাস কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের এই সাংসদকে। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান তিনি। সেই সঙ্গে গত মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্য দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদ বসলে সেখানে আবেগময় এক বক্তৃতা দিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন সাবেক মন্ত্রী লতিফ। এর দুই দিনের মাথায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আসনটি শূন্য ঘোষণা করেন।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই পদত্যাগ করবেন জানানোর পর বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ৬ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী রোববার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চার নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু লতিফের পক্ষে কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ওই বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা শূন্য ঘোষণার গেজেট নিয়ে বসেছিলাম। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অবশিষ্ট কিছু নেই- এই হবে আমাদের সিদ্ধান্ত। টাঙ্গাইল-৪ আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে উপ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে পরে নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করবে বলে জানান এই কমিশনার।